নয়াদিল্লি: চলচ্চিত্র বা সিনেমা শুনেছি জীবনের প্রতিবিম্ব, তবে আমি সিনেমার বোদ্ধা তো নয়ই, বরং আমি বরাবরই গ্রামের ছেলে হিসেবে ভিডিও কালচারে বড় হয়েছি, যেখানে গ্রামের পুজো, কারও বিয়ে অন্নপ্রাশন মানেই মাটির বাড়ির উঠানে চাটাই পেতে ভিডিও, আর সেই সিনেমার তালিকা ঠিক করা হত প্রতিবেশী কাকিমা, ঠাকুমা, জেঠিমাদের সঙ্গে আলোচনা করে। ফলে সিনেমা সম্পর্কে আমি এগুলোই বুঝতাম, নিখাদ বিনোদন, যেখানে পর্দার ওপার-এপার মিলেমিশে যেত, কোনও বিশ্লেষণের অবকাশ থাকত না, সিনেমা চলাকালীন খলনায়কের অভিনয়ে গালাগালি, নায়িকার দুঃখে দর্শকদের কান্না, নায়কের মারপিটের দৃশ্যে হাততালি ইত্যাদি। মানে খাঁটি বিনোদন বলতে যা বোঝায়।
সিনেমা সম্পর্কে আমার ধারণার একটু বদল হয় অনেক পরে, সংবাদমাধ্যমে কাজ শুরুরর পর, তখন সিনেমা সম্পর্কে একবারে ভিন্ন ধারণা এবং অন্য ঘরনা এবং অবুঝ হওয়ার পরেও মাঝেমধ্যে লেখালিখি করেছি।
ছপাক রিলিজ করা এবং পরে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে দীপিকা পাড়ুকোনের সেখানে যাওয়া এবং তার পরবর্তী যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই বিতর্ক সোশ্যাল মিডিয়া দু'ভাগ হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয়েছে, তখনই ঠিক করেছিলাম সিনেমাটা দেখার।
Dragon Bhumir Ajana Rhoshoyo: কূটনীতির পথে, ড্রাগনের দেশে
ছুটিতে বাড়ি এসে সিনেমাটা দেখলাম। সিনেমাটা যতদুর শুনেছি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি করা। ফলে সিনেমাটা নিয়ে আমার কিছু কথা বলার আছে।
দীপিকা পাড়ুকোনের অভিনয় কতটা ভাল বা খারাপ, কোথায় ভাল, কোথায় খারাপ, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করার মতো বোদ্ধা আমি নই, তার জন্য অনেক স্বনামধন্য চলচ্চিত্র সমালোচকরা রয়েছেন, তাঁরা বিচার করবেন। তবে আমার কয়েকটা জিনিস দেখে খটকা লাগল, সেটা নিয়েই আজকের লেখা।
প্রথম যে জায়গাটা দেখে খটকা লাগল, সেটা হল দীপিকা পাড়ুকোন মানে মালতীর মেকআপ, একজন অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়ে, তাকে বেশ অনেকটাই সুন্দর লাগছে, বুঝলাম না কেন সুন্দরকে তুলে ধরা হয়েছে। কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া কিশোরীকে অ্যাসিড আক্রান্ত হওয়ার পরেও কেন সুন্দর লাগলছে পর্দায় সেটা বুঝলাম না, যেখানে তার বোনকে নিয়ে পাড়ার ছেলেরা নানা রকম কথা বলছে, কেউ ভয় খাচ্ছে ইত্যাদি। শুনেছি প্রস্থেটিক মেকআপ নিয়ে এই সিনেমায় অনেক কাজ হয়েছে, তবে অস্বস্তি ধরা পড়েছে মেকআপ নিয়ে।
প্রস্থেটিক মেকআপ নিয়ে এই সিনেমায় অনেক কাজ হয়েছে
খরচ করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও সুন্দর বা দীপিকা পাড়ুকোনের লাস্যকে আড়াল করা যায়নি বলেই আমার মনে হয়েছে। অ্যাসিড ঢালার মুহুর্তে, যে সময় জল দিচ্ছিলেন পাঞ্জাবী প্রৌঢ়, সেই সময়েও, ধরা পড়েছে সুন্দরী দীপিকার লুক, এটা কেন? আমার মতামত, প্রস্থেটিকে আর একটু জোর দিলে ভাল হত।
আরও বেশ কয়েকটা কথা না বললেই নয়, দীপিকা পাড়ুকোন মানে মালতীর ওপর অ্যাসিড হামলার পর আমার মনে হয়েছে, কারও ওপর অ্যাসিড হামলার পর তার ওপর দিয়ে যে মানসিক ধকল বা টানাপোড়েন যায়, সেটা খুব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা ধরা পড়েছে, যেটা কাম্য ছিল না। আমার মনে হয় পরিচালক মেঘনা গুলজার, সেদিকে বেশি নজর না দিয়ে ব্যাপারটাকে সিনেমাটিক বা ড্রামাটিক করে তুলেছেন, যা করতে গিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে মানে ছবির বিরতির পরের অংশে জোর দেওয়া হয়েছে দীপিকার প্রেমকাহিনীতে। এটা আমার মনে হয়, না হলেও চলত।
হারিয়ে যাওয়া খেলা: স্মৃতিপটে আজও অমলিন সেই বিকেলগুলো
আবারও এটাও ঠিক বোধগম্য হল না,ছবিতে দীপিকা পাড়ুকোন রাস্তা পার হচ্ছেন, নাকি মালতী। মানে একজন সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেওয়া তরুণীর হাঁটাচলা, রাস্তাঘাট পেরোনো আর যুবতীর হাঁটাচলার পার্থক্য কিন্তু ঢাকা যায়নি ছবিতে।
ফলে উপরোক্ত ব্যাপারগুলিতে আমার বেশ খটকা লেগেছে। বাকি দীপিকা পাড়ুকোনের অভিনয় নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।