দুর্গা কে? স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের চোখে?
কলকাতা: দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির কাছে একরাশ আনন্দ। কিন্তু সমাজে প্রকৃত দুর্গা কে (Durga Ke) বা কারা? গর্ভিনী, রূপান্তরিত লিঙ্গের মেয়ে, সমকামী, পতিতা না গৃহবধূ? যাঁরা প্রতিমুহূর্তে তাঁদের শরীর-মন দিয়ে সারাক্ষণ ধারণ-বহন করে চলেছেন সমাজকে। অথচ তাঁরাই রোজ সামাজিক রীতি-নীতির যুপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত। এসব নিয়ে ভাবার প্রয়োজনই কোনোদিন বোধ করেনি কেউ! সেই প্রশ্ন এবার তুললেন বাংলার বিশিষ্ট অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee)। বরাবরের স্পষ্টভাষী স্বস্তিকা নির্দ্বিধায় আঙুল তুলেছেন সমাজের সেই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে যা আবহমান কাল ধরে সমাজকে ক্ষয় করছে তিলে তিলে। নারীকে আমরা জায়া, কন্যা, ভগ্নী, মা রূপে দেখলেও সত্যিই কি নারী মুক্ত আধুনিক সমাজে? চিত্রগ্রাহক সৌরদীপের ঘোষের ক্যামেরায় সাত রূপে নিজেকে সাজিয়ে নারীর প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরেছেন স্বস্তিকা। একই সঙ্গে পুজোর আগে প্রশ্ন তুলেছেন, দুর্গা কে? এই সমাজে?
প্রথম ছবিতে স্বস্তিকার প্রশ্ন, কেন আট বছরের মেয়ের কুমারী পুজো হবে, ২৮-এর নয় কেন! সমাজ কি আট বছরের নাবালিকার সারল্যে মুগ্ধ আর ২৮-এর পূর্ণযৌবনার ঋতুস্রাবে ভীত?
কালোই জগতের আলো। কিন্তু কালো মেয়ে নয়! মা কালীকে আমরা ভক্তি ভরে পুজো করি। আর কালো মেয়ে আজও সমাজের, পরিবারের গলগ্রহ। কে বিয়ে করবে কালো মেয়েকে? এই প্রশ্নে আজও বিনিদ্র কাটে অনেক বাবার রাত।
পাত্রী খোঁজার সময় হাজার দাবি। পাত্রের খোঁজে কোনো দাবি আজও ওঠে না কেন পাত্রীপক্ষ থেকে?
জন্মেছ নারী হয়ে, পোশাক পর নারীর মতো! সমাজ এই বিধান দেবে কেন? মেয়েদের মতোই সাজবে না পুরুষের পোশাক গায়ে তুলবে---এটা না হয় একজন মেয়েই ঠিক করুন।
গর্ভধারিণী আমাদের চোখে দুর্বল! অথচ তিনিই শক্তির আধার। একজন প্রাণকে পৃথিবীর আলো দেখানোর ক্ষমতা রাখেন।
ভেঙে যাক লিঙ্গভেদের বেড়া। সবাই আপন হোক সমাজে।
এবার সিঁদুর খেলা তাদের সঙ্গে, যাঁদের আঙিনার মাটি না হলে দেবী প্রতিমা তৈরি হয় না। আমার গন্তব্য তাই সোনাগাছি।
এই সাত সাজে নিজেকে সাজিয়ে সাহসিনী স্বস্তিকার মন্তব্য, ''আমিও মেয়ে। আমার মেয়েবেলাও খুব মসৃণ নয়। তবু বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত, লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে এসে আমি এটুকু বুঝেছি, আমরা নারী, আমরা চাইলে অনেক কিছুই পারি। আর তাই সমাজের এই সাত অন্যায়াসুরের বিরুদ্ধে আমার জেহাদ। আসুন, সবাই মিলে মুছে দিই রোজের 'দুর্গা'র সঙ্গে ঘটে চলা সমস্ত অন্যায়।''