হাইলাইটস
- পথশিশুদের বানানো মূর্তি পূজিত হবে
- বাগবাজার এলাকার পথশিশুদের দুর্গাপুজো
- ফুটপাথবাসী শিশুদের নিজেদের পুজো
কলকাতা: ওরা ভেবেছিলো যত বার মায়ের পুজোয় অঞ্জলি দিতে যাবে, তত বারই এ ভাবেই তাড়া খেয়ে পালাতে হবে আজীবন। ‘অপরাধ’ ওরা পথশিশু। এ বার আর ওদের কেউ বাধা দেবে না। কারণ ওদের হাতে তৈরি মাতৃমূর্তিই পূজিত হবেন ওদের পুজোয়, ‘ফুটপাথের দুর্গাপুজোয়’। ওদের বেশিরভাগই বাগবাজার এলাকার ফুটপাথে বাবা মায়েদের সঙ্গেই থাকে। বাবা মায়েদের নিত্যদিন নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জোগার, সেখানে পুজো অঞ্জলি নিয়ে মাথাব্যথার সময় কই! তবুও ফি বছরই ছোটদের ইচ্ছে হতো আর পাঁচ জনের মতো ঠাকুরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পায়ে ফুল ছুড়ে অঞ্জলি দেবে। রিয়া দাস, সুজিত দাস, দেব দাসেরা জানালো, আমাদের নোংরা জামাকাপড় দেখে সব প্যণ্ডেল থেকে বার করে দিত, ভাবতো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছি। আমরা কিন্তু শুধু অঞ্জলি দেওয়ার জন্যই যেতাম।
ওদের হাতেই এ বার আয়োজিত হচ্ছে দুর্গাপুজো। পথশিশুরা নিজেরাই বেছে নিয়েছে তাদের থিম ‘ইচ্ছেপূরণ’। তবে ওরা পাশে পেয়েছে অর্গোভব হিউম্যানিটি ডেভলপমেন্টের কর্ণধার মহেন্দ্র ও রেশমি আগরওয়াল। মহেন্দ্র জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী মাঝেমধ্যেই বাগবাজার এলাকায় যেতেন। তখনই চোখে পড়ে ওই পথশিশুরা মূর্তি বানানোর চেষ্টা করছে। তা হয়তো খুব বেশি প্রোফেশনাল নয় কিন্তু তাতে ছোটদের নিজস্বতার ছোঁয়া রয়েছে। এরপরেই ওই দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন এই শিশুদের মধ্যেকার প্রতিভা যাতে হারিয়ে না যায়, তাই তাদের জন্য কিছু করতে হবে। সেখান থেকেই আসে দুর্গাপুজোর ভাবনা। সোমবার নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা ছোটদের এই পুজোয় গিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতিমায় তুলির টান দেন। পরে তিনি পথশিশুদের মধ্যে জামাকাপরও বিতরণ করেন।
পুজোর প্রচার ও জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা দীপান্বিতা বাগচী জানান, ফুটপাথের পুজোয় পূজিত হবেন ছোটদেরই তৈরি প্রতিমা। তাঁৱ বাহুল্য নেই কিন্তু রয়েছে আন্তরিকতা। প্রথমে ফুটপাথেই পুজো করার কথা ভাবা হলেও পরে অনুমতি না মেলায় স্থানীয় সারদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুজো করার সিদ্ধান্ত হয়। আর কচিকাঁচারা জানাল, আমাদের ইচ্ছাপূরণ হবে এই পুজোয়। আমরা দুর্গা মায়ের কাছে আমাদের সব আবদার জানাবো, আর প্রাণ ভরে অঞ্জলি দেব। এ বার তো আর কেউ আমাদের বাধা দিতে পারবে না। হাসিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে খুদে খুদে মুখগুলো।