কলকাতা: আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ব্র্যান্ডিং-ব্যান্ডিংয়ে ভরে যাবে অর্ধেক আকাশ। শত-সহস্র শুভেচ্ছা টুইট আকারে ঝরে পড়বে সোশাল সাইটগুলোতে। কিন্তু সেই মেয়েটার কী হবে? যে পণের দাবি মেটাতে না পেরে অবসাদগ্রস্ত বা সেই মেয়েটা? যে কাজ সেরে রাত করে বাড়ি ফিরলেও প্রতিবেশী ভ্রু কুচকে বলে কী কাজ করে বল তো এত রাতে ফেরে? কিংবা ওই মেয়েটা যার এখন ২৭ চললেও পাশের বাড়ির শান্তি কাকিমা মেয়েটার মাকে বলে ও দিদি ২৭ তো হলো বুল্টির এবার বিয়েটা দিন। এরপর তো ছেলে পাওয়া যাবে না। কিংবা সেই মেয়েটা যে বিয়ের পর বাড়ির বউ আখ্যা পায়। আর সেই মোড়কের তলে সংসার নামক ভার্চুয়াল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে তাঁর বাড়ির বাইরে বেরনোর ওপর বেড়ি পরানো হয়। আজ সেই মেয়েগুলো কি স্বাধীন হবে? কিংবা ভিড় বাস/ট্রাম/মেট্রোতো যে মেয়েটা নিত্যদিন লালসার শিকার। যে মেয়েটার পিছন, বুক, কার্ভ মাপতে একদল 'পুরুষ মানুষ' নিত্যযাত্রা করে সেই মেয়েটার কী হবে?
তাঁদের কি বলা হবে? যা সিমরন, যা জি লে আপনি জিন্দেগি। বা মেয়েছেলে তকমা কি নারীদের ঘুচবে? না জোর গলায় কেউ এ দাবি অন্তত আজ করতে পারবে না।
কোনও সিমরনই আজ একবুক শ্বাস নিতে পারবে না। সামান্য দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হলেও ঘরে ফিরবে। কারণ নারী দিবস খাতায়-কলমে; উইকিপিডিয়াতে উল্লেখ। এর বাইরে আজ কোনও স্পেশাল দিন নেই; যাঁর জন্য নারীরা স্পেশাল প্রিভিলেজ পাবে। কোনও মেয়েকে হয়তো বলা হবে আজ তোদের দিন। অর্থাৎ ডিফারেনসিয়েট করা হবে; আজ নারীদের দিন অর্থাৎ বাকি ৩৬৪ দিন ছেলেদের।
ফলে ৮ মার্চ নিয়ে এত লাফালাফির কোনও কারণ আমি অন্তত দেখছি না। সেদিনই আমি নিজে থেকে লাফালাফি করবো; যেদিন কোনও কালো মেয়ে লেকমে-র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হবে। অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া মুখ নিয়ে কোনও মেয়ে প্যান্টিনের বিজ্ঞাপন করবে। ধর্ষণের শিকার কোনও মেয়ে মুখ না ঢেকে আগের মতোই হাসিমুখে বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে। যেদিন তিন তালাক নয়, তিন কবুলই হবে কোনও নারীর অহঙ্কার। সহরকে সাথ নিকলনে মে কৌই অউরাত কো বোরখা পেহেননি কি জরুরত নেহি পড়েগি। উস দিন জিস দিন; ঋতুচক্রের সঙ্গে যুঝতে কোনও মেয়ে নির্দ্বিধায় স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারবে।
কোনও মেয়ে বাড়ির বউ না হয়ে, পরিবারের অংশ হবে। রাতে ফিরলে তাঁর মা জোর গলায় বলতে পারবে, হ্যাঁ কর্পোরেটে কাজ করে তো কাজের প্রেশার তাই একটু আধটু রাত হয়; কেন আপনার ছেলে রাত করে না? বা ছোট পোশাক পরা কোনও মেয়ে ধর্ষণের কারণ হবে না। বিছানা গরমের উপকরণ হবে না। ঠিক সেদিন আন্তর্জাতিক নারী দিবস সর্বজনীন হবে, যেদিন মেয়েদের কার্ভ, বুক, ক্লিভেজ, বডি শেপের বাইরেও একটা পরিচিতি হবে। ও আমার গার্লফ্রেন্ড নয় আমার বন্ধু-ফিলোজোফার-গাইড হবে। নারী মানে মা, দিদি বা বোন, পিসি, মাসি, ঠাকুমা-দিদিমা, মনের মানুষ; ঝগড়া করার মানুষ, পিভি সিন্ধু, সানিয়া মির্জা, ছন্দা গায়েন, মমতা-নির্মলা সীতারমণ, সুষমা স্বরাজ, ঝুলন গোস্বামী, হরমনপ্রীত কৌর, মালালা ইউসুফজাই, অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, ক্যাট উইনসলেট, হ্যালি বেরি, ওপরা উইনফ্রে, মারিয়া শারাপোভা। আরও আরও সাফল্য ও গর্বের নাম নারী।
নারী মানে সেই শহিদের অর্ধাঙ্গিনী; যে স্বামীর মৃত্যুর পর দাঁতে দাঁত চেপে সন্তান মানুষ করছে। কিংবা নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে সংসারের জোয়াল টানছেন। নারী মানে এঁরা, যাদের কোল, কাঁধ, বুকে মাথা রাখা মানে অদ্ভূত প্রশান্তি এবং ভালো লাগা। নারী মানে স্ট্রংগার দ্যান ফিয়ার। নারী মানে সস্ত্রীক অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি না, নারী অভিজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে নোবেল ভাগ করে নিলেন অর্থনীতিবিদ এস্থার ডাফলোও।
অতএব যতদিন না পর্যন্ত নারী 'মেয়েছেলে'র বাইরে বেরোচ্ছে ততদিন ৮ মার্চ আমার কাছে শুধু তারিখ; সপ্তাহের মাঝে পড়লে week days আর শেষে পড়লে week end.