গোটা বিশ্বের খবরের শিরোনামে রয়েছে করোনা ভাইরাস
হাইলাইটস
- গোটা বিশ্বের খবরের শিরোনামে রয়েছে করোনাভাইরাস
- চিনের ওয়াহান প্রদেশে এই ভাইরাসের খবর প্রথম পাওয়া যায়
- এই ভাইরাস আসলে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই চরিত্রে
কলকাতা: এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের খবরের শিরোনামে রয়েছে করোনা ভাইরাস। কিন্তু কী এই করোনাভাইরাস (Coronavirus)। কতটা ক্ষতিকর এই ভাইরাস? করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই কি নির্ঘাত মৃত্যু? এই আতঙ্কে এই মুহূর্তে তোলপাড় হচ্ছে বিশ্ব। চিনের উহান প্রদেশে এই ভাইরাসের খবর প্রথম পাওয়া যায়। আক্রান্তের সংখ্যাও চিনেই সবথেকে বেশি। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে এই মারণ ভাইরাস। এই ভাইরাস আসলে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই চরিত্রের। সেভাবে আলাদা করে বোঝার উপায় শুরুতেই এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে নেই। সার্স আর মার্স ভাইরাসের থাবায় তোলপাড় হয় বিশ্ব। আক্রান্ত হয়েছিলেন বহু বহু মানুষ। প্রাণও হারিয়েছিলেন বহু। তাদেরই গোত্রের এই ভাইরাস। মিউটেশনের মাধ্যমে এই ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। তাতেই তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাস যা এই মুহূর্তে তাবড় তাবড় দেশকে রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ভারতের দু' এক জায়গায় কিছু মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসেই যে তাদের মৃত্যু হয়েছে সেই খবর নিশ্চিত হয়নি। তবুও বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে, বলছেন চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী (Amitabha Nandy)। কলকাতাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে তবে সেটা করোনা ভাইরাসেই আক্রান্ত হয়েই কিনা এখনও নিশ্চিত নয়।
কীভাবে পার্থক্য করবেন করোনাভাইরাস আর সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার?
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী (Dr Amitabha Nandy) বলছেন, সেভাবে আলাদা করার উপায় এক্ষেত্রে নেই, তবে হ্যাঁ বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা যেতেই পারে। এই ভাইরাসটি পশুর দেহেই প্রথম বাসা বেঁধেছিল তারপর তা এখন মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে। তারপর মানুষের দেহে প্রবেশ করে, মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস।
কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে?
সাধারণ সর্দি-কাশি হলেও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মুখে নাকে হাত দেওয়া চলবে না। হাঁচি পেলে বা কাশি পেলে টিস্যু, রুমালের ব্যবহার করুন। কিছুই না থাকলে মুখ ঢেকে হাঁচুন এবং তারপর হাত ধুয়ে ফেলুন। বলছেন ডঃ অমিতাভ নন্দী। যেহেতু এটি নতুন চরিত্রের ভাইরাস সেক্ষেত্রে এর কোন ভ্যাকসিনও এখনও পর্যন্ত বেরোয়নি। এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই । তবে এই ধরনের ভাইরাসের ক্ষেত্রে যে চরিত্র আগে দেখা গেছে, তাতে এই রোগ নিজে নিজেই সেরে যায়।
সাধারণত যেটা দেখা যায় যে এই ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যাদের সেই সমস্ত মানুষকে আক্রমণ করে বেশি। তাই সে ভাবে যদি দেখা যায় তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে সাধারণ মানুষের চিন্তিত হওয়ার খুব একটা কারণ নেই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। হাঁচি, সর্দি, কাশি এই ধরনের জিনিস পুষে রাখবেন না। চিকিৎসকের কাছে যান। কী ঘটেছিল, কয়েকদিনের মধ্যে কারও সংস্পর্শে এসেছিলেন কিনা এই সমস্ত বিষয় চিকিৎসকের কাছে খুলে বলুন। আর পরিছন্নতা ভীষণ রকম ভাবেই বজায় রাখতে হবে।
যদি ধরে নেওয়া যায় যে একবার এই রোগে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন তাহলে তাকে একেবারে আলাদা করে রাখতে হবে। তার সমস্ত কিছুই আলাদা রাখতে হবে, যাতে আর অন্য কারোর তার থেকে রোগ না ছড়ায়। ডঃ অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন চিনে যারা আক্রান্ত হয়েছেন এখনও পর্যন্ত যতটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে তাদের কিন্তু কারোরই পুরনো রোগের কোন ইতিহাস নেই বা বলা যেতে পারে যে তারা সুস্থ-সবল মানুষই ছিলেন। সেক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের চরিত্র বা এই ভাইরাসটি কাদের ওপর বেশি আক্রমণ করছে এটি বলা মুশকিল।
আমরা কতটা প্রস্তুত করোনা মোকাবিলায় :
এই রাজ্য করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য কতটা তৈরি? ডঃ অমিতাভ নন্দী বলেছেন যে এই ধরনের ভাইরাসের ক্ষেত্রে একেবারে আইসোলেশন ওয়ার্ড দরকার হয় এবং যিনি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সেই রোগীর জন্য বিশেষ বিছানা, সেই ঘরের বাতাস যাতে বাইরে না যায় বা পরিশুদ্ধ হয়ে যায় তার ব্যবস্থা রাখা, এয়ার পিউরিফায়ার রাখা, সঙ্গে এই ধরণের রোগীর সমস্ত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বিশেষ যন্ত্রপাতি বা শুধুমাত্র তার জন্যই যন্ত্রপাতি, জিনিসপত্র বরাদ্দ করার মত পরিকাঠামো এ রাজ্যে এখনও নেই। সবশেষে ডঃ অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন যে এই রোগে আক্রান্ত হলেই যে মানুষ মারা যাচ্ছেন বিষয়টা একেবারেই তা নয়। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করেই এই রোগকে দূরে রাখা যায়।
এই সাক্ষাৎকারটি NDTV Bangla র তরফ থেকে নিয়েছেন রেনেসাঁ চক্রবর্তী। ভিডিও সাক্ষাৎকারটি দেখুন নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে।