Read in English
This Article is From May 27, 2020

ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া আমফানে বিধ্বস্ত কলেজ স্ট্রিট, পাশে দাঁড়াচ্ছেন বইপ্রেমীরা

ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে তিন থেকে চার ফুট জলের তলায় চলে গিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট। পরের দিন দোকানদাররা লক্ষ করেন রাস্তা হয়ে উঠেছে বইয়ের নদী!

Advertisement
Kolkata Written by , Edited by

ঘূর্ণিঝড় আমফানের ধাক্কা সামলে উঠতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কলেজ স্ট্রিট।

কলকাতা:

লকডাউনের ধাক্কা ছিলই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আমফানের (Cyclone Amphan) তাণ্ডবে কলেজ স্ট্রিটের (College Street) বেহাল দশা আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। গত বুধবার রাতের ঘূর্ণিঝড়ের পরে শহরের পথে ভেসে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল বইয়ের সারি। জলে ভিজে নতুন-পুরনো নানা বই একেবারে রাতারাতি ‘রদ্দি' হয়ে উঠেছে। বইয়ের দোকানদার ও প্রকাশকদের পড়তে হয়েছে মহা দুর্বিপাকে। নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে বাঙালির প্রাণের ঠিকা‌না বইপাড়ার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে বইপাড়াকে বাঁচানোর উদ্যোগ। প্রেসিডেন্সির ইতিহাসের প্রাক্তন ছাত্র শুভজিৎ সরকার জানাচ্ছেন, ‘‘কলেজ স্ট্রিটের ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। এতে কোনও রাজনীতি নেই। আমরা সমস্ত বইপ্রেমী, সমস্ত কলেজ স্ট্রিটপ্রেমীদের কাছ থেকে অনুদান চাইছি একে বাঁচান‌োর জন্য। বই বা কলেজ স্ট্রিট ছাড়া আমরা কলকাতায় টিকতে পারব না। কলকাতার ইতিহাস ও ঐতিহ্য কলেজ স্ট্রিটকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।''
প্রেসিডেন্সিতে অর্থনীতির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অহন কর্মকার জানাচ্ছেন, ‘‘দান নয়। আমরা কলেজ স্ট্রিটের ছোট বই বিক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের একাত্মতা দেখাতে চাই। সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে সারা পৃথিবীতে থাকা প্রাক্তনীদের কাছে আবেদন করা হচ্ছে ওঁদের পাশে দাঁড়ানোর।''

ঘূর্ণিঝড়ের ছ'দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কলেজ স্ট্রিটের দুর্দশার ছবিটা দেখলে মন ভেঙে যায়। বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র, শিল্পকলা— রকমারি বিষয়ের সব বই। পড়ে রয়েছে রাস্তায়। ভিজে যাওয়া এই সব বই রাস্তায় মেলে দিয়ে শুকোতে দেওয়া হয়েছে। কফি হাউস হোক বা প্রেসিডেন্সি— রাস্তার সামনে এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। বলতে গেলে প্রায় আধ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে পথের উপরে শুয়ে রয়েছে সারি সারি বই।

ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে তিন থেকে চার ফুট জলের তলায় চলে গিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট। পরের দিন দোকানদাররা লক্ষ করেন রাস্তা হয়ে উঠেছে বইয়ের নদী!

Advertisement

কফি হাউসের ঠিক বিপরীতে ৪৫ বছরের ব্যবসা আসলাম হোসেনের। বেশ কয়েকটি পদার্থবিদ্যার বই হাতে নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘‘রদ্দি। এই বইগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ফেলে দিচ্ছি। রদ্দিওয়ালারা এসে নিয়ে যাচ্ছে। এক কেজি বইয়ে আমরা পাচ্ছি ১ বা ২ টাকা।''

আর এক বই বিক্রেতা রঞ্জন দত্ত, যিনি বই বিক্রেতাদের এক ইউনিয়নের প্রধানও, তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘৯০ শতাংশ স্টল এখনও খোলেনি। মালিকরা এসে ক্ষতির জরিপ করলে তবে পুরো ক্ষতির পরিমাণটা বোঝা যাবে।''

Advertisement

তবে ঘূর্ণিঝড় আমফানের ধাক্কা সামলে উঠতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কলেজ স্ট্রিট। সূর্যের আলোয় বই বিক্রেতারা শুকিয়ে নিচ্ছেন ভেজা বই। কেউ কেউ পেডেস্ট্রাল পাখার হাওয়াতেও শুকোচ্ছেন বইয়ের সারি। কলেজ স্ট্রিটকে আবার পুরনো চেহারাতে ফেরাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় লড়াই শুরু করেছেন তাঁরা।

Advertisement