গণনার দিন, একজন গোলাপি রঙের জামা পরা লোককে অবিশ্বাস্য তৎপরতার সঙ্গে ব্যালট পেপারে ছাপ দিতে দেখা গিয়েছিল
কলকাতা:
বাংলার একটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের ফলাফলকে তামাশায় পরিণত করার অন্যতম নিখুঁত প্রচেষ্টাটি বুমেরাং হয়ে গেল। একজন নির্দল প্রার্থী তৃণমূলের স্থানীয় হেভিওয়েট নেতাকে নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জে হারিয়ে দিলেন। কৃষ্ণগঞ্জ হল সেই স্থান, যেখানকার একটি ভোটগণনা কেন্রে গত বৃহস্পতিবার, গণনার দিন, একজন গোলাপি রঙের জামা পরা লোককে অবিশ্বাস্য তৎপরতার সঙ্গে ব্যালট পেপারে ছাপ দিতে দেখা গিয়েছিল একটি ভাইরাল ভিডিওতে।
ভিডিওটি নিয়ে সমস্ত অভিযোগকে তৃণমূল নেতৃত্ব উড়িয়ে দিলেও, রাজ্যের নির্বাচন কমিশন অত সহজে ব্যাপারটিকে উড়িয়ে দিতে পারেনি। ঘটনাটি সম্বন্ধে তথ্যসংগ্রহ করেছিল তারা, পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিল এবং গণনা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। দুজন গ্রেফতার হওয়ার পর- যদিও, তাদের মধ্যে ওই গোলাপি শার্ট ছিল না- আবার নতুন করে গণনার কাজ শুরু হয় এবং গভীর রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নির্দল প্রার্থী নীলাদ্রি সুকুল বিজয়ীর শংসাপত্র হাতে নিয়ে শুক্রবার সকালে যখন বাড়ি ফেরেন, তিনি নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
“ওরা আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছিল নানাভাবে। কিন্তু পারেনি। এটা সত্যের জয়। মানুষের বিচার আমি পেয়েছি এবং আমি খুশি”। বলেন 35 বছরের নীলাদ্রি সুকুল। যাঁকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের একটি অংশ সিপিএম সমর্থন জানিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে মাজদিয়া সুধীররঞ্জন লাহিড়ি কলেজে যখন পুরোদমে গণনা চলছিল, হঠাৎ বাইরে থেকে কয়েকটা পেটো মারা হয় এবং একদল দুষ্কৃতি হড়মুড় করে গণনাকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে পড়ে। গণনাকেন্দ্র ঘিরে থাকা বিদ্যুতের তার কেটে ফেলে তারা। তারপরই শুরু হয় তান্ডব। গোলাপি রঙের জামা পরা ব্যালট বক্স তুলে নিয়ে তার ভিতর থেকে সমস্ত ব্যালট পেপার বের করে সঙ্গে করে নিয়ে আসা কালির প্যাড ও স্ট্যাম্প-এর সাহায্যে ছাপ্পা মারতে শুরু করে দেয়।
প্রথমে গণনাকেন্দ্রে থাকা পোল অফিসাররা বুঝতে পারেননি যে, সে কী করছে। কিন্তু নীলাদ্রী সুকুল বুঝতে পেরেছিলেন। ওই সময়ে তিনি তৃণমূল প্রার্থীর থেকে এগিয়ে ছিলেন 220 ভোটে। দুর্বৃত্তরা এটাকেই বদলাতে এসেছিলেন।কীভাবে? গোলাপি জামা পরা মানুষটি তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে ছাপ্পা দিচ্ছিলেন না ব্যালট পেপারে। তিনি ছাপ্পা দিচ্ছিলেন নির্দল প্রার্থীর পক্ষেই। গণনার সময় দু’বার ছাপ্পা দেখলে ব্যালট পেপারটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং নির্দল প্রার্থীর ভোট কমতে থাকবে।
নীলাদ্রি সুকুল এটা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁকে মারধোর করে গণনাকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়।
24 ঘন্টা পেরিয়ে গিয়েছে ঘটনার পর। এখনও ওই গোলাপি জামা অধরা।“আমাকে যদি কিছুটা নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে খুব ভালো হয়”। বলেন সুকুল।
শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতে জিতেছেন তিনি। ওখানে 13টি আসনের মধ্যে 7টি তৃণমূলের আর 5টি বিজেপির। সুকুল একা। কাজ করা যে খুব সহজ হবে না, তা তিনি নিজেও জানেন।