This Article is From May 08, 2019

৭৯ বছর বিদ্যুৎ ছাড়া বেঁচে আছেন পুণের অধ্যাপিকা, বন্ধু কেবল গাছ আর পশু পাখিরা

হেমা সানে সাবিত্রীবাঈ ফুলে পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বোটানিতে পিএইচডি করেন এবং তিনি বহু বছর ধরেই পুণের গারওয়ারে কলেজে অধ্যাপনা করেন।

৭৯ বছর বিদ্যুৎ ছাড়া বেঁচে আছেন পুণের অধ্যাপিকা, বন্ধু কেবল গাছ আর পশু পাখিরা

বিভিন্ন ধরনের গাছ এবং পাখি বেষ্টিত হেমার এই বাসায় সকাল শুরু হয় পাখিদের আওয়াজে, রাত্রি নামে লম্ফের আলোতে।

পুণে:

গ্রীষ্মকাল তুঙ্গে। মাথার উপর শনশনিয়ে পাখা চললেও দরদরিয়ে ঘামছেন আপনি। পাখার আরাম যথেষ্ট নয় বলে বসিয়েছেন কুলার। বালতি বালতি জলে ঠাণ্ডা হচ্ছে ঘর, কুলারের আরামও যথেষ্ট নয় যখন বসিয়ে ফেলছেন দামী এয়ার কন্ডিশনার! শীতে জবুথবু হলেই হিটার.... বিদ্যুতের আশীর্বাদে আরাম আসছে শরীর জুড়ে। কিন্তু এরই মাঝে এমন মানুষও রয়েছেন যিনি প্রায় সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন বিদ্যুৎ ছাড়াই। কোনও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইলেকট্রিসিটি হীনতার গল্প নয় এটা। স্বেচ্ছায় বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন কাটিয়েছেন এই দেশেরই এক অধ্যাপক।

বছর ৭৯। প্রাক্তন অধ্যাপক হেমা সানে (Dr Hema Sane), পুণের বুধওয়ার পেথে বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই বাস করছেন। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার পিছনে তাঁর একমাত্র কারণ প্রকৃতি এবং পরিবেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। হেমা বলেন, “খাদ্য, আশ্রয় এবং পোশাক আমাদের মৌলিক চাহিদা। এক সময়ে তো বিদ্যুৎ ছিল না, অনেক পরে মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। আমি বিদ্যুৎ ছাড়াই দিব্যি রইতে পারি।” ডাঃ হেমা সানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বা তাঁর সাহচর্য সবই হল তাঁর কুকুর, দুই বিড়াল, এক নেউল এবং অনেক অনেক পাখি। 

দাড়ি কাটা মেয়েদের কাজ নয়! দেশের দুই সেলুন কন্যার হাতে দাড়ি কেটে গর্বিত খোদ শচিন

হেমা বলেন, “এটা ওদেরই সম্পত্তি, আমার নয়। আমি ওদের দেখাশোনা করার জন্য এখানেই আছি। মানুষ আমাকে বোকা বলে, আমি উন্মাদ হতেই পারি কিন্তু এটা আমার কাছে কোনও ব্যাপার নয় কারণ এটাই আমার জীবনের ‘অদ্ভুত' পথ। আমি যেমন পছন্দ করি তেমনই জীবন যাপন করতে পারি।”

হেমা সানে সাবিত্রীবাঈ ফুলে পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে (Savitribai Phule Pune University) বোটানিতে পিএইচডি করেন এবং তিনি বহু বছর ধরেই পুণের গারওয়ারে কলেজে (Garware College Pune) অধ্যাপনা করেন। বুধওয়ার পেটের একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে বসবাস করেন হেমা। বিভিন্ন ধরনের গাছ এবং পাখি বেষ্টিত তাঁর এই বাসায় সকাল শুরু হয় পাখিদের আওয়াজে, রাত্রি নামে লম্ফের আলোতে।

উদ্ভিদবিদ্যা ও পরিবেশ বিষয়ে ডাঃ হেমা সানে অনেক বইও লিখেছেন। এমনকি আজও, যখনই তিনি তার বাড়িতে একা থাকেন তখনই তিনি নতুন বই লেখেন। পরিবেশ সম্পর্কে তাঁর গবেষণা এমনই যে কোনও পাখি বা বৃক্ষ তার কাছে অজানা নয়।

দিল্লিতেই আছে অন্য হিমালয়? গাজিপুরের এই অংশে কীসের পাহাড় জন্মেছে, দেখুন

ডাঃ হেমা সানে আরও বলেন, “আমি আমার সারা জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজনই অনুভব করি নি। লোকেরা প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আপনি কীভাবে বিদ্যুৎ ছাড়াই বাঁচেন এবং আমি ওদের পালটা জিজ্ঞেস করি বিদ্যুৎ নিয়ে আপনি কীভাবে থাকেন?”

তাঁর কথায়, “এই পাখিরাই আমার বন্ধু এবং যখনই আমি বাড়ির কাজ করি তখনই ওরা আসে। মানুষজন প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞেস করে, ঘরটা বেঁচে দিচ্ছেন না কেন, অনেক তো টাকা পাবেন! আমি ওদের সবসময় বলি, বেঁচে দিলে কে এই গাছেদের পাখিদের যত্ন নেবে? আমি বাইরে যেতে চাই না তো। আমি তো ওদেরই সাথে থাকতে চাই!”

আর যারা তাঁকে পাগল বলে, তাঁদের কী বলেন হেমা? প্রকৃতির এই মানুষ বলেন, “আমি কাউকে কোন বার্তা বা জ্ঞান দিই না, বরং আমি বুদ্ধের বিখ্যাত কথাটাই উচ্চারণ করি, বুদ্ধ বলেছেন, নিজের জীবনের পথ নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে।"

.