আজ সকালে পিজি হাসপাতালে মাত্র ৫৯ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন এই কবি।
প্রতিটি মৃত্যু চলমান সময়কে আরেকটু বেশি মৌন করে তোলে। আমাদের চারপাশের যা কিছু, একটি মৃত্যু মানে, তাকে দেখার আরও একটি চোখ কমে গেল। অর্থাৎ, তা হয়ে পড়ল নির্জন। এই নির্জনতার ওপরেই কোন এক ঢাল বেয়ে গড়িয়ে এসে চেপে বসে এক বন্ধ্যা অন্ধকারের মতো সংবাদ। এক কবি চলে গেলেন...চলে গেলেন পিনাকী ঠাকুর। এ এমন এক মৃত্যু, যা কবিতাকে আরও বেশি করে বিষয়ের সংস্পর্শে নিয়ে আসে। যে বিষয়টির নাম- অস্তিত্বের সংকট। এছাড়া, কবিতার যেমন আর কোনও দ্বিতীয় বিষয় নেই...
বড়দিনে রোদ্দুরের দেশে চলে গেলেন অমলকান্তির স্রষ্টা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
নিয়মিতভাবে তাঁর কবিতা লেখা শুরু হয় গত শতাব্দীর সাতের দশকের শেষের দিক থেকে। প্রথম কবিতার প্রকাশও ওই দশকেই। ১৯৭৪ সালে। 'উশীনর' পত্রিকায়। ১৯৭৯ সালে 'দেশ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতা। কিন্তু, কবি হিসেবে খ্যাতিলাভের শুরুটা নয়ের দশকে এসে। ওই দশকের শুরুর দিকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র পিনাকী কর্পোরেটের হাতছানি এড়িয়ে পুরোপুরি কবিতা লেখাতেই মনোনিবেশ করবেন বলে স্থির করেন৷ তাঁর কথায়, 'তখন থেকেই হয়ে উঠেছিলাম পরিপূর্ণ বেকার'।
'একদিন প্রতিদিন'-এর জীবন ছেড়ে নীল আকাশের দেশে পাড়ি দিলেন মৃণাল সেন
পিনাকীর কবিতায় বরাবরই থেকে গিয়েছে মফসসলীয় বৃত্তান্তের এক অব্যর্থ নান্দনিক উচ্ছ্বাস। মফসসলের বাস্তবধৃত এবং বহু বিষয় সমন্বিত জটিল নকশা প্রস্তুত করতে করতেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন লোকাল ট্রেনের উইন্ডোসিট বা স্থানীয় মাঠের এক কোণে একা পড়ে থাকা ঘাসের শিকড়ে। মফসসলের অন্তহীন দোকান, চামড়ার কারখানা, ঘোরানো-প্যাঁচানো রাস্তা, কলহমান কুকুরের দল কোনওকিছুই নজর এড়ায়নি তাঁর।
কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে 'অঙ্কে যত শূন্য পেলে' কিংবা 'একদিন অশরীরী' বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। ' কৃত্তিবাস'-এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা এই কবি ২০১২ সালে পেয়েছিলেন তাঁর 'চুম্বনের ক্ষত' কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি এবং কৃত্তিবাস পুরস্কারও।
বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর আজ সকালে পিজি হাসপাতালে মাত্র ৫৯ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন এই কবি।
নির্জনতা পছন্দ করতেন এই কবি। আজ চলে গেলেন চিরন্তন মৌনের জগতে। আঁধার রাতের কোনও কোনও একলা পাগল যে এই পৃথিবীর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্তম্ভগুলির পাশে বসে পিনাকীর কবিতা পড়ে যাবেন, তেমন একটি আশাই আমাদের আগামীকালটির দিকে তাকানোর স্বপ্নটি জাগিয়ে রাখে...