'Dark and Lovely' বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্যের বস্তাপচা ধারণাকেই প্রশ্ন করে এই ছবি
নিউ দিল্লি: পাত্রী চাইয়ের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে ক্যামেরার সামনে কাজ করা মুখ- ফর্সা চামড়া না হলে কদর নেই এখনও। সারা বিশ্বজুড়ে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এত লড়াই সত্ত্বেও এই দেশে রমরমিয়েই চলে ফর্সা হওয়ার ক্রিমের বিজ্ঞাপন। ফর্সা হতে না পারার ‘অপরাধে’ আত্মহত্যার ঘটনাও কম না। আসলে নারীর সৌন্দর্য চিরকালই চামড়া, চুল আর মাপের বাইরে বিচার করতে শেখানো হয়নি। কিন্তু শেখার সময় যে এসেছে তা প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের এক শিল্পী। ফেসবুকে গত দুদিনে নিশ্চয়ই এই ছবিটি আপনার চোখে পড়েছে। ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির’ ধ্যানধারণাকে ভেঙে ‘ডার্ক অ্যান্ড লাভলি’ (Dark And Lovely) বিষয়টিকে নিয়ে একটি ডিজিটাল ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ইলাস্ট্রেশনে দেখা যাচ্ছে, গাঢ় রঙের ত্বকের এক মহিলা হাতে একটি মুখে মাখার ক্রিমের টিউব ধরে রয়েছেন যাতে লেখা আছে ‘ডার্ক অ্যান্ড লাভলি’। বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্যের মানদণ্ডের মুখে সপাটে এক থাপ্পড় যেন এই প্রতিবাদী ছবিটি। বাংলাদেশের শিল্পী ওয়াসেকা নাহারের (Waseka Nahar) তৈরি এই ডিজিটাল ছবিটি মূলত কানাডা নিবাসী পাকিস্তানী শিল্পী জায়নাব আনোয়ারের (Zainab Anwar) তোলা একটি ছবির থেকে অনুপ্রাণিত।
"ত্বকের রঙের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য এখনও ভীষণভাবেই চোখে পড়ে এবং এই ধরণের ফেয়ারনেস ক্রিম সেই অযৌক্তিকতার আগুনে ঘি ঢালে,"- এনডিটিভিকে বলেন 25 বছর বয়সী ওয়াসেকা। তাঁর কথায়, "আমার শিল্পের মাধ্যমে, আমার ছবির মাধ্যমে আমি বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চাই।"
ছবির প্রসঙ্গে ওয়াসেকা আরও বলেন যে, "জায়নাবের ছবিটিই বলে দিচ্ছে যে আমাদের কিছু প্রচলিত বাজে, অযৌক্তিক ধারণা রয়েছে। কালো চামড়া নিয়ে এখনও আমাদের মানসিকতা বদলায়নি। এই ছবি সে দিক থেকে ভীষণই সাহসী। এই ছবি বলে যে গাঢ় রঙের ত্বক অন্য সব চামড়ার মতোই সুন্দর।" দু’দিন আগেই ইন্সটাগ্রামে ছবিটি শেয়ার করেন জায়নাব।
জায়নাব এনডিটিভিকে বলেন, "আমি আমার নিজের শোওয়ার ঘরে নিজের ক্যামেরায় সেলফ টাইমার দিয়ে ছবিটি তুলি। আরও বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের আমি এই বার্তা দিতে চেয়েছি, সেই জন্যই ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যগত পোশাক পরেছি আমি।"
কী ভেবে এমন এক ছবি তুলেছিলেন জায়নাব? জায়নাবের কথায়, ছোট থেকেই চমড়ার রঙ কালো হওয়ায় আত্মীয় পরিজনেরা কথা শুনিয়েছে তাঁকে। অতি উৎসাহী অনেক আত্মীয় প্রচুর ফেয়ারনেস ক্রিমও এনে দিতেন তাঁকে। জায়নাব বলেন, "আমি প্রচলিত ধারণার বিপরীতে গিয়ে উলটো কথা দিয়ে একটি টিউব তৈরি করি। আমি আসলে গোটা শিল্পটাকেই প্রশ্ন করতে চাই, এত নেতিবাচক মানসিকতা তাঁরা ছড়ান কীভাবে? বর্ণবৈষম্যের মতো এত বড় সমস্যায় কীভাবে ইন্ধন জোগাতে পারছেন এঁরা?”
ফেসবুকে ব্যাপক শেয়ার হয়েছে ওয়াসেকার আঁকা এই ছবিটি। ইতিমধ্যেই 3,000 'শেয়ার', 4,000 'লাইক' এবং অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছে এই ছবিটি। একজন মন্তব্য করেছেন, "স্টিরিওটাইপস ভাঙতেই হবে এবং এভাবেই!" অন্য একজনের কথায়, "আপনার মেলানিনকে ভালোবাসুন!"
দুই নারীই এনডিটিভিকে জানিয়েছেন যে, নিজেদের এই সহযোগী শিল্প যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এতে তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই আনন্দিত।
"নতুন প্রজন্মের মানুষ সৌন্দর্যের এমন অযৌক্তিক ধ্যানধারণা নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত তাঁরা এই বিষয়ে অনেক সচেতন। আমি জানতাম এই কাজ তরুণ প্রজন্মের সমর্থন পাবে।" বলেন জায়নাব।
শিল্পী ওয়াসেকা বলেন, "আমি সত্যিই ভাষা হারিয়েছি, আমি ভীষণই আনন্দিত যে এই ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। কারণ এখন আমরা নিজেকে নিজের মতো করে গ্রহণ করা এবং নিজেকে ভালোবাসার কথা সবাইকে জানাতে পারব, কথা বলতে পারব”
Click for more
trending news