পুলওয়ামার জঙ্গি হানাকে 'দুর্ঘটনা' বলে বিপাকে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী।
রোহতাক: মঙ্গলবারই পুলওয়ামার জঙ্গি হানার ঘটনা নিয়ে টুইট করতে গিয়ে সেটিকে 'দুর্ঘটনা' বলায় প্রবল বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছিল বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহকে। পুলওয়ামা জঙ্গি হানা নিয়ে সেই একই শব্দ ব্যবহার করে বিপাকে পড়লেন উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা কেশব প্রসাদ মৌর্য। প্রসঙ্গত, পুলওয়ামার জঙ্গি হামলাকে 'দুর্ঘটনা' বলায় দিগ্বিজয় সিংহকে রীতিমত তুলোধনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা। কেশবপ্রসাদ মৌর্যের বক্তব্যটি ভিডিও করা হয় গত ২১ ফেব্রুয়ারি। সেখানে তিনি বলছেন, "ওখানে নিরাপত্তার কোনও গাফিলতি ছিল না এবং ওটা আদতে একটি 'বড় দুর্ঘটনা', যা প্রাণ কেড়ে নেয় আমাদের সিআরপিএফ জওয়ানদের। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের দেশের সেনাবাহিনীকে নিজেদের পরিকল্পনামতোই এগোনোর নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার যা যা করার, করবে সেনাই। প্রধানমন্ত্রীকে আর বেশি কিছু বলতে হবে না"। হিন্দিতে বলা তাঁর এই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পরেই প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়।
সাহস থাকলে আমার নামে মামলা করুন, মোদীর উদ্দেশ্যে তোপ দিগ্বিজয় সিং
মঙ্গলবার কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা দিগ্বিজয় সিংহের একটি টুইটকে কেন্দ্র করে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার ঘটনাটিকে 'দুর্ঘটনা' বলে টুইট করেন তিনি। এছাড়া, এই প্রসঙ্গটিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ু সেনার এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে গোটা বিশ্বের মিডিয়া এত এত প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যে, তার ফলে, দেশের সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ এই টুইটটি করেন হিন্দিতে। তিনি হিন্দিতে করা ওই টুইটটিতে লেখেন, পুলওয়ামায় 'দুর্ঘটনা' ও ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইকের পর যেভাবে গোটা বিশ্বের মিডিয়া 'সন্দেহপ্রকাশ' করছে, তার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের 'বিশ্বাসযোগ্যতা' নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
মশা মারার পরও গুনতে হবে নাকি! জঙ্গি হামলা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করে মন্তব্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
তাঁর এই টুইটটির পরপরই তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করে টুইট করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ। তিনি বলেন, "একটি জঙ্গি হানাকে 'দুর্ঘটনা' বলে দেওয়াটা আমদের দেশের রাজনীতির লক্ষ্য হতে পারে না। আপনি কি রাজীব গান্ধী হত্যার ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলবেন, দিগ্বিজয়জি? এই ধরনের অবিবেচকের মত মন্তব্য করে আমাদের দেশ ও দেশের সেনাবাহিনীকে দয়া করে ছোট করবেন না"।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিগ্বিজয় সিংহের টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বলেন, "যে দল আমাদের দেশকে দশকের পর দশক ধরে শাসন করেছে, তারাই এখন দেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আজ মধ্যপ্রদেশের এক নেতা বলেছেন, পুলওয়ামার জঙ্গি হানা আসলে নাকি একটি 'দুর্ঘটনা', এটাই তো ওদের মানসিকতা"।
বুধবার সকালে কেশব প্রসাদ মৌর্যের ভিডিও রি-টুইট করেন স্বয়ং দিগ্বিজয় সিংহ। তারপর তিনি প্রশ্ন করেন, "মোদীজি ও তাঁর মন্ত্রীরা কি মৌর্যজি-র বক্তব্য নিয়ে কিছু বলবেন?"
প্রসঙ্গত, এয়ার স্ট্রাইকের বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যেই চেয়েছেন রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অখিলেশ যাদবের মত নেতারা। এয়ার স্ট্রাইকে ঠিক কী হয়েছিল, তা জানার 'অধিকার' আছে দেশের মানুষের। বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই একই কথার পুনরাবৃত্তি করে শিবসেনাও। বিজেপির এই শরিক সাফ জানায়, এয়ার স্ট্রাইকের ব্যাপারে সব তথ্য জানার অধিকার রয়েছে দেশের মানুষের।
অন্যদিকে, যাঁর টুইট নিয়ে বিতর্ক, সেই দিগ্বিজয় সিংহ ফের একটি টুইট করেন হিন্দিতে। সেখানে তিনি লেখেন, "পুলওয়ামায় তো জঙ্গি হানা হয়েছিল। তা নিয়ে কি কোনও সন্দেহ আছে নাকি? কিন্তু, তারপরেও এই কথাটি বলব যে, মোদীজির হয়ে ট্রোল করে যারা, তারা কিন্তু আসল প্রশ্নটা এড়িয়েই যাচ্ছে"।
স্ট্রাইকের সময় এফ ১৬ বিমান ব্যবহার করেছিল পাকিস্তান, আমেরিকাকে জানালেন অজিত দোভাল
এয়ার স্ট্রাইকে কত জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে ঘটনার সাত দিন বাদেও সরকার থেকে কোনও রিপোর্ট পেশ করা হয়নি। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, "মোট ২৫০ জন জঙ্গি মারা গিয়েছে এই এয়ার স্ট্রাইকে"।
অন্যদিকে, বায়ুসেনা প্রধান বি এস ধানোয়া জানান, কত জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, তা আমরা গুনে দেখিনি। কতজন মানুষ ওই সময় সেখানে ছিল, তার ওপর নির্ভর করবে এই সংখ্যাটা। মৃতের সংখ্যা গোনার পরিস্থিতিতেই নেই বায়ুসেনা।