মুম্বই হামলায় জীবন্ত ধরা পড়া একমাত্র জঙ্গি কাসভের ফাঁসি হয় ২০১২ সালে।
মুম্বই: ২৬/১১ (26/11 Mumbai Attack) জঙ্গি আজমল কাসভ মারা গেলে তার নাম থাকত বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা ‘সমীর দীনেশ চৌধুরী'। হাতে বাঁধা থাকত লাল সুতো। এমনটাই পরিকল্পনা ছিল ওই হামলার মূল চক্রী লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি গোষ্ঠীর। তাদের পরিকল্পনা ছিল মুম্বই হামলাকে ‘হিন্দু সন্ত্রাস' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার। এমনি বিস্ফোরক দাবি করেছেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাকেশ মারিয়া (Rakesh Maria)। তাঁর সদ্য প্রকাশিত স্মৃতিকথা ‘লেট মি সে ইট নাউ'-তে তিনি দাবি করেছেন ২০০৮ সালের ওই হামলার ক্ষেত্রে পাক জঙ্গি গোষ্ঠীটির পরিকল্পনাই ছিল জঙ্গিদের নামকে নকল হিন্দু নাম দিয়ে ঢেকে রাখার। রাকেশ মারিয়া বইতে দাবি করেছেন, লস্কর-ই-তৈবার পরিকল্পনা ছিল কাসভের কবজিতে বাঁধা থাকবে একটি লাল সুতো। সেই সঙ্গে মিলবে পরিচয়পত্র। তাতে নাম লেখা থাকবে ‘সমীর দীনেশ চৌধুরী'। দেখানো হবে সে বেঙ্গালুরুর অরুণোদয় ডিগ্রি ও পিজি কলেজের ছাত্র।
শিনা বোরা হত্যা মামলায় মু্ম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়ার চাঞ্চল্যকর দাবি
রাকেশ জানাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে সংবাদপত্রের হেডিং হত মুম্বইয়ে হিন্দু সন্ত্রাসবাদীদের হামলার কথা জানিয়ে। সমস্ত শীর্ষ টিভি সাংবাদিক বেঙ্গালুরুতে গিয়ে জনৈক সমীরের বাবা-মা ও প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকার নিতে চাইতেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। আজমল কাসভকে পাকিস্তানের ফরিদকোটের বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করা গিয়েছিল।
তাঁর এমন দাবি ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রাকেশ কেন এখন বলছেন? পুলিশ প্রধান হিসেবে তিনি তখন একথা বলে পদক্ষেপ করতে পারতেন। আমরা নিন্দা করি কংগ্রেস ও পি চিদাম্বরমের, মিথ্যের জাল বোনার জন্য। সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ধর্ম হয় না।''
আর এক বিজেপি নেতা রাম মাধব বলেন, ‘‘কোনও কোনও আঁতেলরা মুম্বই হামলাকে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছে। তারা সমর্থনও পেয়েছিল কংগ্রেস নেতাদের। আজ জানা গেল, এটা আইএসআইয়ের চক্রান্ত ছিল।''
প্রসঙ্গত, ওই হামলার একমাত্র জীবিত জঙ্গি কাসভের ফাঁসি হয় ২০১২ সালে।
শিনা বোরা হত্যা মামলার তদন্তভার তদন্তের মাঝপথে নাটকীয় ভাবে রাকেশ মারিয়ার হাত থেকে চলে যায়। তৎকালীন অতিরিক্ত মুখ্য স্বরাষ্ট্র সচিব কেপি বক্সী তাঁকে একটি মেসেজ করে খবরটি দেন। রাকেশ জানাচ্ছেন, কাসভ তাঁকে জানিয়েছিল সে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিল ডাকাতি করার জন্য। ‘জিহাদ' নিয়ে নাকি তার কোনও মাথাব্যথা ছিল না।
রাকেশ আরও জানান কাসভকে জেরা করার সময় তিনি তাকে দিয়ে ‘ভারত মাতা কি জয়' বলিয়েছিলেন। একবার নয়, দু'-দু'বার তিনি কাসভকে ‘ভারত মাতা কি জয়' বলিয়েছিলেন বলে জানান রাকেশ।
রাকেশ আরও জানান, কাসভ ধরা পড়ার পর তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল তাকে বাঁচিয়ে রাখা। তিনি জানাচ্ছেন, মুম্বইয়ের পুলিশরা রাগে ফুঁসছিল। পাশাপাশি জঙ্গিদের তরফেও তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছিল। দাউদ ইব্রাহিমের দলের উপরে ন্যস্ত হয়েছিল কাসভ-হত্যার দায়িত্ব।