দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালে ফয়জানকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
হাইলাইটস
- “ভারত ভাগ্য বিধাতা.....”র গান গাইতে গাইতে এই ভারতেই প্রাণ গেল এক যুবকের।
- ভিডিওতে দেখা গিয়েছে ৫ জন আহত ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন
- দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালে ফয়জানকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নয়াদিল্লি: “ভারত ভাগ্য বিধাতা.....”র গান গাইতে গাইতে এই ভারতেই প্রাণ গেল এক যুবকের। দিন কয়েক আগেই দিল্লির একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় বছর ২৩-এর এক যুবক সহ ধর্মে মুসলিম চারজন ব্যক্তিকে জোর করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো হচ্ছে। রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছেন ওই চারজন, লাঠি উঁচিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াচ্ছে পুলিশ। ওই চার আহত ব্যক্তির মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। ওই যুবকের নাম ফয়জান, তিনি উত্তর-পূর্ব দিল্লির কর্দমপুরীর বাসিন্দা। দিল্লির এক অংশে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চার দিনের ধ্বংসলীলার সময়ে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়। এই হিংসায় ইতিমধ্যেই ৪২ জন মারা গেছেন এবং শয়ে শয়ে মানুষ আহত। বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয়েছে ফয়জানেরও।
ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-র মাধ্যমে যাচাই করা উত্তর-পূর্ব দিল্লির ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে পাঁচজন ব্যক্তি আহত, তারা রাস্তায় পড়ে রয়েছেন এবং জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন। কয়েকজনকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করা হচ্ছে। রায়ট গিয়ারে থাকা একদল পুলিশকে ওই ব্যক্তিদের চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে দু'জন ওই ব্যক্তিদের মুখে লাঠি উঁচিয়ে রয়েছে। “আচ্ছি তারাহ গা,” ধমকের সুরে বলেন এক পুলিশ!
দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালে ফয়জানকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ফয়জানের পরিবারের অভিযোগ, ফয়জানকে এবং ভিডিওতে দেখতে পাওয়া অন্য ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেছে।
“তাকে এবং অন্যদের জঘন্যভাবে মারধর করা হয়। তাকে লোহার রড দিয়ে মারা হয়েছিল। ওর পা ভেঙে যায়, মারের কারণে তার পুরো শরীর কালো হয়ে যায়। প্রথমে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়েছিল। ওরা (পুলিশ) নিশ্চয় তখনই ওকে তুলে নিয়ে যায়। তবে আমি সেটা সম্পর্কে কিছুই জানি না,” NDTV-কে জানিয়েছেন ফয়জানের মা।
তিনি আরও বলেন, “আমার পরিচিত একজন ফয়জানকে চিনতে পেরে আমাকে জানিয়েছিল, আমি হাসপাতালে যাই, সেখানে ওকে না পেয়ে আমি জ্যোতি কলোনির থানায় যাই। ও থানায় ছিল, আমি তাদের (পুলিশ) ছবি দেখালাম, পুলিশ নিশ্চিত করল যে আমার ছেলে ওখানেই আছে। আমি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম এবং ওকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধও করেছিলাম। পুলিশ ফয়জানকে আমার সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। আমি রাত ১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।"
ফয়জানের মা জানান, পরদিন সকালে তিনি আরও দু'জনকে নিয়ে থানায় ফিরে আসলে তাদের আটকের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। "তিনি যখন মারা যাচ্ছিলেন তখন তারা রাত ১১ টার দিকে আমাকে ফোন করেছিল," তিনি বলেছিলেন। "তিনি এই প্রতিবাদে অংশ নেননি," অন্য এক আত্মীয় জানিয়েছেন। পুলিশ ফয়জানকে মুক্তি দেওয়ার পরে পরিবার তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়।
“যখন তিনি আমার কাছে আসেন, তখন তার মা বলেন যে পুলিশ তাকে মারধর করেছে এবং পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল এবং দুদিন পরে ছেড়ে দেয়,” কর্দমপুরীর ডাক্তারখানায় বসে NDTV-কে বলেন ডাঃ খালিক আহমেদ 'শেরওয়ানি'।
“ওর রক্তচাপ এবং পালস রেট কম ছিল। ওকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছিল। মাথায় গভীর আঘাত এবং অভ্যন্তরীণ আঘাতও ছিল। পিঠে আঘাতের ফলে নীল দাগ হয়েছিল,” বলেন চিকিৎসক।
পুলিশ জানিয়েছে যে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় ৫ শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ, বহু জায়গায়, যেখানে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনকে সমর্থনকারী এবং বিরোধীদের সংঘর্ষ চলেছে, সেখানে পুলিশের ন্যূনতম উপস্থিতিও নেই। চারদিনে দিল্লি পুলিশ প্রায় ১৩,২০০ ফোন পেয়েছিল সাহায্যের জন্য। তবে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলির থানার কল রেকর্ড বলছে এই ফোনে কতখানি সাড়া দিয়েছিল পুলিশ তা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে।