ভারতের ৭৬ জন জওয়ান জখম হয়ে চিকিৎসাধীন। (ফাইল)
নয়াদিল্লি: গালওয়ান সংঘাতে লাল ফৌজের হাতে আটক ১০ জওয়ান ফিরে এসেছেন ভারতীয় শিবিরে। এই ১০ জনের মধ্যে ৪ জন সেনা আধিকারিক। সোমবার পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় হওয়া এই সংঘাতে ২০ জওয়ান শহিদ হয়েছেন, ৫০-এর বেশি জওয়ান জখম হয়ে চিকিৎসাধীন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর চিনের তরফে হতাহত প্রায় ৪৫। সেই ঘটনার পর থেকেই দ্বিপাক্ষিকস্তরে মেজর জেনারেল স্তরের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের প্রস্তাবনা মেনে ছাড়া হয়েছে সেই ১০ ভারতীয় জওয়ানকে। এমনটাই সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছিল, সেদিনের সংঘাতে ভারতীয় তরফে কোনও জওয়ান নিখোঁজ নেই। প্রত্যেকেই শিবিরে ফিরেছেন। জানা গিয়েছে, কমবেশি ৭৬ জন জওয়ান জখম হয়ে চিকিৎসাধীন। সূত্রের খবর, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা ফের কাজে যোগ দিতে পারবেন। এদিকে, চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, ""আমরা কোনও ভারতীয় জওয়ানকে আটকে রাখেনি।" সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি।
এদিকে, সোমবার সন্ধেবেলা লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনার যে সংঘর্ষ বাঁধে তাতে শুধু যে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান মারা গেছেন তাই নয়, আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৭৬ জন। ভারতীয় সেনা আধিকারিকরাই NDTV-কে জানিয়েছেন একথা। তবে আশার কথা এটাই যে, ওই আহত জওয়ানদের শারীরিক অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল এখন। সীমান্ত সংঘর্ষের সময় আহত সেনাদের মধ্যে ১৮ জন লে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, বাকি ৫৬ জনের চিকিৎসা চলছে অন্যান্য হাসপাতালে। তবে তাঁরা যেভাবে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন তাতে আশা করা হচ্ছে যে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগ দিতে পারবেন তাঁরা, জানিয়েছেন এক সেনা আধিকারিক।
লাদাখ সীমান্তে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের ঘটনায় মেজর জেনারেল স্তরে ফের আলোচনা
কিছুদিন ধরেই ভারত-চিন সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দানা বাঁধছিল। সীমান্তের সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি প্রশমিত করতেই বৈঠক করে ভারত ও চিন। ৬ জুনের সামরিক স্তরের সেই বৈঠকের পর চিন সেনার অধিগৃহীত জমি থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার কথা ছিল। সেই কাজ খতিয়ে দেখতে শহিদ কর্নেল বিএল সন্তোষ বাবুর নেতৃত্বে এলাকা পরিদর্শনে বেরোয় ভারতীয় বাহিনী। তাঁর সঙ্গে ছিল প্রায় ১০০ জন জওয়ান। এর পরেই তাঁরা ১৫,০০০ ফুট উচ্চতায় গালোয়ান উপত্যকা এলাকা গিয়ে দেখে সেখানে দিব্যি তাঁবুতে ঘাঁটি গেড়ে বসে লালফৌজ। তাঁদের বের করে সেই তাঁবু ভাঙতে শুরু করে ভারতীয় বাহিনী। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় কিছু তাঁবুতে। এতেই বিপদ বুঝে কাঠের তক্তা, লোহার রড, কাটা তার জড়ানো বাটাম-সহ আরও বাহিনী জড়ো হয় গালোয়ান এলাকায় । শুরু হয় দু'পক্ষের হাতাহাতি ও সংঘর্ষ।
লাদাখে আমাদের বীর জওয়ানদের বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়ী কে? প্রশ্ন রাহুল গান্ধির
এদিকে সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে যে, ক্ষতি এড়াতে পারেনি চিনও। ওই সংঘর্ষে সেদেশে হতাহত কমপক্ষে ৪৫ জন জওয়ান। যদিও চিনের সেনা সূত্র থেকে এব্যাপারে কোনও নিশ্চিত বিবৃতি মেলেনি।
গোটা ঘটনার জন্যে চিন ভারতীয় সেনাদের অসহিষ্ণু আচরণকে কাঠগড়ায় তুললেও ভারতের তরফ থেকে এই সংঘর্ষের জন্যে চিনকেই দায়ী করা হয়েছে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, "সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণই করে এসেছে ভারত ৷ ওই এলাকায় যে কার্যকলাপ করা হয়েছে, তার সবটাই ভারতীয় এলাকার মধ্যে করা হয়েছে ৷ চিনের থেকেও আমরা একইরকম ব্যবহারের আশা রাখি আমরা ৷ ভারত সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা এবং যে কোনও সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাসী ৷ তবে একই সঙ্গে ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা বজায় রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে"।