পরিচালক অরিন্দমকে সম্মান করি, মানুষ অরিন্দমকে নয়: রূপাঞ্জনা
কলকাতা: ''আমি ‘একা মা'। ছেলে তখন আরও ছোট। তাকে মানুষের দায়িত্ব আমার। সংসার প্রতিপালনেরও। এবং পুরোটাই ভদ্র উপায়ে। তাই অরিন্দম শীলের অসংযত আচরণের কথা বন্ধু, পরিবার, আত্মীয়দের জানানোর পরেও মুখ খুলতে পারিনি প্রকাশ্যে। প্রধান কারণ, চ্যানেলের সঙ্গে তখন চুক্তিবদ্ধ। অন্যটি, কাজের বিনিময়ে নিয়মিত পারিশ্রমিক পাচ্ছিলাম। যা আমার সন্তান মানুষের জন্য জরুরি। সঙ্গে সঙ্গে হয়ত প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। কিন্তু আপোশও করিনি। তার খেসারতও দিতে হয়েছে। হঠাৎই দেখলাম, পোস্টার থেকে আমার ছবি বাদ পড়ল। ধারাবাহিকের শুরুতে আমার অভিনীত বেশ কিছু দৃশ্যও বাদ গেল। জানিয়েছিলাম চ্যানেলকে। এটাও বুঝেছিলাম, পরিচালকের মন রাখতে না পারার শাস্তি পাচ্ছি। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমি তো নতুন নই!''--- শনিবার রূপাঞ্জনা মিত্র-Arindam Sil-এর পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ওপর আলোকপাত করতে NDTV কথা বলেছিল পরিচালকের সঙ্গে। পরে এই বিষয় নিয়ে মুখ খোলেন Rupanjana Mitraও। কেন তিনি চুপ ছিলেন তখন? উত্তরে কারণ হিসেবে অভিনেত্রী জানান ওপরে বলা কথা। একই সঙ্গে প্রশ্নও করেন, একজন মেয়ে, একজন মা তাঁর জায়গায় থাকলে সেদিন কী করতেন?
#metoo: ‘রূপাঞ্জনাকে নিয়ে কথা বলার প্রবৃত্তি নেই', অরিন্দম শীল
ঠিক কী ঘটেছিল সেই সময় রূপাঞ্জনার সঙ্গে? অভিনেত্রীর কথায়, ‘'একটি জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেল আমায় ‘ভূমিকন্যা' ধারাবাহিকে কাজের জন্য বেছে নেয়। আমাকে বলা হয়েছিল পরিচালক অরিন্দম শীলের সঙ্গে কথা বলতে। সেই অনুযায়ী আমি তাঁর অফিসে গেছিলাম পুজোর ঠিক আগে গিয়ে। সেদিন দ্বিতীয়া কি তৃতীয়া। প্রথমে ভেবেছিলাম ছেলেকে নিয়েই যাব। তারপর ভাবলাম অফিসিয়াল কাজে পরিবারকে আনা ঠিক নয়। তাই একাই বিকেল পাঁচটার সময় অফিসে গিয়ে দেখি, মাত্র একজন কর্মচারী আর অরিন্দম শীল। গোটা অফিস ফাঁকা। আমার কেমন যেন অস্বস্তি করল। ঘরে ঢুকতেই পরিচালক উঠে দাঁড়িয়ে ভীষণ আন্তরিক ভঙ্গিতে ডেকে বসালেন। আমি ওঁর আর ওঁর স্ত্রীর জন্য দু'টি কফি মগ নিয়ে গেছিলাম। হাসিমুখে নিলেন। জানালেন, ধারাবাহিকে কৌশিক সেনের স্ত্রী-র ভূমিকায় আমায় ভেবেছেন। এসব বলতে বলতেই, অবশিষ্ট একজন কর্মচারীকেও সরিয়ে দিলেন অফিস থেকে। আমার অস্বস্তি বাড়ল। তারপরেই দ্রুত বদলে গেল তাঁর চোখের ভাষা। কথায়, ইশারায় তিনি যেন কিছু বোঝাতে চেষ্টা করলেন। হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার পিঠে-মাথায় এমন ভাবে হাত ছোঁয়ালেন যেন আমি ছোট বাচ্চা! অস্বস্তি থেকে বাঁচতে আমি তখন ঈশ্বরকে ডাকছি। একসময় জোর