অংশ নিয়েছিল দক্ষিণ বঙ্গের 19-20 স্কুল। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিক্ষকরা।
কলকাতা: কোনও কালেই সমাজ অপরাধমুক্ত ছিল না। অর্থ বা ক্ষমতার লোভে সেই আদিকাল থেকে সংগঠিত হয়ে আসছে অপরাধ। প্রায় সব ভাষাতেই একটা গল্প শুনতে পাওয়া যায়- তিন বন্দিকে নিয়ে চলেছে পুলিশ ভ্যান। দুই পুলিশ কর্মীকে সরকার দায়িত্ব দিয়েছে এই তিন কুখ্যাত অপরাধীকে এমন একটা জায়গায় ছেড়ে দিয়ে আসতে, যেখান থেকে ফেরার পথ নেই। পথ নেই বেঁচে থাকারও। মানে হয় কোনও পশু নয় অনাহারে হাতেই দিতে হবে প্রাণ। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে প্রথমে এক অপতাধীকে নামিয়ে দেওয়া হল। একটু বাদে নেমেন গেল আরও একজন। কিন্ত তিন নম্বর কয়েদিকে নামানো হল না। শহরের পথ ধরল গাড়ি। পুলিশ কর্মীদের একজনের বয়স কম। তিনি অন্য জনের কাছে জানতে চাইলেন তিন নম্বর কয়েদি কোথায় নামবে ? জাবাব মিলল, নামবে না, আমাদের সঙ্গেই ফিরে যাবে। বিস্ময়ের শেষ নেই তরুণের। এই গল্পের একটাই মানে অপরাধ কোনও দিন শেষ হয় না। আর তাই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইও চলছে আদি অনন্ত কাল থেকেই। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন বদলেছে। মজার কথা যে সমস্ত দিক থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে সেগুলি প্রায় আমাদের ছায়াসঙ্গী। মোবাইল থেকে ল্যাপটপ বা ডেবিট কার্ডের একটু অসতর্ক ব্যবহারই ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। আর এর হাত থেকে কেউ রেহাই পাবে না। সবাইকেই কোনও না কোনও ভাবে পড়তে হবে সমস্যায়। সেই কারণেই সাবধান থাকা ছাড়া কোনও পথ নেই।
এই সাবধান থাকার কাজটা শুরু হল বৃহস্পতিবার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে উত্তর কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অংশ নিয়েছিল দক্ষিণ বঙ্গের 19-20 স্কুল। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিক্ষকরা।
কলকাতা পুলিশের লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানার তরফ থেকে হাজির হয়েছিলেন আধিকারিকরা। কীভাবে সতর্ক থাকতে হবে তা হাতে কলমে বোঝান হল। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরও মিলল। উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু থেকে শুরু করে অনেকে।
একে একে ফেসবুক এবং হোয়াটস অ্যাপে যে সমস্ত সমস্যা হয়, সেগুলি তুলে ধরা হল। ব্যাঙ্কের কার্ড এবং তার তথ্যও সুরক্ষিত রাখার পথ বাতলে দিলেন লালবাজারের কর্তারা।
ফেসবুকে অনেকের সঙ্গেই আলাপ হয়ে যায়। তাঁদের সঙ্গে দেখাও করতে মন চায়। কিন্তু সেটা করলে হতে পারে বড় বিদপ। তাই বাড়ির লোককে না জানিয়ে এমন কিছু না করাই ভাল বল মনে করে সাইবার ক্রাইম থানা। আবার হোয়াটস অ্যাপও কম বিপদের জিনিস নয়। সেই কারণে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। প্রোফাইল পিকচার প্রাইভেট করে রাখা বা কোনও গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে খোঁজ খবর করে নেওয়া বিশেষ দরকার। কখনও কখনও খুব অল্প সময়ের জন্য মোবাইল ফেলে রেখে গেলেও বিপদ হতে পারে। এক আধিকারিকের দাবি মাত্র দশ সেকেন্ডেই আপনাকে পথে বসতে হতে পারে। মানে ফোনে থাকা যাবতীয় তথ্য দশ –বারো সেকেন্ডের মধ্যেই চলে যেতে পারে অন্যের কাছে। রাস্তায় বা স্টেশনে ফ্রি ওইফাই ব্যবহার করে কোনও গুরুত্বপূর্ণতথ্য আদান প্রদান করা মানে যে বিপদকে প্রায় বাড়ির ঠিকানা বলে দিয়ে আসা তাও উঠে এলো আলোচনায়।
ব্যাঙ্কের নাম করে আসা ফোন পেয়ে বহু মানুষ পথে বসেছেন। আগে ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর জেনে নিয়ে যাবতীয় গোলমাল হত। এখন কায়দাটা একটু বদলেছে। এখন মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। উল্টোদিক থেকে বলা হয় মোবাইলের সিম কার্ড লক হয়ে যাচ্ছে। সেটা যাতে না হয় তার জন্য ওটিপি পাঠানো হচ্ছে। সেটি নির্দিষ্ট নম্বরে না পাঠালে সিম লক হয়ে যাবে। কিন্ত এটা আসলে আপনাকে পথে বসানোর ছক। আপনি ওটিপি পাঠাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে অন্যত্র।