ধর্ষণের আগে হুইস্কি খাইয়ে বেঁহুশ!
হায়দ্রাবাদ: "ছক কষেছিল আগেই। সেইমতো বুধবার রাতে ধর্ষণের আগে (Before Raping) জোর করে যুবতীকে হুইস্কি (Whiskey) খাওয়ায় অপরাধীরা। যাতে আক্রান্তের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা না থাকে"--- সদ্য সদ্য তেলেঙ্গানায় ঘটে যাওয়া আরও এক 'নির্ভয়া কাণ্ড'র তদন্তে নেমে NDTV-কে এমনটাই জানাল সেখানকার প্রশাসন। তারপরে ২৬ বছরের যুবতীকে ধর্ষণ করে চার ধর্ষক। অঘটনের দিন সন্ধেয় একটি টোল প্লাজার সামনে স্কুটির টায়ার পাংচার হয়েছিল তাঁর। তখনই সেই টায়ার সারিয়ে দেওয়ার অজুহাতে যুবতীর কাছে এসেছিল মহম্মদ আরিফ, জলু শিভা, জলু নবীন ও চিন্তাকুন্তা চেন্নাকেসাভুলু। ঘড়িতে তখন রাত ৯.১৫। পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে গণধর্ষণ করে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ওই পশু চিকিৎসককে, জানা গেছে প্রাথমিক তদন্তে। নিজের দূরবস্থার কথা জানিয়ে ৯.২২-এ বোনকে শেষ ফোন করেছিলেন গণধর্ষিতা। তারপরেই তিনি চিরকালের জন্য স্তব্ধ।
তেলেঙ্গানায় পশু চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ, বরখাস্ত ৩ পুলিশ
পুলিশের দাবি, চার অপরাধীই নারায়ণপোতের বাসিন্দা। এলাকাটি হায়দ্রাবাদ থেকে ১৬০ কিমি দূরে। ওরা লরি চালক ও খালাসি হিসেবে কাজ করত। প্রত্যেকের বয়স ২০-২৬ বছরের মধ্যে। ঘটনার পর এফআইআর নিতে অস্বীকার করার অভিযোগে তিন পুলিশকর্মীকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে অপরাধের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের গ্রেফতার করে তেলেঙ্গানা পুলিশ। সম্ভবত ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে তাদের বিচার হবে।
অভিযুক্তদের বয়ান অনুযায়ী, আন্দাজ সন্ধে সোয়া ছ-টা নাগাদ স্কুটি পার্কিং লটে গাড়ি রেখে ট্যাক্সি ধরে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান ওই যুবতী। তখনই তাঁর স্কুটির একটি চাকার টায়ার পাংচার করে দেয় অপরাধীদের একজন। আন্দাজ সোয়া না-টা নাগাদ পশু চিকিৎসক পার্কিং লটে ফিরে দেখেন তাঁর স্কুটির টায়ার পাংচার হয়ে গেছে। তিনি কাউকে ডাকার আগেই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ওই চার অভিযুক্ত। ঘিরে ধরে তাঁকে। জোর করে টেনে নিয়ে যায় পাশের ঝোপে। অসহায় যুবতী বাঁচার জন্য চিৎকার করতে থাকলে তাঁকে থামাতে এবং বেহুঁশ করতে জোর করে মুখে হুইস্কি ঢেলে তারা। ধর্ষণের আগে চারজনই হুইস্কি খাচ্ছিল বলে জানা গেছে।
এক ঘণ্টার মধ্যেই গণধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে পশু চিকিৎসককে, জানাচ্ছে পুলিশ
এরপরেই তারা নগ্ন করে যুবতীকে। নগ্ন হয় নিজেরাও। বেহুঁশ হওয়ার আগে পর্যন্ত লাগাতার ধর্ষণ করতে থাকে যুবতীকে। একসময় প্রবল রক্তপাত শুরু হলে ক্ষান্ত দেয় তারা। যেই আস্তে আস্তে হুঁশ ফিরতে থাকে যুবতীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে কম্বলে মুড়ে নগ্ন যুবতীকে তারা নিয়ে যায় একটি ব্রিজের নীচে। সেখানে রেখে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় রাত আড়াইটে।
আরও জানা গেছে, অভিযুক্ত ট্রাক চালকের গাড়ির কোনও লাইসেন্সই ছিল না গত দু-বছর ধরে। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মাত্র একদিন আগে প্রশাসন তাকে আটক করেছিল। কিন্তু ট্রাকটির একটি বিশেষ তার সরিয়ে ফেলায় গাড়িটিকে আটক করা যায়নি।
‘‘উনি বোনকে ফোন করেছিলেন, ১০০-তে নয়'': তেলেঙ্গানার ধর্ষিতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী
এই ঘটনায় অনেক রাজনীতিবিদও শোকপ্রকাশ করেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি টুইট করেন, "কীভাবে কেউ এইরকম ভয়ঙ্কর হিংসার শিকার হতে পারেন তা কল্পনার বাইরে। আমার সহমর্মিতা মৃতার পরিবারের সঙ্গে রয়েছে", শনিবার টুইট করেন তিনি। শনিবার মৃত নিগৃহীতার হায়দরাবাদের বাসভবনে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তেলেঙ্গান রাজ্যপাল তামিলিসই সৌন্দরারাজন। সেখানে গিয়ে তিনি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শোকপ্রকাশও করেন। এর আগে জাতীয় মহিলা কমিশনের একটি দল গিয়েও মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।