রবিবার পাথর ছোঁড়া এবং সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে উত্তর পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় (ফাইল)
নয়াদিল্লি:
মঙ্গলবারও দিনভর উত্তপ্ত রইল উত্তরপূর্ব দিল্লি, সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত্যু হল ১৩ জনের, আহতের সংখ্যা এক শিশু সহ ১৫০ জন, দিনভর রাজধানী সাক্ষী রইল লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ এবং গাড়ি ভাঙচুরে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছে, ঠিক তখনই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয়ে রইল উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকা। বিভিন্ন বিল্ডিং থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গিয়েছে, এবং নাগরিকত্ব আইনের পক্ষএ ও বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের তিনদিনে রাস্তায় পড়ে লাঠি, ভাঙা কাঁচের টুকরো। দেশের রাজধানীর এই এলাকা পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে, এদিকে, বুধবারই ছিল সিবিএসই বোর্ড পরীক্ষা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে সিবিএসই বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এই সময়ে, দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে, এদিন সন্ধ্যায় তাদের অবশ্য মাঠে নামতে দেখা গিয়েছে। ছবিতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে দেখা গিয়েছে, এবং চাঁদবাগ ও ভজনপুরা এলাকায় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের ছবিও ধরা পড়েছে।
এখানে রইল ১০'টি তথ্য:
সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানায় যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, মঙ্গলবারও সেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এমনকী, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা নামানোর প্রস্তাবও খারিজ করা হয়েছে। মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে, অল্প সংখ্যক পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়ছে বিক্ষোভকারীরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্যের বিপরীত সুর শোনা গিয়েছে দিল্লি পুলিশ আধিকারিকের গলায়, তিনি “অপর্যাপ্ত বাহিনী”র কথা বলেন, সোমবার তারপরেই পরিস্থিতি ব্যাপক আকার নেয়, বিষয়টি দিল্লি পুলিশ আধিকারিক অমূল্য পট্টনায়েকের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জানানো হয়েছে বলে ওই আধিকারিক জানান। যদিও, দিল্লি পুলিশ কমিশনার রিপোর্ট খারিজ করার কয়েকঘন্টা পরেই, মন্ত্রকের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন তাঁরা। দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ৬,৭০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, রবিবার মোতায়েন করা হয়েছিল ২,০০০ পুলিশ কর্মী।
রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধির সমাধিতে প্রার্থনা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মানুষকে হিংসা বন্ধ করার আর্জি জানান তিনি, এবং মন্দির ও মসজিদগুলিকেও শান্তির আহ্বানের জন্য বার্তা দেন। উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া, এবং অন্যান্য আপ নেতারা বলেন, দেশের রাজধানীতে “দৈত্য” ঢুকে পড়েছে।
এদিন সন্ধ্যায়, জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকা খালি করে দেয় পুলিশ, রবিবার রাতে সেখানে ধরনা কর্মসূচী শুরু করেন মহিলারা। সেই সময় পুলিশ মৌজপুরের দিকে ছিল, সেখানে রবিবার পাথর ছোঁড়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগেও একাধিকবার সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, রবিবার তাঁর নেতৃত্বে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সভা হয়। সেই সভায়, পুলিশকে চূ়ান্ত সময়সীমা দেন তিনি, এবং “রাস্তা পরিষ্কার করতে হবে, নাহলে আপনাদের কথা শুনব না” বলে হুমকি দেন।
১৪৪ ধারা জারি করে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে উত্তর পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। সোমবার রাত পর্যন্ত সেই নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল, তবে পরে কমানো হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায়, কারফিউ জারির রিপোর্ট খারিজ করে, শান্তির আবেদন জানায় দিল্লি পুলিশ। ট্যুইটারে পুলিশ জানিয়েছে, “স্বাভাবিক পরিস্থিতি.... আনার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে”।
পড়ুয়াদের ভীতির কথা মাথায় রেখে, উত্তর পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় বুধবারের পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দশম শ্রেণীর দুটি পেপার এবং মিডিয়ার তিনটি ও দ্বাদশের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন পেপার। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার।
মৃতদের তথ্য প্রকাশ করা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। চারজনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে দুজন, শাহিদ (২৬) নামে একজন অটো চালক, এবং মহম্মদ ফুরকার (৩২) একজন হস্তশিল্প ব্যবসায়ী। অন্য দুজনের মধ্যে একজন মার্কেটিং অফিসার (২৬) রাহুল সোলাঙ্কি এবং একজন পুলিশকর্মী (রতন লাল ৪২)। দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে, নাগরিকদের পরিচয় প্রমাণ করতে বলছে দুষ্কৃতীরা।
অমূল্য পট্টনায়েকের জায়গায় আনা হয়েছে আইপিএস আধিকারিক এসএন শ্রীনিবাসনকে, তাঁকে দিল্লিতে অশান্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে সিআরপিএফ কে সাহায্য করার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহর করে নিয়ে স্পেশাল কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা, দিল্লি) নিযুক্ত করা হয়।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, হিংসার পরিস্থিতি সংগঠতি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় করা হয়েছে। হিংসার ঘটনা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয় এবং তিনি বলেন, যেহেতু “ভারতের ওপর নির্ভরশীল কীভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে”, ফলে তিনি এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা করেননি। যদিও, তিনি বলেন, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে আমেরিকা।
(PTI এর তথ্য সংযোজিত হয়েছে)
Post a comment