This Article is From May 26, 2020

‘‘জ্বর নয়, গরিব মরে খিদেয়’’: লকডাউনের পরে ঘূর্ণিঝড়ে বদলে গিয়েছে শহরের রিকশা চালকের জীবন

পকেটে পড়ে রয়েছে তিনটি দশ টাকার কয়েন। ও সামান্য খুচরো পয়সা। সন্তোষ জানাচ্ছেন, ‘‘ঝড় আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।’’

‘‘জ্বর নয়, গরিব মরে খিদেয়’’: লকডাউনের পরে ঘূর্ণিঝড়ে বদলে গিয়েছে শহরের রিকশা চালকের জীবন

লকডাউন বদলে দিয়েছে এই শহরের রিকশা চালক সন্তোষ সাউদের জীবন।

কলকাতা:

জীবন কখনওই খুব সহজ ছিল না উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের সন্তোষ সাউয়ের। কিন্তু কলকাতার অলিগলিতে রিকশা নিয়ে পৌঁছে যাওয়া সন্তোষের জীবনটা একেবারে কঠিন এক প্রান্তে নিয়ে এসেছে লকডাউন ও ঘূর্ণিঝড় আমফান। দিনে একসময় ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার করা কোনও ব্যাপার ছিল না। এমনকী কোনও কোনও ভাল দিলে ৫০০ টাকাও হয়ে যেত। কিন্তু আজ ৫০ টাকাও দৈনিক রোজগার হয় না। স্ত্রী ও বারো বছরের ছেলেকে নিয়ে এক ঝুপড়িতে থাকেন সন্তোষ। আমফানের দাপটে উড়ে গিয়েছিল ঘরের চাল। চারদিন পরে প্লাস্টিক শিট ও বাঁশের সাহায্যে কোনও মতে ছাদ তৈরি করা গিয়েছে। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘গত চার দিন ধরে হারানো ছাদের পরিবর্তে প্লাস্টিক শিট ও ছাদের সাহায্যে আবার ছাদ ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আবার তুফান এলে কী হবে?''

তিন মাস আগেও এতটা কঠিন ছিল না জীবন। কামারহাটি-আগরপাড়া-বেলঘরিয়া এলাকায় দ্রুত বেগে রিকশা ছোটাতেন তিনি। কিন্তু প্রথমে লকডাউন ও পরে আমফান। সব কিছু যেন তছনছ হয়ে যেতে বসেছে।

সন্তোষ জানাচ্ছেন, ‘‘লকডাউনের পরে সব বদলে গেছে। একবার আমাকে ব্যাটন দিয়েও মেরেছিউলেন এক পুলিশকর্মী। আমার জ্বর হয় না। গরিবদের কখনও জ্বর হয় না। তারা খিদেতে মরে।'' ডান হাত দিয়ে চোখের পাশ স্পর্শ করেন সন্তোষ। সম্ভবত চোখের জল আটকাতে।

পকেটে পড়ে রয়েছে তিনটি দশ টাকার কয়েন। ও সামান্য খুচরো পয়সা। সন্তোষ জানাচ্ছেন, ‘‘ঝড় আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।'' তাঁর কাঁপতে থাকা হাতের মধ্যে ঝনঝন করে বেজে ওঠে খুচরো পয়সার অসহায়তা।
কিন্তু বিনা পরিশ্রমে কারও থেকে পয়সা নিতে রাজি নন তিনি। স্পষ্ট জানাচ্ছেন, ‘‘আমি ভিখারি নই। আপনি বলুন কোথায় নিয়ে যেতে হবে... শ্যামবাজার, বারাকপুর, সোদপুর। তারপর পয়সা দিন।'' বাড়িয়ে দেওয়া ১০০ টাকাকে সরিয়ে দিয়ে সন্তোষের কনা জবাব, ‘‘আমার লাগবে না।''

সরকারের প্রতিশ্রুতিমতো ৫ কেজি চাল ও ডালের বিন্দুমাত্রও পাননি। জানাচ্ছেন, বেলঘরিয়া-রথতলার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সৌজন্যে ১০ কেজি চাল, আলু ও সাবান পেয়েছিলেন। এখন আবার অভাব জাঁকিয়ে বসেছে। কোনও কোনও দিন ২০০ টাকা রোজগার হয়ে যায়। কেবল সেদিনই মুদিখানায় গিয়ে সামান্য কেনাকাটা করতে পারেন।

একমাত্র ছেলে পড়ে ক্লাস ফোরে। সন্তোষ জানেন না, লকডাউনের পরে স্কুলে ফেরত পাঠাতে পারবেন কিনা ছেলেকে।

কেন রিকশা না চালিয়ে স্থানীয় জুটমিলে কাজ নিচ্ছেন না? সন্তোষ জানাচ্ছেন, রিকশা চালানো ছাড়া আর কিছুই যে শেখেননি তিনি।

সন্তোষ এও জানেন না, কলকাতাতেই থাকবেন, নাকি ফিরে যাবেন? ভেবে পান না তিনি। কোনও দিশা মেলে না। ‘সিটি অফ জয়'-এই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন সন্তোষ। এখানকার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াত তাঁর রিকশা। কবে সুদিন ফিরবে আপাতত সে আশায় বুক বাঁধা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তাঁর।

.