বাংলার পর বাংলাদেশে বুলবুল
ঢাকা: যদিও তার গতিমুখ বাংলাদেশের দিকেই। তবু এখনও পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুরোপুরি সরেনি বুলবুল (cyclone)। তার আগেই ঝড়ের দাপটে কাঁপছে পড়শি দেশ। খবর, সাইক্লোন বাংলাদেশের (Bangladesh) দিকে মুখ ফেরাতেই রবিবার সকালে বড়সড় ধস নেমেছে উপকূলীয় অঞ্চলে। গৃহহীন হয়েছেন কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দা। জীবনহানি রুখতে শনিবার সন্ধেয় উপকূলীয় অঞ্চল থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১.৮ লক্ষ মানুষকে, জানিয়েছেন সেদেশের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী এনামুর রহমান।
'Bulbul'-এর ঝাপটায় ডুবন্ত জাহাজের ৭৫ যাত্রীকে উদ্ধার প্রশাসনের': মুখ্যমন্ত্রী মমতা
ঝড়ের দাপটে গৃহহীনদের আশ্রয় দিতে ৫ হাজার শরণার্থী শিবির তৈরি করা হয়েছে শনিবার সকালে, জানা গেছে এমনটাই। শনিবার সারাদিন ঘণ্টায় ১২০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে বাংলাদেশে। খবর, পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর শক্তি হারিয়ে তুলনায় দুর্বল বুলবুল। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে সেই পরাক্রমী শক্তি আরও কমবে বলেই পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। সাগর দ্বীপে আছড়ে পড়ার পর সুন্দরবনের উপকূল ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম খুলনা দিয়ে সাইক্লোন ঢুকেছে বাংলাদেশে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলিতে সাধারণ জোয়ারের জল বইবে স্বাভাবিক জলস্তরের চেয়ে দেড় থেকে দু-মিটার উঁচু দিয়ে। ফলে, প্লাবনের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে সেখানে।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিপর্যয় মোকাবিলা করতে ইতিমধ্যেই তৈরি বাংলাদেশ নৌবাহিনি এবং উপকূলরক্ষী বাহিনির বেশ কয়েকটি জাহাজ। বুলবুল প্রসঙ্গে মার্কিন আবহাওয়া দফতর অ্যাকুওয়েদার ইনক এর মত, বৃহস্পতিবার সকালে বুলবুল গভীর নিম্নচাপ থেকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এবং শুক্রবার বিকেলে তা তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আকার নেয়। এটি আটলান্টিকের একাধিক হারিকেন ঝড়ের সমতুল্য।
বুলবুলের তাণ্ডবে গাছ উপড়ে রাস্তায়! গর্ভবতী মহিলাকে উদ্ধার দমকল কর্মীদের
এদিকে বুলবুল-কে রুখতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরেই শনিবার ১৩ টি উপকূলীয় জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। শনিবার দিনভর স্বেচ্ছাসেবকের একাধিক দল চট্টগ্রাম সহ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে সবাইকে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন লাউড স্পিকারে, জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রক। কক্সবাজার জেলার পর্যটকদের হোটেল থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, কয়েক শতাধিক পর্যটক আটকে পড়েছেন সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে।
একই সঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রামসহ দেশের সমস্ত প্রধান সমুদ্রবন্দর। এর প্রভাব পড়েছে আমতানি-রফতানি শিল্পে। কারণ, এই বন্দরগুলি দিয়েই বাংলাদেশের রফতানি ও আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশ পরিচালিত হয়। বন্ধ সমস্ত জাহাজ এবং মাছ ধরার নৌকা চলাচলও। স্থানীয় স্কুলবাড়ি এবং মসজিদগুলিকে আপাত আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রসঙ্গত, নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর বহুবার বয়ে গেছে বুলবুলের মতোই অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়। বহুবার বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। জীবনহানিও হয়েছে অসংখ্য। প্রাণহানি রুখতে তাই গত কয়েক দশক ধরে সেখানে বানানো হয়েছে কংক্রিটের বহু ঘরবাড়ি, ভবন।