আজ রথযাত্রা (Rath Yatra)। শ্রীরামপুরের মাহেশ (Mahesh) থেকে কলকাতার ইস্কন (Iscon) আজ জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে রথে বসিয়ে বের করবেন এই পু্ণ্য তিথিতে। কলকাতার গলি থেকে রাজপথ, শহরতলি এমনকি গ্রামেও আজ ছোট-বড় সবাই মাতবেন আজকের এই উৎসবে। ছোট-ছেলেমেয়েরা বের করবে খেলনা রথ। ফুল, ধুপ, দিয়ে সাজিয়ে। তাতে থাকে তিন দেব-দেবীর মূর্তি। প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় মিষ্টি। পথচলতি বয়স্ক লোকেরাও সেই রথের রশি একবার স্পর্শ করেন। কেন রথ টানতে না পারলেও রশি স্পর্শ করার জন্য ব্যাকুল সাধারণ মানুষ? আসুন জেনে নিই জগন্নাথের রথের রশি স্পর্শের মহিমা (Myth)।
পুরাণ বলছে, রথের রশির নাম বাসুকি। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জগন্নাথদেবের রথের রশি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট সহ্য করতে হয় না।
এক সময় পুরির রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রশি ছুঁয়ে সেই রথের চাকার তলায় আত্মঘাতী হতেন কোনও কোনও ভক্ত।
কেন এই অদ্ভুত মৃত্যুবরণ? মানুষের বিশ্বাস শ্রীপুরুষোত্তমের চাকার তলায় প্রাণ বিসর্জন দিতে পারলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বর্গে যাওয়া যায়।
কথিত আছে, শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় শিষ্য সনাতন গোস্বামী এক মারাত্মক অসুস্থতার কারণে রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেবের রথের চলন্ত চাকার নীচে প্রাণ বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন। তখন মহাপ্রভুই তাঁকে বলেন, সনাতন, এরকম দেহ ত্যাগে যদি কৃষ্ণকে পাওয়া যেত তাহলে এক মূহুর্তের মধ্যে আমিও আমার লক্ষ জন্ম তাঁর শ্রীচরণে সমর্পন করতাম। কিন্তু দেহত্যাগে কৃষ্ণকে পাওয়া যায় না। একমাত্র ভক্তি ছাড়া, ভজনা ছাড়া তাঁকে পাওয়ার আর অন্য উপায় নেই।
এদিকে, ইন্দ্রনীলময় পুরাণ বলছে, 'জগন্নাথের রথের রশি সামান্য স্পর্শ করলেই পুনর্জন্ম হয় না।' রথযাত্রা নিয়ে কপিল সংহিতায় আছে-- 'গুন্ডিচাখ্যং মহাযাত্রা যে পশ্যন্তি মুদনিতাঃ সর্বপাপ বিনির্মুক্তা তে যান্তি ভুবন মম।' স্বয়ং জগন্নাথদেব বলছেন, গুন্ডিচা মহাযাত্রায় যে ব্যক্তি আমাকে দর্শন করবে সে কালক্রমে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমার মধ্যে আশ্রয় পাবে।
রথের রশি ছুঁয়ে শুধু রথ টানা নয়, বেশির ভাগ মানুষ রথের রশি যতটুকু পারে ছিঁড়েও নেয়। টুকরো টুকরো রথের রশির সুতো মাদুলি করে ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতে ও গলায় পরিয়ে দেয়। বড়রাও পরেন। মানুষের বিশ্বাস এই মাদুলি সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবে। অসুখ-বিসুখ তাড়াতাড়ি সারবে এতে। কমবে রাতে দুঃস্বপ্ন। অনেক সময়েই নাকি দেখা গেছে, রশির অংশ ছুঁইয়ে বালিশের নীচে রেখে ঘুমোলে দুঃস্বপ্ন আসে না। স্কন্দপুরাণ, বামদেব সংহিতার প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে, জগন্নাথদেবের রথের রশি ধরে টানতে পারলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়। এই পৌরাণিক কাহিনির কতটা সত্যি? কোনোদিনই যাচাই করেননি কেউ। তবে যুগে যুগে চলে আসা এই মিথ আজও বাঙালি বিশ্বাস করে অন্তর থেকে।