বছর দুয়েক আগেই যদি তাকান দেখবেন দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রের রঙ প্রায় গেরুয়াই, কেননা দেশের বেশিরভাগ রাজ্যেই নিজেদের জয়ের পতাকা লাগাতে সক্ষম হয় বিজেপি। কিন্তু সব শুরুরই যেমন একটা শেষ থাকে, ঠিক সেভাবেই যদি আবার ২০১৯ সালের একেবারে শেষের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন ক্রমশই যেন রাজ্যগুলিতে শক্তিক্ষয় হচ্ছে মোদি-অমিত শাহের দলটির (BJP)। মহারাষ্ট্রের পর সোমবার ঝাড়খণ্ড বিধানসভাও (Jharkhand Assembly Election) হাতছাড়া হল ওই দলের। জেএমএম, কংগ্রেস এবং আরজেডি-র জোটের কাছে মাথা নত করতে হল তাঁদের। অথচ মনে করা হয়েছিল যে ঝাড়খণ্ডে খুব সহজেই জয় হাসিল করবে পদ্ম বাহিনী। কিন্তু না, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যা ৪১-এর ধারেকাছেও যেতে পারল না তাঁরা। মাত্র ২৫টি আসনে জয়লাভ করলো বিজেপি, ২০১৪ সালের ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে পাওয়া আসন থেকে ১২টি আসন কম পেল এবার। সেখানে কংগ্রেস-জেএমএম-আরজেডি জোট ৪৭ টি আসনে জয় পেল, গতবারের তুলনায় ২২টি আসন বেশি পেল তাঁরা। এই ফলের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরে বিরোধীদের জয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা বলেন যে জনগণের এই আদেশ মাথা পেতে নিচ্ছেন তাঁরা।
ঝাড়খণ্ডে বিজেপিকে হারাল জেএমএম-কংগ্রেস, শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর: ১০টি তথ্য
সাত মাস আগে, ২০১৪ সালের চেয়ে বিজেপি আরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরেছিল। তখনই কেউ কেউ দাবি করেন যে, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডেও খুব সহজেই ক্ষমতা ধরে রাখবে গেরুয়া দল। কিন্তু সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু হয় না।
এর আগে রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ এবং ছত্তিসগড়ের কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করায় বেশ খানিকটা চিন্তায় পড়ে যায় বিজেপি। তার উপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা যেন মহারাষ্ট্রের ঘটনা। বহুদিনের বন্ধু শিবসেনার সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে মহারাষ্ট্রে জয় পাওয়ার পরেও সরকার গড়তে ব্যর্থ হয় মোদি-অমিত শাহের দলটি। হরিয়ানাতেও প্রায় একই পথে চলেছিল, তবে শেষ মুহূর্তে দুষ্মন্ত চৌতালার সমর্থন নিয়ে কোনওরকমে গদি বাঁচায় বিজেপি।
বাঘের বাচ্চা বাঘই হবে, বিজেপির পরিবারতন্ত্রের খোঁচার জবাব দিলেন হেমন্ত
দেখা যাচ্ছে চলতি বছরে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ক্রমশই শক্তি ক্ষয় হয়েছে গেরুয়া দলের। মহারাষ্ট্রে যেখানে তাঁরা ২০১৪ সালে পেয়েছিল ১২২টি আসন, সেখানে এ বছর তা কমে দাঁড়ায় ১০৫টি আসনে। আবার হরিয়ানায় আগের বারের তুলনায় ৭টি আসন কম পায় তাঁরা এবং ঝাড়খণ্ডে হাতছাড়া করে ১২ টি আসন।
ওদিকে যদি বিজেপির বিরোধী শক্তি কংগ্রেসের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে ক্রমশই রাজ্যগুলিতে হাতের দল বলবান হয়ে উঠছে। মহারাষ্ট্রে ৪২ থেকে ৪৪ এ চলে এসেছে তাঁরা, হরিয়ানায় ১৬ টি অতিরিক্ত আসনে জিতেছে এবং ঝাড়খণ্ডে ৬ থেকে বেড়ে ১৬টি আসন হয়েছে কংগ্রেসের।
এই ফলাফলগুলি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে যে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে তা বলাই যায়।
দেখুন এই ভিডিও: