গতমাসে জমাটোর রাইডার “অ-হিন্দু” হওয়ায় অর্ডার বাতিল করেছিলেন মধ্যপ্রদেশের এক ব্যক্তি
কলকাতা: গরু ও শুয়োরের মাংস ডেলিভারি করতে অসম্মত কলকাতার জমাটোর রাইডাররা, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। শহরের রাস্তায় “জমাটোর দাদাগিরি চলবে না”, স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে সামিল হলেন অ্যাপ ও ওয়েব নির্ভর এই খাবার ডেলিভারি করা সংস্থার কর্মীরা। ধর্মঘটে সামিল হওয়া কর্মীরা জানিয়েছেন, হিন্দু এজেন্টরা গোমাংস বহন করতে অস্বস্তি বোধ করছেন, অন্যদিকে, মুসলিম রাইডাররা জানিয়েছেন, শুয়োরের মাংসের খাবার ডেলিভারি করবেন না তাঁরা। মউসিন আখতার নামে জমাটোর এক কর্মী সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, “আমাদের দাবি মানছে না সংস্থা, এবং আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে গরু ও শুয়োরের মাংস ডেলিভারি করানো হচ্ছে। গোমাংস ডেলিভারি করা নিয়ে হিন্দুদের সমস্যা রয়েছে, মুসলিমরা শুয়োরের মাংস ডেলিভারি করতে চান না। কোনও অবস্থাতেই আমরা এই ধরণের সামগ্রি বহন করব না। এই ধরণের কাজ করতে আমাদের জোর করা হচ্ছে”।
সংস্থার আরেক কর্মী বলেন, “আমাদের ধর্মীয় আবেগ নিয়ে খেলছে তারা। আমাদের, হিন্দুদের বলা হচ্ছে গোমাংস বহন করতে, আগামিদিনে, আমাদের মুসলিম ভাইদের বলা হবে, শুয়োরের মাংস ডেলিভারি করতে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়”।
রাজ্যে ব্যাপকভাবে মেরুকরণের প্রভাব পড়েছে, এবং তা বেড়েছে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের আবহে, এবারের নির্বাচনে বাংলায় ভাল ফল করেছে বিজেপি।
গোমাংস দেশের অন্যতম একটি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠেছে, ২০১৭-এ বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দেশজুড়ে গো-হত্যা বন্ধ করার ঘোষণা করলে বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে উঠে। গো-রক্ষায় বিশ্বাস করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এবং গোরুর মাংস খাওয়ার বিরোধিতা করে তারা।
জোমাটোয় খাবার বাতিল করা গ্রাহককে সতর্কবার্তা পুলিশের
গো-হত্যা নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে “অগণতান্ত্রিক” এবং “অসাংবিধানিক” বসে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কয়েকটি রাজ্যে গোহত্যা এবং গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ নয়, তারমধ্যে একটি পশ্চিমবঙ্গ।
এপ্রিল-মে তে লোকসভা নির্বাচনের আবহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির সংঘাত চরমে পৌঁছায়। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া ২টি আসন থেকে বেড়ে বঙ্গে ১৮টি আসনে পাপড়ি মেলে পদ্ম। ২০২১ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার থাকবে না বলে দাবি করে গেরুয়া শিবির।
হুমকি ফোন এবং মেসেজের জন্য, জুনে কলকাতায় বিফ ফেস্টিভ্যাল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন, উদ্যোক্তারা।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকেই, বিক্রি, পরিবহন গো-মাংস খাওয়ার অভিযোগে, গো-রক্ষকদের সঙ্গে মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।
খাবার পৌঁছে দেবেন মুসলিম ব্যক্তি, তাই বাতিল অর্ডার! পালটা জবাবে মন জিতল জোমাটো!
মে মাসে, গোমাংস বহন করার অভিযোগে মধ্যপ্রদেশে এক মহিলাকে মারধর করা হয়। অসমে, এক মুসলিম গোমাংস বিক্রেতাকে জোর করে শুয়োরের মাংস খাওয়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এক ব্যক্তিকে।
কয়েক সপ্তাহ আগে, জমাটোর রাইডার “অ-হিন্দু” হওয়ায়, অর্ডার দেওয়া খাবার বাতিল করে দেন মধ্যপ্রদেশের এক ব্যক্তি। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যপক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁকে সতর্ক করে দেয় পুলিশ।
(ANI এর তথ্য সংযোজিত হয়েছে)