সকাল থেকেই দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে জমায়েত হন অন্তত হাজার খানেক পুলিশকর্মী, শহরের মূল রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। পুলিশকর্মীদের আশঙ্কা, তাঁদের ভাল থাকা বা না থাকা নিয়ে সরকারের উদ্বেগের অভাব।
.দিল্লি আদালতে শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায়, সরকার বা সরকারের কোনও শীর্ষ আধিকারিক কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি, সেই সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন পুলিশকর্মী আহত হন, তাতেই বিষয়টিতে ঘৃতাহুতির কাজ করে। দোষীরা শাস্তি পায়নি, এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাঁরা টার্গেট হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন পুলিশকর্মীরা।
১০টি দাবি তুলে ধরেছেন বিক্ষোভরত পুলিশকর্মীরা, তারমধ্যে রয়েছে পুলিশ সুরক্ষা আইন তৈরির দাবি। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং বিক্ষোভ প্রত্যাহারের জন্য পুলিশকর্মীদের আর্জি জানাতে গেলে, গেলে হেনস্থার শিকার হন দিল্লি পুলিশ প্রধান অমূল্য পট্টনায়েক।
দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন। দিল্লিতে কেন্দ্রের প্রতিনিধি উপরাজ্যপাল অনিল বায়জল, দিল্লি পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক ডাকেন তিনি। সেই বৈঠকে, তিনি বলেন, আইনজীবী ও পুলিশ “অপরাধীদের বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ পুলিশ ও আইনজীবী, পারষ্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে তাঁদের কাজ করা উচিত...এই দুই স্তম্ভের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা বাধ্যতামূলক এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে, নিরপেক্ষ বিচার সম্পন্ন হয়”।
পুলিশকর্মীদের দুঃখের কারণ, শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায়, দিল্লি হাইকোর্ট দুই আধিকারিককে বদলি এবং দুজনকে সাসপেন্ড করা নিয়ে তাঁদের হয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সোমবার একটি জরুরি বৈঠকে, বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আরও বলা হয়েছে, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কোনও জোরপূর্বক পদক্ষেপ করা যাবে না, তাঁরা একদিনের ধর্মঘট ডাকেন এবং তা প্রত্যাহার করেন।
বার কাউন্সিলকে, তাদের সদস্যদের শান্তি ফেরাতে বলে, মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট তাঁদের বুধবারের মধ্যে উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তখনই মামলার শুনানি হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু প্রাথমিকভাবে ট্যুইট করেন, একজন পুলিশকর্মী হওয়া কৃতজ্ঞতাহীন কাজ, পরে তা মুছে দেওযা হয়। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “একজন পুলিশ আধিকারিক হওয়া কৃতজ্ঞতাহীন কাজ। তবে তাঁরা কৃতজ্ঞতা পাওয়ার জন্য কাজটা করেন না। প্রতিদিন তাঁরা জীবনকে বাজি রাখেন। তাঁরা খারাপ হন যদি কাজ করেন, খারাপ হন না করলেও। একজন পুলিশকর্মী যখন কাজ করেন, তখন পরিবারটিকে বাড়িতে রেখে আসেন...”
সমর্থন করে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের তরফে ট্যুইট করা হয়, “পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। জনমানসে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে একটি ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত সবার। দেশজুড়ে, যে সমস্ত পুলিশকর্মীরা শারিরীক নিগ্রহের শিকার, তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা। যে কোনও আইনভঙ্গকারীর নিন্দা করি”।
পুলিশকর্মীদের বিক্ষোভকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। পুরো ঘটনাকে বিজেপি ও অমিত শাহের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, “ন্যায়বিচার চাইছেন দিল্লি পুলিশ কর্মীরা, ১০ ঘন্টা ধরে তাঁরা বিক্ষোভ করছেন, অমিত শাহ কোথায়, কেন তিনি এই নিয়ে সমাধান করতে পারছেন না”?
শনিবার তিস হাজারি আদালতে, সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০জন পুলিশকর্মী এবং ৮জন আইনজীবী আহত হন, ২০টি যানবাহন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভুলভাবে একটি গাড়ি পার্ক করা নিয়ে ঝামেলার সূচনা। সোমবার এক পুলিশকর্মীকে সাকেট আদালত চত্ত্বরে মারধর করেন একদল আইনজীবী।