পশু অধিকার প্রচারকরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, এই হাতিদের মালিকদের জন্য এটি একটি কঠিন সময়
নিউ দিল্লি: অবশেষে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের পর দিল্লি শহরের শেষ ছয়টি হাতিকে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে বনদফতর। বন্যপ্রাণি সংগঠনগুলি দীর্ঘ দিন ধরেই জানিয়েছিল যে এই সমস্ত বন্যপ্রাণিদের মালিকেরা তাঁদের শহরের মধ্যে রেখে বন্যপ্রাণ আইন ভঙ্গ করছে। 40 বছর বয়সী হীরা সহ ধর্মবতী, লক্ষ্মী, গঙ্গারাম, মোতি ও চাঁদনি নামের ছয়টি হাতিকে শহরের বাইরে নিয়ে চলে যাওয়া হবে। কিন্তু এই স্থানান্তর শেষের জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। বন বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান থেকে দূরে রাখা হয়েছে এই প্রাণিদের। অপর্যাপ্ত খাদ্য, জল, আশ্রয়স্থল এবং পশুচিকিত্সার অভাবে এঁদের নানান রোগ হয়ে যেতে পারে, এমনটাই রিপোর্টে ধরা পড়েছিল।"
পঞ্চাশ বছর আগে দিল্লি শহরে 200 টিরও বেশি হাতি ছিল। মন্দিরের বাইরে আশীর্বাদ করতে বা বিয়েতে সাজানোর জন্য এঁদের ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন শহরে গাড়ি থইথই, 20 মিলিয়ন জনসংখ্যার, দূষিত এই শহর হাতিদের বাসযোগ্য নয়। হীরা এবং তার পাঁচজন সঙ্গীর উপযুক্ত আবাসস্থল নয় এই দিল্লি।
মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ হাতিদের স্থানান্তরের জন্য দ্রুত চেষ্টা করছে কারণ ইতিমধ্যেই চারজন অসুস্থ।
কর্মকর্তারা আশা করছেন দিল্লিতে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী বিবেক চাঁদ বর্মনের বিলাসবহুল খামারের অনুরূপ একটি নতুন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে সপ্তমতম মহিলাটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর নিজস্ব কাদার পুল, স্নানের জায়গা রয়েছে।
পশু অধিকার প্রচারকরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, এই হাতিদের মালিকদের জন্য এটি একটি কঠিন সময়। মেহবুব আলি গোটা ঘটনার তুলনা করেছেন উত্তরাধিকার কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে।
"আমার পরিবার ছয় প্রজন্ম ধরে হাতিদের পালন করছে। তারা আমাদের পরিবারের মতোন। আমরা একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারি না।"-বলেন তিনি। হীরার পালক মুকেশ যাদব একেবারে শিশু বয়েস থেকে তাঁকে বড় করেছেন। মুকেশের কথায়, "আমি হাতিদের এতখানিই ভালোবাসি যে আমি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, এই পবিত্র প্রাণিটির সেবায় আমার জীবনকে উৎসর্গ করা উচিত।" বেশ রেগেই মুকেশ বলেন, "এর আগে এই প্রাণিদের জন্য মানুষের প্রকৃত ভালোবাসা ছিল। একটি গ্রামে 20 টি হাতি থাকতে পারত। আমরা ওদের মাঠে নিয়ে যেতাম চরাতে, জঙ্গলে ছেড়ে দিতাম। উৎসব এবং অনুষ্ঠানে গর্ব করে নিয়ে যেতাম তাঁদের। এখন সরকার দাবি করছে যে এঁরা তাদের সম্পত্তি?"
আলি দাবি করেন যে পশু কল্যাণ গোষ্ঠী দ্বারা বেশ কয়েকবার হয়রানি করা হয়েছে তাঁকে। “ওরা এমন বলেন যেন আমরা চুরি করে এনেছি এই হাতিদের। মহারাজারা আমাদের পূর্বপুরুষদের আগে হাতি উপহার দিতেন।”-জানান আলি। কিন্তু বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ দফতরের কর্মীরা মনে করেন এই দাবিগুলি আসলে পশুদের বাণিজ্যিক শোষণ ঢাকার এক প্রয়াস মাত্র।
বন্যপ্রাণি এসওএস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কার্তিক সত্যনারায়ণ জানান, হাতিরা তাদের জীবনের বেশিরভাগটাই খারাপ পরিবেশে কাটিয়েছে এবার অবশ্যই তাঁদের জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। তাঁর সহজ প্রশ্ন, "আপনি কোনটা বাছবেন, জঙ্গলে হাতি ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ, নাকি মন্দিরের বাইরে, দিল্লির রাস্তায়, বা সার্কাসে বন্দি হাতি?"