করে সাহস ফিরিয়ে এনে বলি, স্ক্রিপ্টটা শুনব এবার। সঙ্গে সঙ্গে অরিন্দমদা চেয়ারে ফিরে গেলেন। এমন সময় ওঁর স্ত্রী সেখানে আসায় আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু তিনিও আমাদের দু'জনকে একসঙ্গে অফিসে দেখে অদ্ভুত ভাবে তাকালেন। তখনই পরিচালক পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক। তিনজনে একসঙ্গে বসে চিত্রনাট্য শুনেছিলাম সেদিন।''
পরিচালকের বয়ান অনুযায়ী পরের দিনই নাকি রূপাঞ্জনা হোয়াটস অ্যাপ করেন অরিন্দমকে। কাজের আগে ওয়ার্কশপের ইচ্ছেও প্রকাশ করেন। এটা ঠিক? সঙ্গে সঙ্গে কেন প্রতিবাদ জানিয়ে সব ঘটনা বলেননি চ্যানেলকে? প্রশ্ন রাখতেই অভিনেত্রীর যুক্তি, ''কী করে চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করি? তাছাড়া, ঘটনায় এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে, কাছের মানুষদের জানালেও সবার সামনে মুখ খুলতে পারিনি। লজ্জা, ভয়, অস্বস্তি একসঙ্গে মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল আমার। তাছাড়া, কাজটাও করতে হবে। আর বললেই কি সবাই সেদিন বিশ্বাস করতেন আমার কথা? হ্যাঁ, তারপরেও কাজের সূত্রে কথা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ বিনিময় হয়েছে। 'মিতিন মাসি' ছবির প্রিমিয়ারে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন অরিন্দমদা। কাজ শেষ হওয়ার পর আমি কিন্তু আর ওঁর মুখোমুখি হইনি।''
‘কোন গোপনে মন পুড়েছে' ঋতাভরীর? ফাঁস সোশ্যালে
দু'বছর পর কেন মুখ খুললেন রূপাঞ্জনা? ঘটনা প্রকাশ্যে আনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে? কীভাবে সাহস সঞ্চয় করলেন? সব জানার পর কী প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন সবার থেকে? অকপট স্বীকারোক্তি অভিনেত্রীর, 'গত দু'বছরে একটু একটু করে সাহস সঞ্চয় করেছি। মনে হয়েছে, আগামী প্রজন্মকে সাবধান করা দরকার। যাঁরা নতুন আসছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে, তাঁদের চিনে রাখা প্রয়োজন এই সমস্ত মুখোশধারী মানুষদের। তাই মুখ খুলেছি। কোনও পরিবেশ বা পরিস্থিতির কারণে নয়। অরিন্দম শীলের নামে বদনাম নতুন নয়। এর আগে আমারই এক সহকর্মী ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন। আমার খবর প্রকাশ্যে আসার পর বহু মহিলা ফোন করেছেন। পুরুষের থেকে ফোন কল পেয়েছি একটাই। ছোট-বড় দুই পর্দাকেই বিদায় জানিয়েছি আমি। বলতে পারেন সেটাও আমায় মুখ খোলার সাহস জুগিয়েছে। এখনও পরিচালক অরিন্দম শীলের কাজকে সম্মান করি। কিন্তু মানুষ অরিন্দম শীলকে নয়। তাই ভবিষ্যতে আবারও অভিনয়ে ফিরলে অন্য পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করব। কিন্তু অরিন্দম শীলের সঙ্গে কখনোই নয়।'