This Article is From Jul 27, 2019

শুধুই ছবি বানাতে পারি, তাই ‘গোত্র’ই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা: নন্দিতা রায়

সবাই পথে নেমে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাবেন আর চুপ করে বসে থাকবে উইন্ডোজ, হয় নাকি? এবারেও ছবি দিয়ে প্রতিবাদে মুখর হলেন দুই পরিচালক নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

শুধুই ছবি বানাতে পারি, তাই ‘গোত্র’ই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা: নন্দিতা রায়

গোত্র নিয়ে আলোচনায় নন্দিতা রায়

কলকাতা:

সবাই পথে নেমে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাবেন আর চুপ করে বসে থাকবে উইন্ডোজ প্রোডাকশন (Window's Production), হয় নাকি? বরাবরেই মতো তাই এবারেও ছবি দিয়ে মৌন প্রতিবাদে মুখর হলেন সংস্থার দুই পরিচালক নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁদের আগামী ছবি ‘গোত্র' (Gotro) দিয়ে। কীভাবে? দূরভাষে দূরে বসেই ছবির খুঁটিনাটির বর্ণনা দিলেন নন্দিতা রায় (Nandita Roy)। এই প্রান্তে উপালি মুখোপাধ্যায়

প্রশ্ন: ‘কণ্ঠ'-র জনপ্রিয়তার রেশ কাটার আগেই ফের নতুন ছবি নিয়ে হাজির উইন্ডোজ প্রোডাকশন! কোনও বিশেষ কারণ?

উত্তর: দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা। সবাই ভীষণ অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। ধর্ম নিয়ে, জাত নিয়ে যেভাবে গণহত্যা, গণপিটুনি মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে, তা দেখে আর বোধহয় চুপ করে বসে থাকা যায় না। আমরা দেখেছি, যখনই কিছু বার্তা আমাদের ছবির মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করেছি সেটা দর্শক নিয়েছেন। তো, সেই জায়গা থেকে এই অস্থির সময়কে শান্ত করতেই আসছে গোত্র। জানি না, এক বছর পরে হয়ত পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ভালোও হতে পারে। তখন হয়ত এই কথা বলার আর সময় পাব না। দেরি হয়ে যাবে। এদিকে এখনকার পরিস্থিতি এই ধরনের ছবি ডিম্যান্ড করছে। তাই বছরে একটা ছবির ছক ভেঙে আমি আর শিবু এই ছবি সামনে আনার পরিকল্পনা করেছি। অনেক বুদ্ধিজীবী প্রতিবাদে পথে নামছেন। আমরা সেটা পারিনি। কিন্তু ছবি বানাতে পারি। তাই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা 'গোত্র'।

গানের জোয়ারে ভাসছে গোত্র: সোশ্যাল জুড়ে রঙ্গবতী, হিটলার মাসিমা, নীল দিগন্ত-এর দাপট

প্রশ্ন: সেখানে শিবুদা-র মা ছবির মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠলেন কী করে? খবর, তাঁকে নিয়েই নাকি গোত্র ছবির গল্প?

উত্তর: একেবারেই ঠিক। আর তাঁকে নিয়ে এই ছবির গল্প কারণ, শিবু-র মা এক অঙ্গে ভিন্ন রূপ। একদিকে তিনি ভীষণ প্রাচীনপন্থি। অন্যদিকে, তাঁর কাছে সবার আগে মানুষ সত্য। এই দুই বিপরীত মেরুর সহবাস যখন এক আধারে ঘটে তখনই তো তিনি মুখ্য চরিত্র হয়ে ওঠার যোগ্য হন, তাই না? আর ধর্ম অর্থাৎ আমরা যা ধারণ করি তার শুরু কিন্তু বাড়ির মধ্যে থেকেই। এই মা-কেও সবার বাড়িতেই দেখতে পাই আমরা। তাই বাড়ির ভেতর থেকে যদি পরধর্মসহিষ্ণুতা শেখানো যায় তবেই দেশ জুড়োবে। তাই মায়ের মাধ্যমে আমরা মানবতার কথা ছড়াতে চেয়েছি। এমন মা-ই তো ঘরে ঘরে দরকার।

প্রশ্ন: একই সঙ্গে মা-কে সামনে রেখে কোনও গল্প বললে সেটা খুব তাড়াতাড়ি মানুুষের মনকে ছুঁতে পারবে...

উত্তর: খুব ঠিক কথা। কারণ, মা-ই তো আমাদের সব। আমাদের পৃথিবী। তাই সমাজের সবার কথা বলার পর এবার আমরা আমাদের ঘরের গল্প দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চলেছি।

প্রশ্ন: মুখার্জিদার বউ ছবিতে অনুসূয়া মজুমদারের অভিনয় দেখেই কি এবারেও তাঁকেই মুখ্য চরিত্র দিলেন?

