তিতিরের এই দুই বেণিই পাড়ি দিয়েছে মুম্বাই
কলকাতা: হাঁটুর নীচে দুলছে খুকুর গোছাভরা চুল! তা গোছাভরা চুল নিয়ে খুকুরা যে কী করবে সেসব অবশ্য ছড়ায় বলা নেই। ছড়ায় বলা না থাকুক, জীবন যে গল্প লেখে সেখানে বলা আছে। যদিও, চুল ও বাহ্য চেহারার সৌন্দর্য নিয়ে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলকেই এক মোহ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। চুলের গঠন আর চামড়ার রঙ নিয়ে মেতে থাকতে থাকতে খুকুরা একসময় ভুলেই যায় সুন্দরের বাস আসলে মনে, হাড়ে মাংসে তো নয়। কেউ কেউ ভোলে না। ভোলে না বলেই রূপকথার র্যাপুনজেল বাস্তবে নাম বদলে হয়ে ওঠে তিতির। গোছাভরা চুল কেটে ফেলা ইয়া মোটা দুই বেণি হাতে ঝুলিয়েও প্রশান্তির হাসি হাসতে পারে সে।
শিকারীদের হাতে মৃত মাকে জাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা গণ্ডার শাবকের! দেখুন মর্মান্তিক ভিডিও
রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার বাসিন্দা কৌশিক আর ঋতুপর্ণার মেয়ে তিতির, স্কুলের খাতায় অবশ্য নাম ঋষিকা চক্রবর্তী। বাবার সঙ্গে গল্প করতেই একদিন জানতে পারে ক্যান্সার রোগের নাম, জানতে পারে রেডিয়েশন আর কেমোথেরাপি নিতে নিতে নেতিয়ে পড়া মানুষগুলোর কথা, চামড়া থেকে একে একে উঠে যাওয়া চুলেদের কথা। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তিতিরের অভিধানে অবশ্য ক্যান্সার, রেডিয়েশনের মতো ভারী শব্দের আনাগোনা খুব সাম্প্রতিক। তবে বাবা কৌশিক চক্রবর্তীর হাত ধরে পাড়ায় রক্তদান শিবিরে যাতায়াত রয়েছে তাঁর। কৌশিক বলেন, “ওর সঙ্গে একদিন গল্প করতে করতেই বলি, জানিস ক্যান্সার হলে মানুষের চুল পড়ে যায়, তখন সবাই ন্যাড়া হয়ে যায়। ক্যান্সার আক্রান্ত বাচ্চাদের ছবিও দেখাই ওকে। তুই যদি তোর চুল বড় করিস, সেটা এই বাচ্চাদের দেওয়া যাবে।” কৌশিক আরও জানান, “ও কী বুঝল জানি না, তবে একেবারে রাজি হয়ে বলে ফেলল, ‘বাবা আমি চুল বাড়াব, ওদের দেব'।”
সর্বনাশ! শেষে নিজের বাচ্চাকে ধূমপান করতে শেখাচ্ছে মা....জানুন আসল সত্যি!
গতকালই যত্নে বাড়ানো চুলের বেণি কাটা পড়েছে। বৃহস্পতিবার তা ঠিকঠাক প্যাকেজ করে চলেও গিয়েছে মুম্বাইয়ের নির্দিষ্ট ঠিকানায়। তিতিরের চুলে ঢেকে যাবে আরও অনেক র্যাপুনজেলদের মাথা, ঢেকে যাবে আরও অনেক কর্কট আক্রান্ত শিথিল চামড়া। অনেক ভাবনাচিন্তা হীন কাজকর্মকে শিশুসুলভ বলে সহজেই দাগিয়ে দেওয়া সমাজের ধর্ম। তবে, দ্বিতীয় শ্রেণির এই শিশুসুলভ সংবেদনশীলতা বয়সে প্রৌঢ় অভিজ্ঞতায় প্রাজ্ঞ অনেকের চেতনাকেও আরেকবার নাড়া দেবে হয়ত। শুধু যত্নে বাড়ানো চুল হাসতে হাসতে মুড়িয়ে ফেলে অন্যের মুখে হাসি ফোটানোই প্রথম নয়। তিতিরের সেই ‘শিশুসুলভ' মন ষাঁড়ের পিঠের ঘা দেখেও কাঁদে, পাড়ার কুকুরের কষ্টেও পরম মায়ায় ছুটে ছুটে মিশে যায় ওদের সহজ যাপনের সঙ্গে। জীবনের সামান্য ক'টা বছর পার করেও এমন সুন্দর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও বিচক্ষণতা একদিন নতুন রূপকথা গড়বে হয়তো। সেই পৃথিবীতে কেশবতী র্যাপুনজেলরা চুলের সৌন্দর্যে নয়, মনের আশিয়ানায় ঢেকে দেবে পৃথিবী। সকলের জন্য ভাবতে গিয়ে একদিন আরও বড় মনের হয়ে যাবেই এই ইট-কাঠের মানব অরণ্য।