সোমবার রাজ্যের সাত আসনে ভোটগ্রহণ।
কলকাতা: শনিবার শেষ হল রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোটের প্রচার। ৬ মে রাজ্যের ৭ আসনে ভোটগ্রহণ। সাইক্লোন ফণীর কারণে শেষ দুদিনে ভোটপ্রচার ব্যাহত হয় সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় ব্যাপকভাবে ক্ষতি করে বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে সুপার সাইক্লোন ফণী। সাইক্লোনের পূর্বাভাসে কর্মসূচী বাতিল করে দিয়েছিল সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। প্রচারের শেষ দিন শনিবার দুর্ঘটনায় আহত হন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। সোমবার ভোটগ্রহণ হবে বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি এবং আরামবাগ লোকসভা আসনে। নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ৮৩জন প্রার্থীর ভাগ্য ইভিএম বন্দি করবেন মোট ১,১৬,৯১, ৮৮৯ জন ভোটার।
এক নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণ অবাধ এব শান্তিপূর্ণ করে তুলতে প্রায় ১০০ শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। মোট ৫৭৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোটে।
সোমবার ভোটগ্রহণ হতে চলা আসনগুলি রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং নদিয়ার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে। সমস্ত আসনেই চারমুখী লড়াই হবে তৃণমূল, বিজেপি বামফ্রন্ট(সিপিআইএম)এবং কংগ্রেসের মধ্যে। এই দফায় রাজ্যে প্রচারে নামেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকটি রোড শোও করেন তিনি।
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অবস্থিত। এই কেন্দ্রের একটি বড় অংশের ভোটার মতুয়া মহাসংঘের সদস্য। সেই মতুয়া ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্যের লড়াই এই আসনে। তৃণমূলের প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে লড়াই ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের। এই কেন্দ্রে বামেদের বাজি অলোকেশ দাস, সৌরভ প্রসাদকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ৫টি কেন্দ্রে মতুয়া মহাসংঘের সদস্যদের ভোট রয়েছে, যাঁদের প্রভাব পড়ে এই আসনগুলিতে। বড়মা বীণাপাণিদেবীর বড় নাতি শান্তনু ঠাকুর, অন্যদিকে মমতাবালা ঠাকুর বড়মার বউমা।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই প্রাক্তন ও বর্তমান তৃণমূল নেতার।এখানে তৃণমূলের বাজি গতবারের প্রার্থী তথা বর্তমান সাংসদ দিনেশ ত্রিবেদী, গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী হয়েছেন ঘাসফুল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে যোগ দেওয়া অর্জুন সিং। মহম্মদ আলমেক প্রার্থী করেছে কংগ্রেস, বামেদের ভরসা গার্গি চট্টোপাধ্যায়।
হাওড়া লোকসভা আসন ধরে রাখতে ফুটবলার প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর এবারেও ভরসা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত।কংগ্রেস প্রার্থী শুভ্রা ঘোষ, সিপিআইএম প্রার্থী হয়েছেন সৌমিত্র অধিকারী।
উলুবেড়িয়া লোকসভা আসনে এবারও ঘাসফুল ফোটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী সাজদা আহমেদ, পদ্ম শিবিরের বাজি জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী সোমা রাণীশ্রী রায়, সিপিআইএমের প্রার্থী মকসুদা খাতুন।
শ্রীরামপুর লোকসভা আসনে ঘাসফুল ধরে রাখতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরেই ভরসা রেখেছেন তৃণমূলনেত্রী। এখানে বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকার। দেবব্রত বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস, বামেদের বাজি সিপিআইএমের তীর্থঙ্কর রায়।
হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে রত্না দে নাগকে এবারেও প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। সিপিআইএম প্রার্থী করেছে প্রদীপ সাহাকে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী প্রতুল সাহা।
আরামবাগ লোকসভা আসনে তৃণমূলের তরফে এবার কোনও বদল করা হয়নি। তৃণমূলনেত্রী ভরসা রেখেছেন গতবারের প্রার্থী তথা বর্তমান সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের ওপরেই। বিজেপি প্রার্থী করেছে তপনকুমার রায়কে। এই কেন্দ্রে বামেদের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে সিপিআইএমের শক্তিমোহন মালিককে, কংগ্রেস প্রার্থী করেছে জ্যোতি কুমারী দাসকে।
সাত কেন্দ্রের ১৩,২৯০টি বুথে ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছেন ভোটকর্মীরা। সাধারণ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ছাড়াও থাকবেন এক্সপেনডিচার পর্যবেক্ষক। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনের তরফে এই প্রথম একজন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষও নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রথমবার ভিভিপ্যাট মেশিনের ব্যবস্থা থাকছে বলেও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।