ভারতে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ
নয়াদিল্লি:
প্রতিদিনই একের পর এক মানুষের প্রাণ কাড়ছে করোনা ভাইরাস (Coronavirus)। এখনও পর্যন্ত ভারতে একদিনে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জীবন নেওয়ার রেকর্ড গড়ল COVID- 19। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্র্কের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার (Coronavirus in India) প্রকোপে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এদেশে করোনা আক্রান্ত মোট ১৮,৬০১ জন। এর মধ্যে মোট ৫৯০ জনের মৃত্যু (Coronavirus Death) হয়েছে ওই মারণ রোগের কারণে। এদিকে একদিনের মধ্যে আরও ১,৩৩৬ জন মানুষ করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। ফলে সব মিলেয়ে আতঙ্ক বাড়ছে বই কমছে না।তবে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ওই রোগের থেকে রেহাই পাওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত সপ্তাহ থেকেই এই উন্নতিটা চোখে পড়ছে। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার যেমন এতদিনের তুলনায় সর্বাধিক সুস্থতার পরিসংখ্যান মিলেছে।
তথ্য অনুসারে মঙ্গলবার শতকরা ১৭.৪৮ জন করোনা ভাইরাসের সঙ্গে জীবন-মরণ যুদ্ধ করে আপাতত সুস্থ হয়েছেন। সংখ্যার হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭০৫ জন। সোমবার এই সুস্থতার শতকরা হার ছিল ১৪.৭৫, যা রবিবারে তুলনায় খানিকটা বেশি, গত রবিবার সুস্থ হন ১৪.১৯ শতাংশ মানুষ। এদিকে শনিবার সুস্থ হয়েছিলেন ১৩.৮৫ শতাংশ, যা কিনা শুক্রবারের ১৩.০৬ শতাংশের থেকে কিছুটা বেশি। আরও পুরনো পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে যে দেশের করোনা আক্রান্ত রোগীরা কত তাড়াতাড়ি সুস্থ হচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার যেখানে ১৭.৪৮ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছেন সেখানে গত বৃহস্পতিবারই এই সুস্থতার হার ছিল মাত্র ১২.০২ শতাংশ, বুধবার ছিল ১১.৪১ শতাংশ আর গত মঙ্গলবার ছিল আরও কম, মাত্র ৯.৯৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলছে, এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে মোট ৩,২০০ জন মানুষ করোনার সঙ্গে জীবনের লড়াইয়ে জয়লাভ করেছেন।
সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি ভবন চত্বরে কর্মরত প্রায় ১০০ জনকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এক সাফাই কর্মীর দেহে করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে।
সংক্রমণ কীভাবে ছড়াচ্ছে তা বোঝা যায় আক্রান্তের হার দ্বিগুণ হতে দেখে। সুখবর, ভারতে এই গতি ধীর হয়েছে বলে সোমবার সরকার জানিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লভ আগরওয়াল গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত সাত দিনের তথ্য অনুযায়ী, লকডাউনের আগে সংক্রমণের দ্বিগুণ হওয়ার হার ছিল ৩.৪ দিন, যা এখন বেড়ে হয়েছে ৭.৫ দিন। এই কারণেই, সরকার এর আগে জানায় যে তিন সপ্তাহের দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এবং তাই এটি ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার দেশের প্রথম প্লাজমা থেরাপির সাফল্যের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ৪৯ বছর বয়সী ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন। তার ভেন্টিলেশনও বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ম্যাক্স হাসপাতালের সাকেত শাখা।
মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে যে করোনাভাইরাস রোগীদের সংখ্যা এই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি, এই রোগের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি- ধারাভি সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক হাইড্রোক্লোরোক্যুইন ব্যবহারের অনুমতি দেবে রাজ্য সরকার।
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে সোমবার ভারতে, সংক্রমণহীন অঞ্চলগুলিতে নিষেধাজ্ঞা লাঘব করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে জানিয়েছে যে দেশব্যাপী লকডাউনের নির্দেশিকা ইচ্ছামতো হ্রাস করা যাবে না।
ভারতের শীর্ষ মেডিক্যাল সংস্থা- ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ জানিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ত্রুটিযুক্ত COVID-19 টেস্টিং কিট বদলে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের অভিযোগ ছিল যে ICMR-এর দেওয়া ত্রুটিযুক্ত কিটের ফলেই ভুলভাল ফলাফল দেখা যাচ্ছে এবং পরীক্ষার গতিও বিলম্বিত হচ্ছে।
তেলেঙ্গানা প্রথম সেই রাজ্য যেটি লকডাউনের দ্বিতীয় দফার সময়সীমা ৭ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও জানিয়েছেন, এই লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে এবং খাদ্য সরবরাহের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলিকেও অনুমতি দেওয়া হবে না। “মন্ত্রিপরিষদ ৫ মে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে,” বলেন কে চন্দ্রশেখর রাও।
উত্তরপ্রদেশের পর, আরও পাঁচটি রাজ্য রাজস্থানের কোচিং হাব কোটাতে দেশব্যাপী করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে আটকা পড়া পড়ুয়াদের নিজেদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে বলেই সোমবার জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত। মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, ছত্তিশগড় এবং অসম তাদের পড়ুয়াদের কোটা থেকে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
বিশ্বব্যাপী, ২৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, প্রায় ১,৭০,০০০ মানুষের প্রাণ নিয়েছে এই ভাইরাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক COVID-19 কেস ধরা পড়েছে, সংখ্যায় যা ২,৩০,০০০। আমেরিকায় এই রোগে প্রাণ গিয়েছে ৪২,০০০ মানুষের।
সোমবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের জেনারেল অ্যাসেমব্লির ১৯৩ সদস্য একটি রেজোলিউশন গ্রহণ করেছেন যাতে করোনভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভবিষ্যতে তৈরি হওয়া ভ্যাকসিনগুলির “ন্যায়সঙ্গত, দক্ষ এবং সময়োপযোগী” সরবরাহ ও জোগানের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই রেজোলিউশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা”র কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারী বিষয়ে গাফিলতির অভিযোগে ওয়াশিংটন এবং অন্যদের সমালোচনার মুখে পড়ে হু।
Post a comment