মহারাষ্ট্রে অনেক গ্রাম এবং শহর জলে ডুবে গেছে
মুম্বই: খরার পর বন্যা (flood)। বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র (Maharashtra)। রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলি বিশেষ করে বন্যার জেরে ক্ষতির মুখে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। যার ফলে বন্যার জল ক্রমশ বাড়ছে। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) প্রায় ১লক্ষ ৩২ হাজার দুর্গত মানুষকে উঁচু জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তারই মধ্যে উদ্ধারকাজ চলার সময় গত বুধবার সাঙ্গলি জলাশয়ে ঘটে নৌকাডুবির (Boat Capsizes) ঘটনা। এতে ১৪ জনের প্রাণ গিয়েছে। যার ফলে বন্যার আতঙ্ক কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে। চলতি বছরেই মহারাষ্টের (Maharashtra) বিধানসভা ভোট। ঘর গুছোতে শুরু করে দিযেছে সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু, বন্যার জেরে তা ধাক্কা খেয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ (Devendra Fadnavis) এক মাসব্যাপী প্রচার কর্মসূচি "মহা জন আকাশ যাত্রা" বাতিল ঘোষণা করেন। বদলে রাজ্যমন্ত্রিসভার অভিজ্ঞ একনাথ শিন্ডে, রামদাস কদম, গিরিশ মহাজন এবং চন্দ্রকান্ত পাটিলদের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন তিনি। এর আগে মুম্বাইতে এই সংক্রান্ত একটি সভা করেছিলেন তিনি। এদিন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলির একটি রিপোর্ট জমা পড়ার কথা রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-য়ের রিপোর্ট অনুযায়ী বৃষ্টি ও বন্যায় পশ্চিম মহারাষ্ট্রে (Maharashtra) গত সাত দিনে ১৬ জনের মৃত্যুর হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির জেরে মহারাষ্ট্রের কায়না বাঁধ থেকে জল ছাড়েছে রাজ্য। যার ফলে ক্ষতি হতে পারে কর্ণাটকের। ইতিমধ্যেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা (BS Yediyurappa) এবিষয়ে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে কথা বলেছেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়ে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা (BS Yediyurappa) মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। এছাড়া টেলিফোনে বিষয়টি সমাধানের জন্য কথা বলেছেন। ইয়েদুরাপ্পা বেলাগাভি, বিজয়পুরা, রায়চুর, কালবুর্গী এবং যাদগীর জেলাগুলির অবস্থা নিযে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কোলাপুরের পরিস্থিতি ঠিক করতে আলমতি বাঁধ (Almatti Dam) থেকে জল ছাড়তে অনুরোধ করা হয়।
মহারাষ্টের (Maharashtra) মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, "প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমাদের বেশি করে জল ছাড়তে হচ্ছে। নাসিক থেকে যে পরিমান জল ছাডা় হয়েছে তা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কোয়না বা উজনি বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পরিমান বিগত পঞ্চাশ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। তাঁর সংযোজন, "গত চার মাসে যে পরিমান বৃষ্টি হওযার কথা ছিল তা থেকে বেশি বৃষ্টি গত ১৫ দিন ধরে হচ্ছে। তাই এই বন্যা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন এনডিআরএফ, সেনা, নৌ ও বায়ু সেনার সাহায্য নিয়েছে।"
সরকারি হিসাব বলছে, সাঙ্গলি (Sangli) ও কোলাপুর (Kolhapur) জেলায় যথাক্রমে ৫৩ এবং ৫১ হাজার লোককে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বন্যায় সোলাপুরের মন্দির শহরটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইটে ঘোষণা করেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সাহায্য আড়াই ও পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ ও ১৫ হাজার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বায়ু সেনার ও এনডিআরএফ-এর বেশ কয়েকটি দল দু'টি জেলায় উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। দ্রুত পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে এনডিআরএফের আরও ছয়টি দলকে বিমানে নিয়ে আসা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে নৌবাহিনীর চৌদ্দটি দলকে বন্যাকবলিত কোলাপুর ও সাঙ্গলি জেলায় পাঠানো হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে এখনও পর্যন্ত, পুনে জেলায়, ১৩০০ জনেরও বেশি দুর্গতকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান (Prithviraj Chavan) নিজের বন্যাকবলিত জেলা করাদে উদ্ধার কাজে তদারকি করছেন ও ত্রাণ শিবিরের আয়োজন করেছেন। করছেন।
মহারাষ্টের বিভিন্ন বাঁধ যেসব এলাকায় রযেছে সেখানে আগামী তিন, চার দিন আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওযা দফতর জানিয়েছে। ফলে সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। বর্তমানে ৩৪২ টি সেতু জলের তলায় রযেছে। দুর্ঘটনা রোধে প্রায় ৩০টি রাজ্য সড়ক এবং ৫৬টি সড়ক বন্ধ রয়েছে। মুম্বই-বেঙ্গালুরু জাতীয় সড়কের বহু জায়গা জলের তলায়।
মহারাষ্টের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পিছনে ফড়নবিশ সরকারের কাজ না করার মানসিকতাকে দায়ী করেছেন বিরোধী এনসিপি নেতা শরদ পাওযায়। তিনি বলেছেন, " মুখ্যমন্ত্রী তদকরি করতে ব্যর্থ। তাই এই পরিস্থিতির উদ্ভব হযেছে।" অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যার জেরে ক্ষতিগ্রস্থ কোলাপুর জেলায় শুক্রবার সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে।