International Dog Day 2019:মানুষ যখন কুকুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে, তখন উভয় প্রজাতিরই অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়
কলকাতা: International Dog Day 2019: প্রতি বছরই ২৬ অগাস্ট দিনটি পালিত হয় মানুষের সেরা বন্ধু হিসাবে বিবেচিত সারমেয়দের জন্যই। আন্তর্জাতিক কুকুর দিবস হিসেবে এই দিনটি মূলত কুকুর ও তাদের মানব বন্ধুদের মধ্যেকার অদ্ভুত ভরসা ও ভালোবাসার উদযাপনের উদ্দেশেই পালিত। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, পোষা প্রাণির প্রতি মানুষের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াগুলির একটি বৃহৎ উত্সই আসে অক্সিটোসিন হরমোন থেকে। এটি এমন একটি হরমোন যা সামাজিক বন্ধন, নিশ্চিন্তিবোধ এবং আস্থা এবং উত্তেজনা প্রশমনে কাজে আসে। সায়েন্সডাইরেক্টে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে প্রমাণিত হয়েছে যে মানুষ যখন কুকুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে, তখন উভয় প্রজাতিরই অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। জার্নাল অফ পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোস্যাল সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যে বাড়িতে পোষা প্রাণি থাকলে তাদের মালিকরা অন্যদের থেকে বেশি স্ব-সম্মান বোধ সম্পন্ন হন এবং শারীরিকভাবে আরও ফিট হন। শুধু কী সামাজিক জীবন, বিনোদনে কোনও ভূমিকা নেই সারমেয়কূলের? বলিউডে একটা সময় পর্যন্ত নায়কের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবেই দেখা যেত কুকুরকে। এই বিশেষ দিনে দেখে নেওয়া যাক ভারতীয় সিনেমার বিখ্যাত কিছু সারমেয় শিল্পীকে।
কুকুরকে স্নান করাচ্ছে শিম্পাঞ্জি! এমন বিরল দৃশ্য কোনোদিন দেখেছেন?
১. মুকাবলায় গানবোট (১৯৪২)
বম্বাইওয়ালি (১৯৪১) এবং মুকাবলা (১৯৪২) দুই সিনেমাতেই চমত্কার উপস্থিতি ছিল জার্মান শেপার্ড গানবোটের। মুকাবলা সম্ভবত হিন্দি সিনেমার প্রথম হারিয়ে যাওয়া ও ফিরে পাওয়ার গল্প। নাদিয়া যমজ বোন মাধুরী ও রানির চরিত্রে অভিনয় করেন, এবং গানবোট মাধুরীর বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসাবে অভিনয় করে। অ্যাকশন সিক্যুয়েন্সের সময় এই কুকুরের দুরন্ত পারফর্ম্যান্স নজর কেড়েছে সকলের। একটি লড়াইয়ের সময় গানবোট মাধুরীকে আক্রমণকারীর থেকে রিভলবারটি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। এখানেই শেষ নয়! গানবোট স্বাস্থ্য সচেতন এবং ধূমপান তার তীব্র অপছন্দের বিষয়!
