তবরেজ গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। তখনই তিনি আক্রান্ত হন
হাইলাইটস
- তবরেজ গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে।
- ‘চোর’ সন্দেহে তাঁকে নিগ্রহ করা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে।
- এগারো জন গ্রেফতার ও দু’জন পুলিশ আধিকারিক বরখাস্ত হয়েছেন।
রাঁচি: গত সপ্তাহে ঝাড়খণ্ডে (Jharkhand) ২৪ বছরের এক যুবকের গণপিটুনিতে (Mob lynching) মৃত্যুর পরে এগারো জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু'জন পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। শামস তবরেজ নামের ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি একটি মোটরসাইকেল চুরি করেছিলেন। তাঁকে ধরে ফেলে উন্মত্ত জনতা পোস্টে বেঁধে রেখে অকথ্য মারধর করতে থাকে। তাঁকে দিয়ে জোর করে ‘জয় শ্রী রাম' ও ‘জয় হনুমান' বলানো হয়। তারপর অত্যাচারে কাহিল হয়ে তবজের অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে চার দিন পরে মারা যায় সে। বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) তদন্তের ভার নিয়েছে। তাদের বলা হয়েছে হোম সেক্রেটারি ও চিফ সেক্রেটারিকে বুধবারের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে।
মোবাইলে আসক্তি কমাতে মায়ের পরামর্শ, অভিমানে আত্মঘাতী মেয়ে
তবরেজ জামশেদপুর থেকে সরাইকেলা-খারসাওয়ান জেলার কারসোভা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। সেই সময় বাড়ি থেকে ৫ কিমি দূরে তাঁকে আক্রমণ করে জনতা। এমনটাই দাবি তাঁর এক আত্মীয়ের।
বাংলায় দুষ্কৃতীদের খতম করতে আনা হবে “ইউপি মডেল”: বিজেপি
শাহিস্তা পরভিন, তবরিজের স্ত্রী দাবি করেছেন, ‘‘ওকে নির্দয়ের মতো মারা হয়েছে কারণ ও মুসলিম। আমার কেউ নেই। কোনও শ্বশুর-শাশুড়িও নেই। আমি কী করে বাঁচব? আমার ন্যায়বিচার চাই।''
শামস তবরেজের পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, তবরেজের সঠিক চিকিৎসার পুলিশকে অনুরোধ করলেও লাভ হয়নি। এমনকী, তাঁর সঙ্গে কাউকে দেখাও করতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বহু আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন, এই অভিযোগও করা হয়েছে। রিবারের তরফ থেকে এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের (পুলিশ ও চিকিৎসক সহ) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে।
সরাইকেলা-খারসাওয়ান জেলার পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট কার্তিক এস জানিয়েছেন, ‘‘আমরা সমস্ত দিক থেকেই বিষয়টি দেখছি। ওঁর পরিবারের সদস্যরা কয়েকজন অচেনা দুর্বৃত্তদের কথা বলেছে। সেই অভিযোগের উপরে ভিত্তি করে আমরা এরই মধ্যে এগারো জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের একজনের নাম পাপ্পু মণ্ডল।''
রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেস মৃতের স্ত্রীকে সরকারের তরফ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের সামনে পুলিশ মেনে নিয়েছে তদন্তের পদ্ধতিতে গলদের কথা। পুলিশের তরফে একটি সিট গঠন করা হয়েছে। দুই আধিকারিক চন্দ্রমোহন ওরাও ও বিপিন বিহারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি সরকারি বিবৃতি জানা যাচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনাটির গুরুত্ব না তুলে ধরা ও একই দিনে আরও একটি গণধোলাইয়ের কেস রেজিস্টার করা।
হায়দরাবাদের রাজনীতিবিদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর কাছে বিজেপি ও আরএসএস-এৱ সমালোচনা করে জানিয়েছেন, ওই দলগুলি ‘‘সাফল্যের সঙ্গে একটা মনোভাব তৈরি করে দিয়েছে যে মুসলিমরা জঙ্গি, দেশবিরোধী ও গোহত্যাকারী।''
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘‘এনডিএ ২.০-র নতুন ভারত।''
ঝাড়খণ্ডের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, গণপিটুনিকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে না ফেলা ঠিক নয়। মন্ত্রী সিপি সিংহ বলেন, এটাই এখন ট্রেন্ড। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে ‘‘বিজেপি, আরএসএস, ভিএইচপি ও বজরং দলকে যুক্ত করা। এটা ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট'-এর যুগ।''
FactChecker.in ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, তবরেজ আনসারির উপরে হওয়া আক্রমণের ঘটনা এ বছরে ঘটা এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ১১ নম্বর। ৫৯ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, আক্রান্ত একজন মুসলিম ও ২৮ শতাংশ ক্ষেত্রে গরু-সংক্রান্ত ইস্যু থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত।