সপ্তমীর দিন সকালে দশভুজা, মহাতেজরূপীণী এক মহাদেবী কাত্যায়নি ঋষির আশ্রমে আবির্ভুতা হন।
কলকাতা: দুর্গাপুজো শাস্ত্রমতে মহাপুজো। জগদ্ধাত্রীপুজোও চারদিনব্যাপিই হয়, তবুও কেবলমাত্র দুর্গাপুজোই একমাত্র মহাপুজো বলে গণ্য হয়। বাঙালীর কাছে দুর্গাদেবী নন, তিনি ঘরের মেয়ে উমা। চারদিনের দুর্গাপুজোয় আমাপর বাঙালী শুধুমাত্র শক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গার আরাধনা করতেই মেতে ওঠে না, ঘরের মেয়েকে চারদিন রাজকীয়ভাবে আদরযত্নটাই মুখ্য হয়ে ওঠে এখানে। আবার বিজয়া দশমীর দিনে বেজে ওঠে বিষাদের সুর। ফলে এখানে কন্যার বাপের বাড়ি আসা ও শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাওয়াটই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গাপুজোর চারদিন পুজোর রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়, মূল ব্যাপারটি বা এর অন্তরালের কাহিনী।
গিরিরাজের আলয় শূন্য করে কৈলাশ পাড়ি দিল উমা, কন্যা বিদায়ে শোকবিহ্বল মেনকা
ষষ্ঠীর দিন সকালে অনেক জায়গাতেই বোধন বসে, সন্ধ্যায় হয় আমন্ত্রণ অধিবাস। এরপর সপ্তমীর দিনটাকেই মূলত প্রথমদিনের পুজো বলে ধরা হয়। মার্কেণ্ডয়চণ্ডীতে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে, মহিষাসুরের প্রবল বিক্রমে দেবতারা স্বর্গ থেকে লাঞ্ছিত ও অত্যাচারিত হয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হন। পুরো ঘটনা তাঁরা জানান দেবাদিদেব মহাদেব, বিষ্ণু এবং সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা। তবে ব্রহ্মার বরে যেহেতু রম্ভাসুরের পুত্র মহিষাসুর সকল পুরুষের অবধ্য, সেই কারণে, দেবতারা মহাকালীরূপী মহাশক্তির অধিষ্ঠাত্রীদেবীকে স্মরণ করেন।
আগামী বছর মহালয়ার ৩৫ দিন পরে দুর্গাপুজো, ভাবুন একবার!
সপ্তমীর দিন সকালে দশভুজা, মহাতেজরূপীণী এক মহাদেবী কাত্যায়নি ঋষির আশ্রমে আবির্ভুতা হন। দেবীকে ঋষি কাত্যায়নি কন্যারূপে আমন্ত্রণ করেন, সেই কারণেই, দুর্গাপুজোর সঙ্গে কন্যার বাপের বাড়ি আশার বিষয়টি জড়িত। সেদিন দেবীকে নানা অলঙ্কারে সজ্জিত করা হয়। অষ্টমীরদিন দেবীকে অস্ত্র প্রদান করে রণসাজে সজ্জিত করেন দেবতারা। সেই কারণে, এই দিনটিতে অস্ত্রের পুজো, বীরাষ্টমী ব্রত পালন, লাঠিখেলা ইত্যাদি হয়। সন্ধিক্ষণে অর্থাৎ অষ্টমী-নবমীর সন্ধিকালে মহিষাসুরের ও তাঁর সৈন্যদের সঙ্গে দেবীদুর্গার প্রবল লড়াই শুরু হয়। নবমীর দিন দেবীদুর্গার জয় কামনায় যজ্ঞ করেন দেবতারা। সেই কারণে দুর্গাপুজোয় নবমীতে যজ্ঞের বিধান। দশমীর সকালে মহিষাসুরকে বধ করেন দেবীদুর্গা, অর্থাৎ দেবীদুর্গা বিজয়ী হন। পরাজিত হয় অশুভ শক্তি।
এক বছরের অপেক্ষা, চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে দশমীর সিঁদুর খেলায় বাগবাজার সার্বজনীন
দেবীদুর্গার বিজয় সংবাদে উৎসবে মেতে ওঠেন দেবতারা। একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। সেই থেকেই দশমীতে শুভ বিজয়ার আলিঙ্গন, শুভেচ্ছা জানানোর রীতি। আবারও দুবৃত্তের অত্যাচার থেকে উদ্ধারে ফিরে আসার বর দিয়ে দেবী চলে যান। মন খারাপ হয়ে যায় ঋষি ক্যাতায়নের। সেই কারণে এদিনটি কন্যাবিদায়ের সঙ্গে যুক্ত।
দিল্লির পুজোমণ্ডপের ভিডিও দেখুন:
দেবীদুর্গা শাশ্বত, তাঁর আবাহন হয়, বিসর্জন হয় না। ভক্তরা সাধ্যমত চারদিন দেবীদুর্গার আরাধনা করে আবারও তাঁকে ভক্তিরসে ডুবিয়ে রাখেন, এরই নাম বিজয়া বা বিসর্জন। আবারও একটি বছরের প্রতীক্ষার মধ্য দিয়ে এবারের মতো দুর্গোৎসবের সমাপ্তি।
কডরজোড়ে মা দুর্গার কাছে ভক্তদের আবেদন:
স্ববৎসরঃ ব্যাতিতে তু পুনরাগমনায়চ
সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে গৃহিণীরা বলেন, আবার এসো মা।