This Article is From Jul 26, 2019

Exclusive: ‘শাসকদলকে আশ্বস্ত করতেই বুদ্ধিজীবীদের এই প্রতিবাদ’ কাঞ্চনা মৈত্র

বরাবর মুখের ওপর সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে অভ্যস্ত কাঞ্চনা সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে।

Exclusive: ‘শাসকদলকে আশ্বস্ত করতেই বুদ্ধিজীবীদের এই প্রতিবাদ’ কাঞ্চনা মৈত্র

Exclusive: কনুইয়ের রাজনীতিতে আমি নেই

কলকাতা:

কাঞ্চনা মৈত্র (Kanchana Maitra)। বরাবর মুখের ওপর সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে অভ্যস্ত। সেই কাঞ্চনা সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে (BJP)। নিজের মুকুটে নতুন এই পালক যোগ করলেন কিসের আশায়? শরীরে জড়িয়ে নিলেন গেরুয়া রং। কেন? একঝাঁক টেলি এবং টলি অভিনেতাদের একসঙ্গে বিজেপিতে যোগদান কি অশনিসংকেত শাসকদলকে? নাকি, ফেলে আসা সময়ের ‘ওরা-আমরা' বিভেদ নতুন করে আরও একবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে এবার রাজনীতি ছাড়িয়ে অভিনয়ের আঙিনাতেও!----অভিনেত্রীর চিন্তা-ভাবনা-মানসিকতার ছায়া এক্সক্লুসিভলি এনডিটিভি-র (NDTV) ওয়েবসাইটে। ছায়াপাতে উপালি মুখোপাধ্যায়

প্রশ্ন: অভিনয় করতে করতে হঠাৎ রাজনীতিতে। কেন?

উত্তর: গণতান্ত্রিক দেশ। ভোট দেওয়ার যেমন অধিকার আছে, তেমনি অধিকার আছে রাজনীতি করাতেও। আমি বরাবরই সমাজসচেতন। সেই সচেতনতাকে শুধু ফেসবুকে সীমাবদ্ধ না রেখে, সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে করছিল অনেকদিন ধরেই। টিম ইন্ডিয়ার মতো এখন জনগণ মেকিং ইন্ডিয়া নিয়ে ভাবছে। দেশের জন্য কিছু করতে চাইছে। সেই ইচ্ছে আমারও। তাকে পূরণ করতেই ইতিবাচক একটি রাজনৈতিক মঞ্চ বেছে নিয়েছি।

অপর্ণা সেন-দের চিঠির প্রত্যুত্তরে মোদিকে সমর্থন করে পাল্টা চিঠি কঙ্গনা রানাউত-সহ ৬১ জনের

প্রশ্ন: শাসকদলে না এসে বিজেপি-তে কেন?

উত্তর: আমার মননের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিজির চিন্তাভাবনা কোথাও মেলে। বিজেপি গোটা দেশকে সংঘবদ্ধ করে এক ছাতার নীচে এনে তাকে সুসংগঠিত করতে চায়। এই চাওয়া আমারও। তাই নিছক নিজের সুবিধে না দেখে, দেশের মঙ্গল চেয়ে গেরুয়া শিবিরে আমি। অনেকেই যদিও কটাক্ষ করেছেন, নিজের আখের গোছাতে নাকি এই দলে এলাম। তাঁদের বলি, তাই যদি হবে, তাহলে ২০১১-য় তৃণমূলেই তো যোগ দিতে পারতাম। আসলে, শাসকদলে যোগ দেওয়ার মতো একটা ভালো দিক আজ পর্যন্ত আমার চোখে অন্তত পড়েনি।

প্রশ্ন: শাসকদলের থেকে কোনোদিন ডাক পেয়েছেন?

উত্তর: না। আমিও  আগ্রহ দেখাইনি। কারণ, 'কনুইয়ের রাজনীতি' আমার দ্বারা হবে না। দেখেছি তো, মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে সবাই কনুই দিয়ে এ-ওকে ঠেলছে। কে সামনের সারিতে আগে আসতে পারবে। কে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে দুটো কথা বলতে পারবে। এসব আমার দ্বারা হবে না। তবে এবারের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। এতদিনে এই প্রথম। বোধহয় বিজেপি-তে যোগদানের খবর কানে পৌঁছেছে হাওয়ায় হাওয়ায়। আমি যদিও সবিনয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। 

প্রশ্ন: বিজেপি বরাবর শাসকদলের বিরুদ্ধে দাদাগিরি, গুণ্ডাগিরির অভিযোগ এনেছে। এখন জয় শ্রীরাম ধ্বনি না দিলে, গেরুয়া শিবির নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠালে, মুখ খুললে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এটা হুলিগালিজম বা দাদাগিরি-গুণ্ডাগিরি নয়?

উত্তর: হুমকি-ধমকি দেওয়াই তো এখন পশ্চিমবঙ্গের কালচার! নতুন কিছু নয় তো! প্রতি মুহূর্তে আমরা একে অন্যকে হুমকি দিচ্ছি।  শুধু কৌশিক সেন কেন, আমাদের কয়েকজনও তো বিজেপি যোগ দেওয়ায় হুমকি পেয়েছে সোশ্যালে। কই তাই নিয়ে তো কথা হয়নি! আগে, কৃষিজীবি, শ্রমজীবী শব্দগুলো প্রচলিত ছিল। বুদ্ধিজীবী শব্দটা যদিও গত চার-পাঁচ বছরের নতুন আমদানি। কারা এই বুদ্ধিজীবী? অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকেরা? অধ্যাপক বা শিল্পীরা নন কেন! আর এঁরা ভাটপাড়া বা কাঁকিনাড়া নিয়ে সরব হননি তো!। কেন, কাটমানি, ব্ল্যাকমানি- সারদা-নারদা-রোজভ্যালি নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের কোনও প্রতিবাদ নেই? অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করতেই সম্ভবত তাঁদের এই পদক্ষেপ। নেত্রী জয় শ্রীরাম ধ্বনি শুনে খেপে গেছিলেন বলেই কি এভাবে তাঁর পাশে থাকার ইঙ্গিত দিলেন তাঁরা? উত্তর কে দেবে!

