This Article is From Oct 10, 2018

“আফগানিস্তানে হিজাব পরে ফুটবল খেলে মেয়েরা, আমরা কেন পারব না!”-খেলার অধিকার অর্জনে সুরাইয়ারা

স্মিতা জানান, এতদিন সালোয়ার কামিজের উপর জার্সি পরে, তার উপর ওড়না জড়িয়ে খেলত মেয়েরা। আজ বাড়ির দাদা, বা ভাইদের থেকে হাফপ্যান্ট চেয়ে এনে, তার উপর জার্সি পরে মেয়েদের খেলতে দেখছেন গ্রামবাসীরা।

“আফগানিস্তানে হিজাব পরে ফুটবল খেলে মেয়েরা, আমরা কেন পারব না!”-খেলার অধিকার অর্জনে সুরাইয়ারা

রূপান্তরন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হোক কাবাডি প্রতিযোগিতা

জয়নগর:

“মাঠে সবার সামনে কাবাডি খেললে কেউ তোকে বিয়ে করবে না।”

এই একটা কথা, বা এরকম অনেক কথাই জয়নগরের গ্রামের প্রতিটা গৃহস্থ বাড়ির অন্দরকাহিনী। এখানে পিতৃতন্ত্রই শেষ কথা, এখানে এখনও 15/16 বছরে বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাই মেয়েদের ভবিতব্য, এখানে এখনও বাইরের খেলার মাঠ ছেলেদের, এখনও মেয়েদের জন্য হিজাবই শেষ কথা। তবু এই শেষ কথার বাইরে গিয়ে নতুন গল্প লিখছে দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগর 1 নম্বর ব্লকের পুনপুয়া গ্রামের মেয়েরা। এই লড়াই বোরখা খুলে মাঠে নেমে স্বতস্ফূর্ত বাঁচার লড়াই। সম্প্রতি এই গ্রামেরই মেয়েদের নিয়ে ‘হোক কাবাডি’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল রূপান্তরন ফাউন্ডেশন।

এমনই এক নতুন গল্প লেখকের নাম সুরাইয়া শেখ। মঙ্গলবার কবাডি প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ান দলের খেলোয়াড় সুরাইয়া বলে, “যখন প্রথম কাবাডির ট্রেনিং শুরু হয় আমি ভাবিইনি খেলতে পারব। হিজাব পরে কী আর খেলাধুলো করা যায়? তারপর জানলাম আফগানিস্থানে মেয়েরা হিজাব পরে ফুটবল খেলে, আমরা কেন পারব না!” বাধা আসে বাড়ি থেকেই। যে গ্রামে বয়ঃসন্ধি এলেই মেয়েদের বিয়েটাই একমাত্র কাজ সেখানে বাড়ির মেয়ে মাঠে ছেলেদের সামনে কাবাডি খেলবে এমন আস্পর্ধা ক্ষমনীয় নয়। তবু চেষ্টা চলে। সবুজ সংকেত আসে বাবার থেকেই। লীগের খেলার প্রথম দিনেই হেরে যায় সুরাইয়ারা। মন খারাপ কাটিয়ে ফের নামে রোজের প্র্যাক্টিসে। “পরের ম্যাচে অনেক বেশি পয়েন্টে জিতি আমরা। আমি সেদিন হিজাব খুলে খেলতে নামি, হিজাব পরে ভালো করে খেলতে পারছিলাম না। কখনও ভাবিনি আমার গ্রামে এমনটা আমি করতে পারব! খেলায় জিতি বা না জিতি নিজের কাছে সেদিন জিতে গেছিলাম” জানায় 17 বছরের সুরাইয়া।

4d3imqeg

ম্যাচ জেতার পরে সুরাইয়া

কোনও এক অলিখিত কারণে খেলার মাঠেও এখানে প্রবেশ নিষেধ মেয়েদের, ঘরের খেলা মেয়েদের জন্য, বাইরের কাজ ছেলেদের। সেখানে এমন একটা পরিবর্তনের প্রতিযোগিতা করা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। রূপান্তরনের পক্ষ থেকে স্মিতা সেন জানান, “ এই গ্রামগুলোতে মেয়েদের খেলার জায়গা বলতে বাড়ির উঠোন। সেখানে জাঙালিয়া, হরিনারায়ণপুরের মতো গ্রামের মেয়েরা এই বস্তাপচা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে খেলতে নেমেছে। এই প্রতিযোগিতা নিছক খেলা নয়, নিজেদের গ্রামে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইও।” শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। কেউই ছেলেদের সামনে খেলতে রাজি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে লিঙ্গবৈষম্য, খেলার অধিকার এসব নিয়ে আলোচনা করার পরেই নয়টি গ্রামের একশো জনেরও বেশি মেয়ে জীবনে প্রথম কাবাডি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। স্মিতা জানান, এতদিন সালোয়ার কামিজের উপর জার্সি পরে, তার উপর ওড়না জড়িয়ে খেলত মেয়েরা। আজ বাড়ির দাদা, বা ভাইদের থেকে হাফপ্যান্ট চেয়ে এনে, তার উপর জার্সি পরে মেয়েদের খেলতে দেখছেন গ্রামবাসীরা। ভ্রান্ত লিঙ্গবৈষম্য ছেড়ে আস্তে আস্তে নিজেদের অধিকারের কথা নিজেরাই বলছে সুরাইয়ারা। বলবেই অন্য মেয়েরাও।  

4pgcrnmg

হোক কাবাডি

.