মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণপিটুনির পরে শনিবার মারা যান ওই যুবক।
হাইলাইটস
- ঝাড়খণ্ডে গণধোলাইয়ে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচ।
- দুই পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
- গোটা দেশে এই মর্মান্তিক ঘটনা নিন্দিত হচ্ছে।
রাঁচি: গত সপ্তাহে ঝাড়খণ্ডে (Jharkhand) গণধোলাইয়ে (Mob lynching ) যুবকের মৃত্যুর ঘটনা সারা দেশ চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। অবশেষে এই কাণ্ডে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হল। বরখাস্ত হলেন দু'জন পুলিশ আধিকারিক। পুলিশ আরও অন্তত একজনের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে যে ব্যক্তি ওই কাণ্ডে যুক্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে ২৪ বছরের তবরেজ আনসারিকে আটক করে জনতা। তবরেজ জামশেদপুর থেকে বাড়ি ফিরছিল বন্ধুদের সঙ্গে। সেই সময় বাড়ি থেকে ৫ কিমি দূরে তাঁকে আক্রমণ করে জনতা। এমনটাই দাবি তাঁর এক আত্মীয়ের। তাঁকে একটি পোস্টে বেঁধে রেখে সাত ঘণ্টা ধরে প্রবল মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি সেখানেই অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সেতু ভেঙে খালের জলে চলন্ত ট্রেন; দুর্ঘটনায় মৃত ৪, আহত ১০০-রও বেশি
শনিবার তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। শামস তবরেজের আত্মীয়রা আরও অভিযোগ করেছেন, তবরেজের সঠিক চিকিৎসার পুলিশকে অনুরোধ করলেও লাভ হয়নি। এমনকী, তাঁর সঙ্গে কাউকে দেখাও করতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বহু আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন, এই অভিযোগও করা হয়েছে। তাঁকে দিয়ে জোর করে ‘জয় শ্রী রাম' ও ‘জয় হনুমান' বলানো হয় বলেও অভিযোগ জানিয়েছে তাঁর পরিবার। পরিবারের তরফ থেকে এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের (পুলিশ ও চিকিৎসক সহ) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে।
'একাই লড়বে বিএসপি' জোটে নেই মায়াবতী, টুইটে অখিলেশদের প্রতি ক্ষোভ উগরোলেন নেত্রী
শাহিস্তা পরভিন, তবরিজের স্ত্রী দাবি করেছেন, ‘‘ওকে নির্দয়ের মতো মারা হয়েছে কারণ ও মুসলিম। আমার কেউ নেই। কোনও শ্বশুর-শাশুড়িও নেই। আমি কী করে বাঁচব? আমার ন্যায়বিচার চাই।''
দেশজুড়ে তৈরি হওয়া ক্ষোভের পরে পুলিশ ত্রুটির কথা মেনে নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করেছে। দুই আধিকারিক চন্দ্রমোহন ওরাও ও বিপিন বিহারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনাটির গুরুত্ব না তুলে ধরা ও একই দিনে আরও একটি গণধোলাইয়ের কেস রেজিস্টার করা।
এই ঘটনায় ক্ষোভের প্রকাশ দেশ জুড়ে। ঝাড়খণ্ডের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, গণপিটুনিকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে না ফেলাই ভালো। মন্ত্রী সিপি সিংহ বলেন, ‘‘এটাই এখন ট্রেন্ড। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে বিজেপি, আরএসএস, ভিএইচপি ও বজরং দলকে যুক্ত করা। এটা ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট'-এর যুগ।''
হায়দরাবাদের রাজনীতিক তথা সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এই ঘটনাকে নিয়ে টুইট করে জানান, ‘‘সব রকমের গণহত্যাই দেখা যাচ্ছে। প্রথমে এক মুসমিলকে গো-প্রেমীরা হত্যা করল। এরপর শুরু হল সবচেয়ে হাস্যকর অজুহাত, গোমাংস ভক্ষণ, চুরি, চোরাচালান ও লাভ জিহাদ। ‘সব কা বিকাশ'-এর জন্য আমরা ‘সন্দেহভাজন' হিসেবে খুন হয়ে যেতে পারি।''
FactChecker.in ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, তবরেজ আনসারির উপরে হওয়া আক্রমণের ঘটনা এ বছরে ঘটা এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ১১ নম্বর। ৫৯ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, আক্রান্ত একজন মুসলিম ও ২৮ শতাংশ ক্ষেত্রে গরু-সংক্রান্ত ইস্যু থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত।