মঙ্গলবার শ্রীনগরের ডাল লেকে যায় ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাংসদের প্রতিনিধি দল
নয়াদিল্লি: জম্মু কাশ্মীরে বিদেশী প্রতিনিধি (European Union MP) দলের সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা, যেখানে ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সেখানে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বা বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কীভাবে বিদেশী নাগরিকদের যেতে দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা, এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir) গেলেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের নেতারা। অগস্টে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ রাজ্যের রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার কেন্দ্রের ঘোষণার পর থেকে সেখানে এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতি প্রতিনিধি দলের সফর।
জম্মু ও কাশ্মীরে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুললেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক সাংসদ
সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে দেখা করেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের নেতারা। অশান্তির আশঙ্কায় ২৭ জনের মধ্যে চারজনকে বাদ দেওয়া হয় সফর থেকে। এই সাংসদরা অতি ডানপন্থী দলের, বামপন্থী বা লিবারেলদের তরফে ছিলেন ২৭ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন। নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষমতায় ভারতে এসেছেন তাঁরা।
ছবিতে দেখা গিয়েছে, নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীতে শ্রীনগরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিধি দল, তাঁরা পিছনে ফেলে যান চারটি জায়গা, যেখানে আটক করে রাখা হয়েছে তিনজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীসহ প্রায় ডজনখানেক রাজনৈতিক নেতাকে।
সেনাবাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয় ইউরোপিয় ইউনিয়নের নেতাদের, সেখানে তাঁদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়। বিজেপি সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তাঁরা।
"অনন্য জাতীয়তাবাদ" ইউরোপীয় সাংসদদের সফরকে কটাক্ষ প্রিয়াঙ্কা গান্ধির
তবে অনেকের অভিযোগ, কোনও নামজাদা নাগরিক সংগঠন, বাণিজ্য সংগঠন বা কাশ্মীরের মূলধারা কোনও রাজনৈতিক দল প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেনি।
প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে জানান ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই সাংসদ।
সফর শেষে ডাল লেকে যান তাঁরা। ডাল লেকে নৌকায় ভেসে বেড়ান সাংসদরা।
শ্রীনগরের বিমানে ওঠার আগে, মঙ্গলবার সকালে, ইউরোপিয় ইউনিয়নের নেতা ন্যাথান গিল সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, “বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে কাশ্মীরে যেতে পারা, এবং সেখানে কী হচ্ছে, তা প্রথম দেখতে পারা আমাদের দারুণ সৌভাগ্যের বিষয়”।
একজন ইউরোপিয় সাংসদ ট্যুইট করেন, এই প্রতিনিধি দল সরকারীভাবে ইউরোপিয় সংসদে বক্তব্য রাখেন না। তিনি ট্যুইটে লেখেন, “পরিষ্কারভাবে-অতি দক্ষিণপন্থী সাংসদরা, “সরকারী” প্রতিনিধি হিসেবে কাশ্মীরে যাচ্ছেন না। তাঁরা ইউরোপিয় সংসদে বক্তব্য রাখেন না। কাশ্মীরে বনধ্ এর পরিস্থিতি শেষ হওয়া উচিত, এবং সাংবিধান অনুযায়ী আইনের শাসন ফেরানো উচিত”।
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জম্মু ও কাশ্মীরের গেলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদরা
আরেক সাংসদ ক্রিস ডেভিস অভিযোগ করেন, অবাধ কাশ্মীরের পক্ষে সওয়াল করায়, তাঁকে সফর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক সাংসদ বলেন, সেখানে কোনওরকম নিরাপত্তা ছাড়াই ঘুরতে চেয়েছিলেন তিনি এবং যে কারও সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন, সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজেই ধারণা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। ক্রিস ডেভিস বলেন, “আমি মোদি সরকারের জনসংযোগের কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলাম না, এবং সব ঠিক আছে, এইরকম ভাব দেখাতেও ইচ্ছুক ছিলাম না। এটা পরিষ্কার যে, কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক নীতি ধ্বংস করা হয়েছে, এবং সারা বিশ্বের এটা দেখা প্রয়োজন”।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সাংসদরা, তারপরেই একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “জম্মু ও কাশ্মীরে তাঁদের সফর, জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখের বৈচিত্রতা সম্পর্কে তাঁদের অবগত করবে, এছাড়াও সেখানে সরকারের অগ্রাধিকার ও উন্নয়নের চিত্রও দেখতে পারবেন তাঁরা”।
আজকের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি দেখতে ক্লিক করুন:
এই সফরকে কটাক্ষ করেছেন রাহুল গান্ধিসহ বিরোধীরা। তিনি ট্যুইট করেন, “যেখানে ভারতীয় সাংসদদের সেখানে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং তাঁদের আটক করা হয়েছে, সেখানে ইউরোপের সাংসদদের নির্দেশকসহ সফরকে স্বাগত। এটা খুব বড় ভুল”।