উত্তর: হান্ড্রেড পার্সেন্ট ঠিক কথা। মুখার্জিদার বউ ছবিতে অনুসূয়ার অভিনয় দেখে আমরা মুগ্ধ। তাই গোত্র করার সময় মনে হল, এই চরিত্রে ওঁকে ছাড়া আর কাউকেই মানাবে না। পার্থক্য একটাই, আগের ছবিতে উনি শাশুড়ি মা। এবার 'কৃষ্ণ' তারেক আলির 'যশোদা' মা। (হাসি)

j3sua82g

প্রশ্ন: মুক্তোধারার পর নাইজেল আকারা সাত বছর পরে আবার আপনাদের ছবিতে। কোন চিন্তাভাবনা থেকে?

উত্তর: শিবুর মায়ের পাশাপাশি আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ওঁর বাড়ির কেয়ারটেকার ছেলেটি। যাঁকে নাইজেল এনে দিয়েছিলেন। সেই ছেলেটিই ছবিতে নাইজেল আকারা। আমরা তো চরিত্র অনুযায়ী অভিনেতা বাছি। তাই আমাদের মনে হয়েছে, এই চরিত্র নাইজেল ছাড়া আর কেউ ফোটাতে পারবেন না। ফলে, সাত বছর পরে আবার নাইজেল আমাদের সঙ্গে। 

প্রশ্ন: গোত্র তৈরির আগে কী কী ওয়ার্কশপ করলেন অভিনেতাদের নিয়ে?

উত্তর: এবার আর কোনও ওয়ার্কশপ করাইনি। করানোর দরকার হয়নি। প্রত্যেকে নিজের চরিত্রের সঙ্গে একেবারে মিশে গেছিলেন প্রথম দিন থেকেই। শুধু মানালি মানে প্রাণবন্ত 'ঝুমা'কে দুটো জিনিস শিখতে বলেছিলাম। রুটি বেলতে, আর স্কুটি চালাতে। ও শিখে নিয়েছে সুন্দরভাবে। আর নাইজেল যেমন ওঁকে তেমনভাবেই আমরা উপস্থাপন করেছি।

প্রশ্ন: 'কণ্ঠ'তে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাওলি দাম, জয়া এহসানের মতো নামি তারকা। গোত্র-এ ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ। তারকা নেই। কেন? ব্যাপারটা রিস্ক হয়ে গেল না! 

উত্তর: রিস্ক তো আমরা প্রথম দিন থেকেই নিচ্ছি। ইচ্ছে-তে যখন সোহিনী দাশগুপ্ত, সমদর্শী দত্তকে নিয়েছিলাম তখন ওঁদের কে চিনত! আমরাও তো ছোটপর্দা থেকেই আসা। ফলে, আমাদের কাছে ছোটপর্দার অভিনেতারা ভীষণ দামি। আর, চরিত্র অনুযায়ী অভিনেতা বাছই আমরা। তারকা নয়।

প্রশ্ন: গোত্র-র আরও বড় চমক একসঙ্গে দুটো পেপি সং। এখন থেকেই রঙ্গবতী চালিয়ে লোকে নাচছেন! বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি লোককে এন্টারটেইনডও করবে তাহলে এই ছবি? 

উত্তর: (হেসে ফেলে) হামি-র ভুটু ভাইজানও কিন্তু পেপি সং ছিল। এবার একটু বেশিই রয়েছে। আসলে, আমরা গান ভালোবাসি। ছবিতে গানের প্রয়োজন ছিল। সুযোগ পাওয়ায় একই সঙ্গে মিউজিক্যাল ছবিও বানিয়ে ফেললাম। সোশ্যালেও দেখলাম সবাই রঙ্গবতী চালিয়ে নাচছে। ভালো লাগছে দেখে।

ত্রিধারা সম্মিলনী-র খুঁটিপুজো রঙিন ‘রঙ্গবতী'র নাচে

প্রশ্ন: রঙ্গবতী-তে সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মাসিমা হিটলার-এ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। এই ভাগাভাগি কেন? 

উত্তর: অবশ্যই সেরাটা পাব বলে। সুরজিতের মতো ফোক সং আর কেউ পারে না। তাই অনিন্দ্য নিজেই বলেছিলেন, ওঁকে দিয়ে রঙ্গবতী করাতে। অনিন্দ্য এসব ব্যাপারে খুবই উদার। আর বাকিগুলো অনিন্দ্য হামি-র মতোই দক্ষ হাতে সামলেছেন।

প্রশ্ন: শুটের সময়ের মনে রাখার মতো কোনও স্মৃতি ভাগ করবেন?

উত্তর: পুরোটাই মনে রাখার মতো। মনে হত, একটা পরিবার গোবিন্দধামে রোজ এসে, থেকে নিজেদের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তাই শুট শেষে সবার কী ভীষণ মন খারাপ। সবার মুখে একটাই কথা, পরিবারটা ভেঙে গেল!

.