Rohingya Rally: বাংলাদেশের কক্সবাজারের প্রায় ৩৬ টি শরণার্থী শিবিরে এখন প্রায় দশ লক্ষ শরণার্থী বাস করেন
কুতুপালং: Rohingya Rally in Bangladesh camp: শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় ব্যর্থ চেষ্টার মাত্র কয়েকদিন পরই মায়ানমার বাহিনীর হিংসার মুখে পড়ে বাস্তুভিটে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দু'বছর আগেকার সেই দিনের স্মরণে প্রায় দুই লক্ষ রোহিঙ্গা পা মেলালেন মিছিলে! রবিবার বাংলাদেশের একটি শিবিরেই বিশাল জমায়েত হয়েছিল এই উদ্বাস্তু মানুষদের। ২০১৭ সালের অগাস্টের নৃশংস হামলার পরে প্রায় ৭৪০,০০০ মুসলিম সংখ্যালঘু মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের প্রায় ৩৬ টি শরণার্থী শিবিরে এখন প্রায় দশ লক্ষ শরণার্থী বাস করেন। রবিবার, শিশু, হিজাবে মাথা ঢাকা মহিলা এবং লুঙ্গি পরণে পুরুষদের দীর্ঘ মিছিলের সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ। “ঈশ্বর মহান, রোহিঙ্গারা দীর্ঘজীবী হোক” বলে স্লোগান তুলে এই মানুষরা ‘গণহত্যা দিবস' পালন করতেই বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের কেন্দ্রে অগ্রসর হন। গনগনে রোদ্দুরে হাজার হাজার মানুষ “পৃথিবী রোহিঙ্গাদের দুঃখ শোনে না” গানে গলা মিলিয়ে হাঁটেন দীর্ঘ পথ।
অক্টোবরে ভারত সফরে হাসিনা, আলোচনায় আগ্রাধিকার পাবে তিস্তা চুক্তি ও রোহিঙ্গা ইস্যু
“আমি আমার দুই ছেলের হত্যার বিচার পেতে এখানে এসেছি। আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বিচার চাইব,” কান্নাভেজা গলায় চিৎকার করে বলেন ৫০ বছর বয়সী তায়বা খাতুন। মায়ানমার জানিয়েছে যে পুলিশ স্টেশনে হামলা করা চরমপন্থী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের অগাস্টে পুলিশ পাল্টা অভিযান পরিচালনা করে। রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘুরা দেশেই ফিরতে চেয়েছিল, তবে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পরে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং তাদের গ্রামে ফিরে যেতে দেওয়া হয়েছিল।
“আমরা বার্মিজ সরকারকে মুখোমুখি আলোচনার জন্য বলেছি। তবে আমরা এখনও তাদের কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি। রাখাইনে আমাদের মারধর করা হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল এবং ধর্ষণ করা হয়েছিল। তবে ও দেশ তো এখনও আমাদের বাড়ি এবং আমরা বাসায় ফিরে যেতে চাই,” সমাবেশে বলেন উল্লাহ। বিভিন্ন সহায়ক সংস্থা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলির রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করে এবং “হ্যাঁ রোহিঙ্গা... বাঙালি নয়” প্ল্যাকার্ড তোলে! মায়ানমার এই গোষ্ঠীর জাতিগত পরিচয় অস্বীকার করার জন্য, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বাসিন্দা প্রমাণ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে দীর্ঘকাল।
অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিক,রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সম্মতি সুপ্রিম কোর্টের
হিংসায় প্রাণ হারানো স্বজনদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করার সময় শরণার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। “নাগরিকত্ব এবং রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে মুখোমুখি কথা” বলার অনুরোধ জানিয়ে মায়ানমার সরকারের উদ্দেশে বড় ব্যানারও প্রস্তুত করেছিলেন তাঁরা। পুলিশ কর্মকর্তা জাকির হাসান এএফপিকে জানিয়েছেন, প্রায় ২০০,০০০ রোহিঙ্গা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ে ৬০০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রধান আবুল মনসুর এএফপিকে বলেন, “যে কোনও হিংসা ঠেকাতে কয়েকশ পুলিশ, সেনা ও সীমান্তরক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।"
বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা প্রায় ৩০০ পরিবারের সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের কেউই মায়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হননি। কারণ সেখানে তাদের আশঙ্কা তাদের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য বিশেষ শিবিরে রাখা হবে।