২. চাচা ভাতিজা সিনেমায় নামহীন সারমেয় (১৯৭৭)
শঙ্কর (মাস্টার সত্যজিৎ) তার দাদা, বৌদি এবং পোষ্য সারমেয়কে নিয়ে সুখী জীবনযাপন করে। ভুল বোঝাবুঝির কারণে বৌয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় শঙ্করের দাদার। তখন শঙ্কর তার কুকুরের সঙ্গেই বেশি করে সময় কাটাতে থাকে। শঙ্করের নতুন বৌদি সনিয়া বেশ লোভী। পরিবারের ধনসম্পদের ভাগাভাগি থেকে শঙ্করকে বাদ দিতে চান তিনি। এই সারমেয়ই তার প্রচেষ্টাটিকে ব্যর্থ করে দেয়। যদিও পরে এই সারমেয়কে গুলি করে হত্যা করে শঙ্করের বৌদি। শোকগ্রস্ত শঙ্কর একা ঘরভাঙা এই বিশ্বে নিজের জীবন বাঁচতে শুরু করে।
৩. বেতাব সিনেমায় বুজো (১৯৮৩)
বেতাব দরিদ্র যুবক এবং ধনী কন্যার প্রেমের গল্প এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে কুকুর বুজো। সানি দেওলের সেরা বন্ধু এই আদুরে ল্যাব্রাডর কাজ করা, খেলা, সাঁতার কাটা সবেতেই সানির ছায়ার মতো। যখন ভিলেন সানিকে আক্রমণ করে এবং সানিকে তাঁর প্রেমিকা রোমার থেকে আলাদা করে দেয় তখন বুজোই সাহায্যের জন্য ডাকে এবং আহত বন্ধুকে বাঁচায়। পরে, রোমার কাছে সানির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যও বুজো শত্রু শিবিরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রোমার অপহরণকারীদের সঙ্গে তার লড়াই হয় এবং গুলিবিদ্ধ বুজো।
৪. তেরি মেহেরবানিয়া সিনেমায় মোতি (১৯৮৫)
ছোট্ট কুকুরছানা মোতিকে রাম বাবু (জ্যাকি শ্রফ) উদ্ধার করেন এবং মোতিই তাঁর সেরা বন্ধু হয়ে বেড়ে ওঠে। গ্রামের মেয়ে বিজলীর প্রেমে পড়েন রামবাবু। দুর্নীতিবাজ ঠাকুর ও তার সঙ্গোপাঙ্গরা রামকে হত্যা করে, বিজলীও আত্মহত্যা করে। শোকবিধ্বস্ত মোতিই তাঁদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নেয়।
৫. মর্দ সিনেমায় মোতি (১৯৮৫)
মনমোহন দেশাইয়ের মর্দ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পটভূমিতে স্বাধীনতা, বন্ধুত্ব এবং পারিবারিক বন্ধনের এক রোমাঞ্চকর কাহিনী। সাহসী টাঙ্গাচালক রাজু (অমিতাভ বচ্চন) নির্মম ঔপনিবেশিক শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে তার চমত্কার চারপেয়ে সঙ্গী হল বাদল নামের ঘোড়া এবং কুকুর মোতি। ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের অনুমতি নেই' এমন জায়গায় গিয়ে ব্রিটিশ সাইমনের লেখার উপর মূত্রত্যাগ করে প্রতিবাদও জানায় মোতি।
৬. হাম আপকে হ্যায় কৌন সিনেমায় টফি (১৯৯৪)
বলিউডে কুকুরদের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইনিই, এমনি এমনি নয় কিন্তু! টফির একটি স্পন্দনশীল সামাজিক জীবন রয়েছে এই সিনেমায়। টফি ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ারিং করে, টফি গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক আলোচনায় অংশ নেয় এবং ভ্রমণসঙ্গী তো বটেই। টফি সানগ্লাস পরে, নাচতে পারে এবং দুর্দান্ত রক্ষণ দক্ষতা তো রয়েইছে। সবচেয়ে বড় কথা, টফি চাপে ভেঙে পড়ে না, শান্ত থাকে এবং তার পরিবার, বন্ধুদের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক নির্বাচনও করে দেয়।
৭. এন্টারটেইনমেন্ট সিনেমায় এন্টারটেইনমেন্ট (২০১৪)
ডায়লগটাই ছিল: “ইয়াহাকবুতর কা নাম মাসাক্কলি হো সকতি হ্যায়, জমিন পর রেহ কর ঘোড়ে কা নাম বাদল হো সকতি হ্যায়… তো ইনকা নাম এন্টারটেইনমেন্ট কিঁউ নহি হো সকতি?” এই অ্যাকশন কৌতুক বন্ধুত্ব, মমতার সিনেমায় অক্ষয় কুমার অভিনয় করেছিলেন। তাঁর হীরে ব্যবসায়ী বাবা তাঁর সমস্ত সম্পদ নিজের কুকুর এন্টারটেইনমেন্টের নামে লিখে দেন। উত্তরাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য কুকুরের থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন অক্ষয়। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী কুকুর কখন যে একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠে সেই নিয়েই আবর্তিত হয় গল্প।