দেখে নিন এই সংক্রান্ত ১০ টি তথ্য:
"আমরা, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দল, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনে ও সন্ত্রাসের অবসানের জন্য করা এই প্রচেষ্টায় ভারতকে পুরোপুরি সমর্থন করি ... আমরা ভারত সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে তাদের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই,", বলেন এক সাংসদ।
"আমরা ভারতীয় নাগরিক, তাই আমরাও অন্যান্য ভারতীয় নাগরিকের মতোই হতে চাই ... আমরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও উন্নয়ন হচ্ছে তা দেখতে চাই, আমাদের জানিয়েছেন এখানকার স্থানীয়রা মানুষজন", বলেন আরেক সাংসদ।
শ্রীনগরের বিমানবন্দর থেকে শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে যাওয়ার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদরা একটি বুলেট-প্রুফ গাড়িতে সফর করেন। ওই সাংসদদের মধ্যে মূলত ডানপন্থীরাই রয়েছেন; ২৭ সাংসদরে মধ্যে মাত্র তিনজনই বাম বা উদারপন্থী দলের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা সকলেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত সফর করছেন। দেখা যায় যে, শ্রীনগরের নির্জন রাস্তা দিয়ে সাংসদদের ওই দলটিকে যেতে দেখা যায়। এই কাশ্মীরেই তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সহ কয়েক ডজন রাজনীতিবিদকে আটক করে রাখা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরে তাঁদের অভ্যর্থনার করা হয়। এরপর ইউরোপীয় সাংসদদের জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি বিষয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেন সেখানকার প্রধান সচিব বিভিআর সুব্রাহ্মণ্যম এবং পুলিশ প্রধান দিলবাগ সিং। ওই দলটি সদ্য নির্বাচিত কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্য ও কাউন্সিলরদের সঙ্গেও কথা বলেছে । শীর্ষ পুলিশ কর্তা এবং অসামরিক কর্মকর্তারা ওই সাংসদদের বলেন যে মানুষ শান্তির জন্য অপেক্ষা করছে, যদিও সন্ত্রাসবাদীরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে চলেছে। প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে তাঁদের দিলবাগ সিং বলেন, গত ৮৪ দিনে সেখানে একটিও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
অভিযোগ ওঠে যে, কোনও শীর্ষস্থানীয় নাগরিক সমাজ, বাণিজ্য সংস্থা বা কাশ্মীরি রাজনৈতিক দল শ্রীনগরে ইইউ সাংসদদের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই সাংসদ জানিয়েছেন, তাঁরা ওই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তাঁদের বাধা দেওয়া হয়।
শ্রীনগরের সর্বাধিক পর্যটক আকর্ষণকারী ডাল লেকে ভ্রমণ করেন। সাংসদদের নৌকায় করে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। পিটিআই জানিয়েছে যে হোটেলের কাছে বোটিং হয়েছিল, সেখানে ৫ অগাস্ট থেকে ৩০ জনেরও বেশি রাজনীতিবিদ ও কর্মী আটক রয়েছেন।
২৭ জন সাংসদের মধ্যে ৪ জন এই সফর থেকে সরে এসে তাদের দেশে ফিরে গেছিলেন। এই সফরের আগে, ইউরোপীয় সাংসদ থিয়েরি মেরিয়ানি এদেশে এসে বলেন, "আমরা কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছি, কমপক্ষে তাই দেখতে চাইছি যে তাঁরা আমাদের কী দেখাতে চায় ?" অপর সাংসদ ক্রিস ডেভিস দাবি করেন যে তিনি সুষ্ঠু মূল্যায়নের জন্য কাশ্মীরের মানুষের জন্যে সব জায়গায় নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার চেয়েছিলেন বলে তাকে এই সফর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাট সাংসদ বলেছিলেন: "মোদি সরকারের পক্ষে আমি পিআর স্টান্টে অংশ নিতে এবং সব কিছু ঠিক রয়েছে এমন ভান করতে প্রস্তুত নই। এটা খুব স্পষ্ট যে কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক নীতিগুলি লঙ্ঘিত হচ্ছে, এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্তরে কিছু করা দরকার "।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদরা যেদিন জম্মু ও কাশ্মীর সফর করেছিলেন সেদিনই কুলগাম জেলায় সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয় । এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও একজন শ্রমিক।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাতও করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সাংসদরা। এই সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বলা হয়, "ওই প্রতিনিধিদলকে জম্মু ও কাশ্মীরের সফরে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভিন্নতার আরও ভাল করে বোঝানো হবে; বোঝানো হবে এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও প্রশাসনের অগ্রাধিকার সম্পর্কেও"।
রাহুল গান্ধির মতো বিরোধী নেতারা এই সফরের নিন্দা করেন। অগাস্টে শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসা কংগ্রেস নেতা টুইট করেন: "ইউরোপের সাংসদরা জম্মু-কাশ্মীরের সফরে যেতে চাইলে তাঁদের স্বাগত জানানো হচ্ছে অথচ যখন ভারতীয় সাংসদরা সফরে যেতে চাইছেন তখন তাঁদের সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। এতে একটা বড়সড় ভুল আছে। "