প্রশ্ন: বিজেপি-ই বা সব ছেড়ে রামকেই কেন আঁকড়ে ধরল? দেশে তো আরও অনেক  মনীষী রয়েছেন। তাঁদের নাম নয় কেন? এই ধ্বনি যদি শুধুই ধ্বনি হয় তাহলে জোর করে কেন মুসলিমদের দিয়ে এই ধ্বনি বলানোর চেষ্টা?

উত্তর: একটা ধ্বনিতে অকারণে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে হাইলাইটেড করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু কি শুধুই মুসলিম! বৌদ্ধ, শিখ, পার্সী, জৈনরাও তো আছেন। তাঁদের না ধরে বেছে বেছে মুসলিমদের কথা! এটা পুরোটাই রাজনীতির খেলা। তারপরেও কিন্তু তথাকথিত সংখ্যালঘু, দলিত যাঁরা, তাঁরাই কিন্তু সমস্ত ভোট মোদিজিকে দিয়েছেন। অর্থাৎ, শাসকদলের এই রাজনীতিও ব্যর্থ।

প্রশ্ন: অভিনয়ের আঙিনাতেও রাজনীতির মাধ্যমে এবার আমরা-ওরা বিভেদ ঢুকছে। প্রবীণ পরিচালক স্নেহধন্য অভিনেত্রীকে সাবধান করছেন, ভুল পদক্ষেপের জন্য। সোশ্যালে তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে। এটা কি অভিপ্রেত?

উত্তর: এটাও শাসকদলের থেকেই শেখা। কী করে একজন প্রবীণ পরিচালক সবাইকে বলতে পারেন, যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁদের জ্ঞান-শিক্ষা- রাজনৈতিক চর্চা একেবারেই নেই? এনডিটিভি-র মারফত আমার তাঁর কাছে বিনীত আবেদন, সময় করে একদিন বসুন আমার সঙ্গে। কথা বলে জানুুন, আমি কতটা, কী জানি। তারপর না হয় মুর্খ ট্যাগটা লাগিয়ে দেবেন! শাসকদলে তো এমনও হয়েছে, যিনি রাজনীতির-র 'র'-ও বোঝেন না, তিনিই সাংসদ! বিজেপি কিন্তু আমাদের শেখায়নি, কারোর বিরুদ্ধে এভাবেও মুখ খুলতে। বিজেপি চায় না ইন্ডাস্ট্রির দখল নিতে। 

8a4phnug

প্রশ্ন: প্রকৃত রাজনীতিবিদের তাহলে সঠিক বায়োডেটা কী?

উত্তর: সবার আগে রাজনীতিমনস্ক হতে হবে। আর আমিত্ব, আমার স্বার্থ---এগুলোকে বাদ দিতে হবে। প্রচুর জ্ঞান থাকলেই তিনি সেরা রাজনীতিবিদ হতে পারবেন---ধারণাটা খুবই ভুল। অনেক তথাকথিত আজকের বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু উচ্চশিক্ষিত হয়েও অনেক ক্ষেত্রে চুপ থেকেছেন। মানুষের হয়ে কথা বলেননি। কারণ, তাঁরা রাজনীতিমনস্ক নন।

প্রশ্ন: দুটি লোকসভা নির্বাচনের মাঝখানে গত পাঁচবছরে রাজ্যে বিজেপি ম্যাজিক কী?

উত্তর: তৃণমূল একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী। যার মূলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদি সকালে একরকম বলেন। বিকেলেই তা বদলে যায়। এটা রাজনীতি নয়। আর বিজেপিতে সবার আগে দেশ। তারপর পার্টি আর সদস্য। এখানে সব সদস্য নিজের মতামত জানাতে পারেন। শাসকদলে দিদি-ই সব। বোধহয় এই দেখে মানুষের অরুচি এসেছে। ভোটে তাই বাংলায় বিজেপি ম্যাজিক। 

সেই বিলই পাশ হচ্ছে যা সরকারের পক্ষে ভালো, ট্যুইট বলিউডের পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের

প্রশ্ন: ঊষসী সেনগুপ্তর মতো একদিন কাঞ্চনা মৈত্রও কলকাতার রাস্তায় হেনস্থা হয়েছিলেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কাঞ্চনা কি এবার কলকাতার মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করবেন? না ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে?

উত্তর: সদ্য দলে যোগ দিয়েছি। এখন দল যা বলবে সবার আগে সেটাই করব। তবে ইন্ডাস্ট্রিকে রাজনীতিমুক্ত রাখার চেষ্টাই করব। এটুকু বলতে পারি, কাজ করতেই এসেছি। নিজের আখের গোছাতে নয়। তেমন হলে রাজনীতি নয়, মোটা মাইনের এনআরআই ছেলেকে বিয়ে করে বিদেশে গিয়ে আরামে দিন কাটাতাম। (হাসি)

   

.