পাঁচ বছরে ‘অম্ল-মধুর’ অভিজ্ঞতার সাক্ষী কেশরী নাথ ত্রিপাঠি
কলকাতা: জুলাই মাসের শেষ রবিবারে অর্থাৎ, আজ বিদায় নিচ্ছেন তিনি। পাঁচ বছর কাটিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। অনেক ভালো-মন্দ, ওঠা-পড়া, ভাঙা-গড়ার সাক্ষী তিনি। শাসকদলকে যেমন কাছ থেকে দেখেছেন তেমনি প্রত্যক্ষ করলেন রাজ্যে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী দল বিজেপি-র উত্থান। পাঁচ বছরে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই সমস্ত ঘটনা, অভিজ্ঞতাকে অম্ল-মধুর (sweet & sour) বলে ব্যাখ্যা করলেন বিদায়ী রাজ্যপাল (Outgoing Governor) কেশরী নাথ ত্রিপাঠি (Keshari Nath Tripathi)। একই সঙ্গে আগামী দিনে শিক্ষা ও প্রশাসনে রাজ্য যাতে আরও উন্নতি করে, সেই কামনা করেন তিনি।
'২১-এর নির্বাচন 'পাখির চোখ' করতে বৈঠক ডাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কথা প্রসঙ্গে তিনি রাজ্যের শিল্পের অবনতির কথাও বলেন। তাঁর মতে, সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শিল্পে উন্নতি হয়নি রাজ্যের। শিল্পপতিরা এখনও উৎসাহিত নন, এই রাজ্যে শিল্প করতে। সরকারের উচিত সেদিকে আরও মনোযোগী হওয়া। তবেই দেশি-বিদেশি লগ্নি টানা সম্ভব হবে। অম্ল-মধুর শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজ্যপালের মন্তব্য, মিষ্টির ভাগটাই বেশি। টক স্বাদের অভিজ্ঞতা কম। তবে, শিক্ষা, প্রশাসন, আইন এবং শিল্প নিয়ে এমন অনেক ঘটনা বাংলায় ঘটেছে বা ঘটছে যা অনভিপ্রেত আমার কাছে। সেই দিকটাকেই আমি অম্ল বলব।
কেশরী নাথ ত্রিপাঠি এবিষয়ে আরও বলেন, সরকার মনোযোগ দিলেই এসমস্ত বিষয়ের ফাঁক ভরাট সম্ভব। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি রাজ্যের আইন-কানুন এবং প্রশাসনকে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আরও কড়া হতে হবে। বন্ধ করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন বিক্ষোভ। একই ভাবে আরও লগ্নি ওপুঁজিপতিদের আনতে হবে রাজ্য সরকারকে। তাহলেই সামগ্রিক উন্নতি হবে রাজ্যের।
সামাজিক সম্প্রীতির গায়ে আঁচড় ফেলছে মুখ্যমন্ত্রীর তোষণনীতি: ত্রিপাঠি
রাজ্যপাল পদ থেকে বিদায় নেবার আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করতেন ছাড়েননি কেশরীনাথ ত্রিপাঠি। শনিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো দৃষ্টিভঙ্গি মমতার আছে। তাকে বাস্তবায়িত করারও শক্তি রাখেন তিনি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর তোষণনীতি ক্ষতি করছে সামাজিক সম্প্রীতির। একইসঙ্গে ক্ষুণ্ণ করছে দলের ভাবমূর্তিও। এবিষয়ে বিদায়ী রাজ্যপালের মুখ্যমন্ত্রীকে হার্দিক পরামর্শ, একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার উচিত প্রত্যেক নাগরিককে সমান চোখে দেখা। একই সঙ্গে আবেগে সংযমের লাগাম পরানোর কথাও বলেছেন তিনি।
ত্রিপাঠিজির মতে, "গত পাঁচ বছর কাছ থেকে দেখার ফলে বলছি, মুখ্যমন্ত্রীত্বের সমস্ত গুণ রয়েছে মমতার মধ্যে। তিনি খুব ভালো শাসক, রাজনীতিবিদ। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তিনি বড়ই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। ফলে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েও তাকে বাস্তবায়িত করতে পারেন না। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে গেলে এই বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে তাঁকে।"
অবশেষে অনশন ভাঙলেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা, দাবি মেনে নিল রাজ্য সরকার
প্রসঙ্গত, সরকারি মতে ২৩ জুলাই রাজ্যপালের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন কেশরী নাথ ত্রিপাঠি। ৩০ জুলাই নতুন রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেবেন জগদীপ ধনকার।
অবসর জীবন কোথায়, কীভাবে কাটাবেন বিদায়ী রাজ্যপাল? প্রশ্ন উঠতেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে স্মিত মুখে জবাব ত্রিপাঠির, রবিবার তিনি ফিরছেন উত্তরপ্রদেশে, নিজের শহর এলাহাবাদে। আপাতত কিছুদিন বিশ্রাম। তারপর আবার তাঁকে দেখা যাবে পুরনো ভূমিকায়, আইনজীবী হিসেবে। পাশাপাশি, আত্মজীবনীও লিখবেন। আর যুক্ত থাকবেন স্বেচ্ছ্বাসেবী কোনও সংস্থার সঙ্গে। একই সঙ্গে আশ্বাস ত্রিপাঠির, কাজের ফাঁকে আসবেন তিনি পশ্চিমবঙ্গে। বাংলার মানুষদের দেখতে। বাংলার উন্নতি দেখতে। বেশি আসবেন কলকাতা শহরে। কারণ, বার্ধক্যে পৌঁছে নতুন করে তিনি যে প্রেমে পড়েছেন তিলোত্তমার!
(এনডিটিভি এই খবর সম্পাদনা করেনি, এটি সিন্ডিকেট ফিড থেকে সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।)