আসানসোল: কাশফুল নেই তেমন, আকাশেও শরৎকালীন পেঁজা তুলোর দেখা নেই। তুমুল বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে মণ্ডপের সজ্জা, দিন আনাদের কাজ নেই। তবু, উৎসব তো আসলে প্রাণের। তাই তৃতীয়াতেই আসানসোল শিল্পাঞ্চলে যেন বোধনের স্বর! পুজোর নির্মল আনন্দে শহরে ‘শুকতারা উৎসব'-এর আয়োজন। আর আয়োজকদের একটা বড় অংশেরই বয়স ৫ থেকে ১৪! আসানসোল শীতলা বাউড়িপাড়া অঞ্চলকে তথাকথিত শহরের উপকণ্ঠে এক প্রান্তিক অঞ্চল বলেই জানেন সাধারণ মানুষ। স্কুল আছে, রয়েছে পঠনপাঠনও। তবে অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া, আর বিয়ে বা কাজের সন্ধানে স্কুলছুট হয়ে যাওয়া এখনও নিয়মিত ঘটনা। পুরুষদের নেশা, পরিবারের শ্রমবিভাজনে অসাম্য ও লিঙ্গবৈষম্য এখানে দগদগে ঘায়ের মতোই। বছর খানেক ধরেই তথাকথিত এই প্রান্তিক অঞ্চলে বাল্যবিবাহ, স্কুলছুট হওয়া, মদ ও নেশার সমস্যার বিকল্প সংস্কৃতি আনতে কাজ করে চলেছে আসানসোল উড়ান নামের ছাত্র যুব সংগঠনটি।
“আফগানিস্তানে হিজাব পরে ফুটবল খেলে মেয়েরা, আমরা কেন পারব না!”-খেলার অধিকার অর্জনে সুরাইয়ারা
এই অঞ্চলের শিশুদের সঙ্গে তো অবশ্যই, শিশুদের মায়েদের সঙ্গেও তাই নিয়মিত কাজ করে চলেছেন উড়ানের কর্মীরা। লক্ষ্য, লিঙ্গবৈষম্যহীন এক অন্যরকমের সংস্কৃতির অভ্যাস গঠন, অল্প বয়সে বিয়ের বদলে মেয়েদের পঠনপাঠন আরও নিশ্চিত করা, ছাত্রদের কাজের সন্ধানে স্কুলছুট হয়ে ওঠা রোখা। আর সেই সংস্কৃতিরই অংশ হিসেবে তৃতীয়ার দুপুরে নাচ, গান, বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠল এক ঝাঁক কচিমুখ! শীতলা বাউড়িপাড়ার সুতপা, সান্ত্বনা, লখিন্দর, ফারহানদের কাছে এ শুধুই নির্মল আনন্দের দিন। শুধু তাই নয়, নিজের হাতে রঙের আলপনাও গড়ে তুলেছে এই খুদে উদ্যমীরা। এদের কারও বাবা পেশায় দিনমজুর, কেউ বা মালী। তুমুল বৃষ্টিতে কাজে যেতে এবং সংসার চালাতেও সমস্যায় পড়েছে সুতপা, ফারহানদের পরিবার। তবু এই আয়োজনে ত্রুটি ছিল না একটুও। এর আগেও রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনে অংশ নিয়েছিল এই অঞ্চলের কচিকাঁচারা। বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন তাঁদের মায়েরা।
অন্য র্যাপুনজেল! ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য মুম্বাই পাড়ি দিল ছোট্ট তিতিরের চুলের বেণি
সমাজের নির্ধারিত বৈষম্যমূলক আচরণে ছোট থেকেই যেন প্রভেদ গড়ে তোলার বুলডোজার চলে পড়ুয়াদের মাথায়! এই মহানগরের অন্য অংশের থেকে যেন একেবারেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে রয়েছে এই এলাকা। লিঙ্গসাম্য ও শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করতে তাই অন্য সংস্কৃতির স্বাদে পেতে অভ্যস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারা, অভ্যস্ত হচ্ছে পরিবারগুলিও। শিল্পাঞ্চলে এই পুজোর আমেজে তাই আসানসোলে উৎসব নামল বাউড়িপাড়ার শিশুদের হাত ধরেই।