বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ গৌতম গম্ভীর। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সংঘর্ষ (Delhi violence) ছড়িয়ে পড়ার আগে যে ধরণের 'উস্কানিমূলক' মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র (Kapil Mishra) তার তীব্র নিন্দা করে ওই বিজেপি সাংসদ (Gautam Gambhir) বলেন, "এই ধরণের মন্তব্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই ধরণের মন্তব্য যেই করুন না কেন, তা তিনি বিজেপি, কংগ্রেস বা আপ - যে দলেরই হয়ে থাকুন, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কপিল মিশ্রের মন্তব্য কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়, এটার সঙ্গে গোটা দিল্লি জড়িয়ে আছে"। দলীয় সহকর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেন ক্রিকেট থেকে রাজনীতির দুনিয়ায় আসা গম্ভীর। দিল্লির সিএএ বিক্ষোভ থেকে ছড়ানোর হিংসার জেরে আহত পুলিশ কর্মীদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে শাহিনবাগ আন্দোলনের বিষয়টির তুলনা করে গৌতম গম্ভীর আরও বলেন, "শাহিনবাগে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই চলছিল। কিন্তু এখন ট্রাম্প এখানে এসেছেন আর হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এটা ঠিক নয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে পাথর ছোঁড়ার মতো ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। আর তাছাড়া কীভাবে আপনি একজন পুলিশকর্মীর সামনে বন্দুক হাতে দাঁড়াতে পারেন?"
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে কীভাবে ছড়াল হিংসা, জেনে নিন ভিতরের গল্প
এই সেই কপিল মিশ্র যিনি "বিশ্বাসঘাতকদের দেখলেই গুলি চালান". বিজেপির বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার চালানোর সময় সিএএ-বিক্ষোভকারীদের প্রসঙ্গে এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এরপর গত রবিবার ফের সিএএ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ওই বিজেপি নেতা দাবি করেন, সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদীদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা অবরোধমুক্ত করতে হবে দিল্লি পুলিশকে।
হিন্দিতে একটি উস্কানিমূলক টুইট করেন তিনি, লেখেন, "৩ দিন সময় দিচ্ছি দিল্লি পুলিশকে। তার মধ্যে জাফরাবাদ, চাঁদবাগের বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে তুলে দিতে হবে। আর তা না হলে এরপর কিন্তু আমাদের সঙ্গে আর কোনও কথা বলতে বা যুক্তি দেখাতে আসবেন না। আমরা তাতে কর্ণপাত করব না"। নিজের টুইটের সঙ্গে একটি ভিডিও পোস্ট করে মিশ্র লেখেন, "ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে থাকা পর্যন্ত আমরা শান্তি বজায় রাখছি। কিন্তু তারপর রাস্তা পরিষ্কার না হলে আমরা পুলিশের বারণও শুনব না। রাস্তায় নামতে বাধ্য হব"।
এরপরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ জাফরাবাদ এলাকায় সিএএ বিরোধী এবং সিএএ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দু'পক্ষের থেকেই একে অপরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় পাথর ছোঁড়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয় পুলিশকে।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সিএএ সংঘর্ষে ৭ জনের মৃত্যু, ফের বৈঠকে অমিত শাহ: ১০ তথ্য
ক্রমশই চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির রূপ পায় সিএএ বিরোধী এবং সিএএ সমর্থনকারীদের মধ্যে বাঁধা সংঘর্ষ। পাথর ছোঁড়ার পাশাপাশি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং দোকানে দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকা। সোমবারের ওই ভয়ঙ্কর হিংসার ঘটনায় নিহত হন ১ পুলিশকর্মী সহ মোট ৭ জন এবং আহত হন বহু মানুষ। মঙ্গলবারও উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে উত্তেজনা বজায় রয়েছে, চলছে অবাধে লুটপাট।
এদিকে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্লা গৌতম গম্ভীরের বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, "গৌতম গম্ভীরের বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্যে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন। তিনি সত্যিকারের স্পোর্টিং স্পিরিট নিয়ে কথা বলেছেন। আমাদের গৌতমের মতো নেতাদেরই দরকার।"