কলকাতা: আর মাত্র আড়াই মাস। তারপরেই উমা আসবেন (Durga Puja 2019) মাটির পৃথিবীতে। বাবার বাড়িতে। সপরিবারে। তারই আগমনী সুর যেন এখনই ভাসছে সোনা রোদের ঝিলিকে, নীল আকাশে, পেঁজা তুলো মেঘে। প্রকৃতির মতোই কুমোরপাড়াতেও (Kumartuli) কি শুরু হয়ে গিয়েছে আগমনীর আবাহন? কুমোরটুলি ঘুরে দেখে এলেন উপালি মুখোপাধ্যায়
ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই কাঠামোয় পড়েছে মাটির প্রলেপ। দুর্গা মূর্তি গড়ার জন্য উত্তর কলকাতার এই বিখ্যাত অঞ্চলে পা রাখলেই দেখা মিলবে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে খড়ের প্রতিমা (Maa Durga)। কিছু কাঠামোয় বাঁধা হয়েছে খড়। যাঁরা বড় বারোয়ারি বা রাজবাড়ির পুজোর প্রতিমা বানাচ্ছেন তাঁদের প্রতিমায় ইতিমধ্যেই মাটির পরত পড়েছে একপ্রস্থ।
এবার দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ অনেকটাই কম। আপনি-আমি রোদের তাপে, গরমের দাপটে কাবু হলেও হাসিমুখ কুমোরপাড়ায়। কারণ, যাঁরা ইতিমধ্যেই খড়ের প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দেওয়া শুরু করেছেন, তাঁরা এই রোদে শুকিয়ে নিতে পারছেন প্রথম প্রলেপের মাটি। আর মাটি যত দ্রুত শুকোবে ততই দ্রুত হবে প্রতিমা বানানোর কাজ। তাই পথের পাশেই আপাতত মূর্তিদের ঠাঁই। হাত চালিয়ে একের পর এক মূর্তি গড়ার পাশাপাশি মৃৎশিল্পীরা রোদে মূর্তি শুকনোর কাজটাও সেরে নিচ্ছেন এই ফাঁকে।
ত্রিধারা সম্মিলনী-র খুঁটিপুজো রঙিন ‘রঙ্গবতী'র নাচে
এরই পাশাপাশি কুমোরটুলিতে তৈরি হচ্ছে শোলার এবং ফাইবারের এক হাত বা তার থেকে একটু বেশি উচ্চতার ঠাকুর। এই মা পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই ধরনের মূর্তি যাঁরা গড়ার বরাত পান তাঁরা নাওয়া-খাওয়ার সময় পাচ্ছেন না। এই নিয়ে কথা হল মৃৎশিল্পী কৌশিক ঘোষের। তাঁর কথা, ২০ বছর ধরে টানা চার প্রজন্ম মায়ের রূপদান করেন তাঁরা। প্রপিতামহের আমলে রাজবাড়ির জন্য প্রতিমা বানাতেন ঘোষ পরিবার। পরে বড় বারোয়ারি পুজো কমিটি ধর্ণা দিত তাঁদের কাছে। এখন তাঁদের প্রতিমা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। ফলে, সারা বছর ধরেই প্রতিমা গড়েন তাঁরা।
কৌশিকের আঙিনায় দেখা মিলেছে দু-টি ফাইবারের প্রতিমার। দেখলে কে বলবে, এই মা মাটির নন! মুখ জুড়ে লাবণ্যের ঢল নেমেছে। গায়ে জরির গয়না, শাড়ি। মাথায় মুকুট। দশ হাতে দশ রকমের অস্ত্র নিয়ে দিন দুয়েকের মধ্যেই লন্ডন, আমেরিকা, দুবাইয়ে পৌঁছে যাবেন দশপ্রহরণধারিণী। ১৪-১৫ জনের টিম তাই এখন খাওয়া-ঘুম ভুলে শুধুই প্রতিমার গায়ে ফিনিশিং টাচ দিতে ব্যস্ত। কৌশিক নিজেও প্রতিবছর আমন্ত্রণ পান লন্ডনে পুজো দেখার। নিজের হাতে গড়া মাকে দেখার লোভে, পুজো দেখার ছুতোয় গত তিন-চার বছর ধরে তিনি পুজোয় লন্ডনবাসী। জানালেন, ওখানে প্যান্ডেল করে পুজো হয় না। পুজো হয় বেসমেন্টে। উৎসবের চারটে দিন জমজমাট। পুজো মিটলে প্রতিমা আবার বাক্সবন্দি। তবে এখানে থিমের প্রতিমা কেউ চান না। মা বিদেশে এখনও শুধুই মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
রোজ ভ্যালির সঙ্গে সম্পর্ক জানতে চিটফান্ড দুর্নীতিতে জিজ্ঞাসাবাদ অভিনেতা প্রসেনজিতকে
মাকে সাজানোর উপকরণ যাঁরা বানান, তাঁরাও নাকেমুখে দেখতে পাচ্ছেন না ব্যস্ততার চাপে। এঁরা বিক্রি করেন মায়ের চুল, শোলার, জরির গয়না, চাঁদমালা। দিন যত এগোবে, ব্যস্ততা ততই বাড়বে। তখন রাতের ঘুম ভুলে ঝড়ের গতিতে তারের মুকুট, শোলার গয়না, ডাকের সাজে রকমারি নকশা গড়বে দশ আঙুল। সব মিলিয়ে তাই বাঙালির সেরা উৎসব আসার আগেই পুজোর গন্ধে মাতোয়ারা কুমোরটুলি। সেখানে মৃৎশিল্পীদের পরিশ্রমের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার মৃন্ময়ীর গায়ের মাটির গন্ধ। গর্জন তেলের বদলে তাঁদের ঘাম দিয়েই যে চিকমিক করে উঠবে প্রতিমার মুখ!