কলকাতা: ঋতু হিসেবে এখন ঘোর বর্ষা (Monsoon)। এর মধ্যেই কালো মেঘের স্তূপ সরিয়ে দিব্য উঁকি দিচ্ছে ঝকঝকে নীল আকাশ। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির ফাঁকেই বর্ষা ভেজা রোদে ঝলমলিয়ে হাসছে শহরের বুকে ঔদ্ধত্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা স্কাইস্ক্র্যাপারগুলো। আর এসবের মধ্যেই আজ বারেবারে বাঙালির চোখ চলে যাচ্ছে ক্যালেন্ডারের পাতায়।রথের রশিতে টান পড়তেই ঢাকে পড়ল প্রথম কাঠি। আসছে বাঙালির বারো মাসের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja)। সেই কারণেই, রথের রশি, রথের বাঁশি, তেলেভাজা-পাঁপড় ভাজার গন্ধ ছাপিয়ে যেন নাকে এসে লাগছে শিউলির বাস, দু্গ্গা মায়ের গায়ের মাটির গন্ধ।
যদিও আপনার-আমার কাছে এই তিনটে মাস অ-নে-ক। তবে শহরের বেশির ভাগ বনেদি বাড়িতে রথের দিনেই কিন্তু রীতি মেনে কাঠামো পুজো (Making Of Durga Idol) শুরু হয়ে যায়। পুরোহিত মশাইয়ের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে। কলকাতার দেব বাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ি, মল্লিক বাড়ি, উত্তর কলকাতার চোর বাগানের চ্যাটার্জি বাড়ি, দাঁ বাড়ি, লাহা বাড়ি, শ্রীমানী বাড়িতে তাই রথের দিন থেকেই যেন বচ্ছরান্তে মেয়েকে বাড়িতে আনার তোড়জোড় শুরু। আগামী মাস থেকে শুরু হয়ে যাবে নামি-দামি বারোয়ারি পুজোর খুঁটিপুজোও। যদিও অনেক বারোয়ারি পুজোর প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।
রথের দিন কাঠামো পুজোর পর সেই কাঠামোয় খড় দিয়ে প্রাথমিক আদল আনা হবে দেবী, তাঁর বাহন এবং চার ছেলেমেয়ে লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশের। এরপর খড়ের ওপর পড়বে মাটির প্রলেপ। একপ্রস্থ মাটি শুকোনোর পর আরও এক পোচ মাটি দেওয়া হবে মৃন্ময়ী মূর্তিতে। তারপর তাতে রঙ, সজ্জা এবং শেষে গর্জন তেলের চিকমিক। কলকাতার কুমোরপাড়ায় পা রাখলেই দেখবেন, মাস দুই আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি। আগামী তিনটে মাস নাওয়া-খাওয়ার সময় পাবেন না কুমোরটুলির মৃৎ শিল্পীরা। যদিও আজকাল সারা বছরই তাঁরা ব্যস্ত থাকেন প্রতিমা গড়ার কাজে। কারণ, এখন শুধুই মাটির প্রতিমা হয় না। প্রতিমা তৈরি হয় কাগজ, শোলা, প্লাইউড, সেরামিক, থার্মোকলের, প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে। এই প্রতিমা অবশ্য বিদেশে পাড়ি জমায়। ইতিমধ্যেই অনেক শিল্পী প্রতিমা গড়ে রওনা করে দিয়েছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
এভাবেই একটা করে দিন এগোবে আর প্রতিবছরের মতো বাঙালি মহল্লা একটু একটু করে ব্যস্ত হয়ে পড়বে আগমনির আবাহনে। বারবধূদের উঠোন থেকে মাটি এনে সেই মাটির ছোঁয়ায় খড়ের প্রতিমা ধরা দেবে মাটির প্রতিমায়। একটা বছরের প্রতীক্ষার পর মেয়ের বাবার বাড়িতে আসার আনন্দে সম্বৎসরের যাবতীয় দুঃখ সরিয়ে রেখে বাঙালি আবারও মেতে উঠবে চারটে দিন। পুজোর আনন্দে। রথের দিন যেন সেই মহাযজ্ঞের প্রথম আহুতির দিন।