মায়েদের পাশে আরোহন, ইস্মিত, অর্থম (সৌজন্যে: মৌসুমী সাহা দত্ত)
হাইলাইটস
- মায়েদের পাশে কুচোকাঁচার দল
- এরা ডন বস্কো, ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলের পড়ুয়া
- শ্রম বাঁচাতে ছোট্ট হাতে মায়ের কাজের সঙ্গী
কলকাতা: বিশ্বাস করুন, ছবিগুলো দেখে নিজের অজান্তেই মন আউড়ে নিল বিশ্বকবির ‘সবুজের অভিযান' কবিতার লাইন--- ‘ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা/আধমরাদের ঘা দিয়ে তুই বাঁচা....!' করোনা ত্রাসে শুধু আমরা কেন! গোটা বিশ্বই প্রায় আধমরা। তারই মধ্যে তরুণ প্রজন্ম মেতেছে নিয়ম ভাঙার খেলায়। করোনা লকডাউনে (Corona Lockdown) বাইকের পিঠে সওয়ার হয়ে পক্ষীরাজের মতো ফাঁকা রাস্তা দিয়ে প্রায়ই উড়তে দেখা যাচ্ছে তাদের। ঘোরতর সংসারীরা সকাল হলেই থলে হাতে দৌড়োচ্ছেন রোজের রসদ জোগাড় করতে। এবং সেখানেও অলিখিত প্রতিযোগিতা। কেউ তিনটে বড় পাউরুটির প্যাকেট নিমেষে বুকে তুলে ধাঁ! তো কেউ তিনপেটি ডিম, একবস্তা চাল, একবস্তা আলু, থলি উপচানো বাজার সাইকেলের পেছনে চাপিয়ে সেদিনের যুদ্ধে জিতে বাড়ি ফিরছেন। চ্যানেলে চ্যানেলে মনোবিদদের সঙ্গে গম্ভীর মুখে সঞ্চালকের আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তর, আগামী ২১ দিনের বন্দিদশায় মন ভালো রাখার দাওয়াই কী?
কেন্দ্রের থেকে ১,৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এভাবেই ২২ মার্চ থেকে রোজ যখন আমরা একটু একটু করে ভয়ে, মনখারাপে, অবসাদে মরতে মরতে প্রায় আধমরা তখনই নগরজীবনকে ফের বাঁচার মন্ত্র বাড়ি বসেই শেখাল কলকাতার একদল খুদে (Children)। এদের কেউ শিখিয়ে দেয়নি। কোনও মনোবিদও পরামর্শ দেননি। নিজেদের তাগিদে, নিজেদের অনুভূতি দিয়ে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে পরিবারের। বাবা ওয়ার্ক ফ্রম হোম। মায়েরাও তাই-ই। বা গৃহবধূ হলেও ঝক্কি বেড়েছে তাঁদেরও। কারণ, কাজের মাসি, রান্নার মাসি ছুটি নেওয়ায় মায়েদের এখন একটা দিন ৪৮ ঘণ্টা আর দশভুজার বদলে বিশভুজা মানে ২০টি হাত হলে যেন বেঁচে যান। এই অবস্থায় কীভাবে তারা মায়েদের পাশে এসে দাড়িয়েছে? তারকা সন্তান না হয়েও যেভাবে নিজেদের আলোয় এরা আলোকিত দেখলে চোখ জুড়োবে আপনারও ----
এমনই রত্নগর্ভাদের এতজন মৌসুমী সাহা দত্ত। যিনি আগে কলকাতায় আরজে বা রেডিও জকি হিসেবে যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন। তিনি জানালেন, 'আমার ছেলে আরোহণ ঘরদোড় ঝাড়ামোছা করে পরিষ্কার রাখতে এমনিতেই ভালোবাসে। স্কুল ছুটি পড়ায় এই কাজে যেন ওর উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। ঘর পরিষ্কারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিজে থেকেই তুলে নেওয়ায় আমার অনেকটা পরিশ্রম যেন লাঘব হয়েছে। এদিকে ঘরবাড়িও জীবাণুমুক্ত। এমনিতেই স্কুল থেকে আমাদের বলে, বাড়িতে ছোট ছোট কাজ করতে দিন ওদের। ওরাও সাবলম্বী হবে। আপনাদেরও পরিশ্রম কমবে। ওরা তাই খুশি মনেই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এই দুর্দিনে।'
লকডাউন ভেঙে পথে! ২৪ ঘণ্টায় ৮৭১ জনকে গ্রেফতার করল লালবাজার
শুধু আরোহণ নয়, দল ভারী হয়েছে অর্থম, অনুশ, ইজান, সৃজাক, ইস্মিতদের যোগদানে। এদের মধ্যে অনুশ, ইজান ক্যালকাটা বয়েজ-এর ছাত্র। আরোহণ, সৃজাক ডন বস্কো স্কুলের। অর্থম পড়ে সেন্ট জেভিয়ার্সে। কী কী কাজ করছে এঁরা? প্রত্যেকের হয়ে মৌসুমী জানিয়েছেন, নিজেদের খাওয়ার থালা-বাসন তো মাজছেই। স্টিলের ছোট ছোট পাত্রও মাজছে তার বাইরে। কেউ আবার ডান্ডার মাথায় লাগানো ন্যাতা দিয়ে পুঁছছে ঘর। কেউ মাকে জামা-কাপড় ভাঁজ করে দিয়ে কাজ এগিয়ে দিচ্ছে হাতে হাতে। কেউ আবার নিজের সাইজের থেকে ইয়া বড় ঝাঁটা নিয়ে ঝাঁট দিয়ে টানটান রাখছে বিছানা।
মৌসুমীর আরও দাবি, কোনও মা-ই কিন্তু তাঁদের সন্তানদের এই কাজের জন্য বলেননি। উল্টে বাসন মাজতে নিষেধই করেছিলেন সবাই। মায়েরা বলেছিলেন, তোদের নরম চামড়া ক্ষার যুক্ত সাবানে কর্কশ হয়ে যাবে। কিন্তু কে শোনে কাদের কথা! উল্টে খুদেদের বড় অকাট্য যুক্তি, তোমাদের মেয়েদের ত্বকও নরম, সংবেদনশীল। তোমরা পারলে আমরা পারব না কেন?'
২১ দিনের লকডাউন! ওয়ার্ক ফ্রম হোমে মজে বাংলার রাজনীতিবিদরাও
ছবি আর কথা দেখেশুনে চোখের কোণ সত্যিই শিরশিরিয়ে ওঠে। এরা নিজেরা ভালো আছে। পরিবারকেও ভালো রেখেছে। এমন সন্তানদের জন্য দশ মাস দশদিনের গর্ভযন্ত্রণাও যেন তুচ্ছ! এদের জন্যই ভারত মা আজও বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। তিলোত্তমা, 'তোমারে সেলাম!'