দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে গেরুয়া দলের প্রচার সভা থেকে সিএএ (CAA) বিরোধীদের উদ্দেশে তোপ দাগলেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে (Delhi Elections) বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি (Amit Shah)। অমিত শাহ বলেন, আসন্ন দিল্লি নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে ভোট দিলে "শাহিনবাগের (Shaheen Bagh) মতো হাজারো ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে"। "আপনি যখন ৮ ফেব্রুয়ারি বোতাম (ভোটদানের মেশিনে) টিপবেন, তখন সেটি সমস্ত রাগ জড়ো করে টিপুন যাতে তা হাড়ে হাড়ে টের পায় বর্তমান শাহিনবাগ", দিল্লির এক নির্বাচনী সমাবেশে এরকমই বলতে শোনা যায় শীর্ষস্থানীয় ওই বিজেপি নেতাকে। ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া বিতর্কিত আইনটির (Citizenship Amendment Act) বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির শাহিন বাগে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কয়েক শতাধিক নারী ও শিশু।
সমস্ত শরণার্থীদের CAA-এর আওতায় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে: দিলীপ ঘোষ
জানা গেছে, গত শুক্রবারও শাহিনবাগের বিক্ষোভ নিয়ে অমিত শাহ একই রকম মন্তব্য করেন। দিল্লির জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে "জিত কি গুঞ্জ" অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, " ৮ ফেব্রুয়ারি এত জোর দিয়ে বোতাম টিপুন যাতে কারেন্ট খেয়ে শাহিনবাগ ছেড়ে পালায় বিক্ষোভকারীরা।"
অমিত শাহের এই বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম টুইট বার্তায় বলেন, "যাঁরা গান্ধিজিকে ঘৃণা করেন একমাত্র তাঁরাই শাহিনবাগ থেকে মুক্তি পেতে চাইবেন। শাহিনবাগ মহাত্মা গান্ধির নীতিকেই তুলে ধরেছে। তাই শাহীনবাগের থেকে রেহাই চাওয়া অনেকটা অহিংসা এবং সত্যাগ্রহ থেকে মুক্তি চাওয়ার সমান"।
দিল্লির ওই নির্বাচনী সভায় যখন অমিত শাহ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখছিলেন সেই সময় দর্শকদের মধ্যে উপস্থিত এক ব্যক্তি হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে তাঁকে বসতে বলেন। কিন্তু তারপরেও ওই ব্যক্তি সভার মধ্যে হইচই শুরু করলে অমিত শাহের নির্দেশে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী ওই বিক্ষুব্ধকে ধরে সভার বাইরে দিয়ে আসেন। সাময়িক বিরতির পর "ভারত মাতা কি জয়" স্লোগান দিয়ে ফের বক্তব্য রাখতে শুরু করেন পোড় খাওয়া ওই বিজেপি নেতা।
‘‘সব বাগ হয়ে যাবে শাহিনবাগ'': সিএএ-বিরোধিতা প্রসঙ্গে চন্দ্রশেখর আজাদ
ওই সমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাদের লক্ষ্য করে বলেন, 'রাহুল বাবা এবং কেজরিওয়াল কেন দেশকে বিভক্ত করতে উৎসুক এমন টুকরে-টুকরে-গ্যাংকে সমর্থন জানাচ্ছেন? ওঁরা আসলে ওঁদের ভোটব্যাঙ্কের ভয়ে ওই কাজ করছেন। মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়ে যদি কোনও সমীক্ষা করা হয়, তবে কেজরিওয়াল সরকার এর শীর্ষে থাকবে"।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, ফার্সি, জৈন ও বৌদ্ধ শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, এই সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখা হবে না। তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সমালোচকদের মতে, এই আইন মুসলিমদের জন্য বৈষম্যমূলক। এবং এটি সংবিধানের বর্ণিত দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পরিপন্থী।