শুটিংয়ে ব্যস্ত পরিচালক রাজ চক্রবর্তী
কলকাতা: পরিচালকের অনেকদিনের ক্ষোভ, শুভশ্রীকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করল না কেউ। সবাই পরিচালককেও কমার্শিয়াল ছবির পরিচালকের জঁরে সরিয়ে রেখেছে। সেই ক্ষোভেরই কি ফসল ‘পরিণীতা' (Parineeta)? নায়িকার নাম শুনে নাকি অনেক প্রযোজক ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে? ঋত্বিককে এই ছবির নায়ক বাছলেন কেন? মাস-ক্লাস এক করতে? নিজের বউকে পরিণত করতে গিয়ে কতটা খাটিয়েছে তিনি? বউ ছবির নায়িকা হলে সুবিধা-অসুবিধাই বা কী কী? ছবি নিয়ে সমস্ত কৌতূহল হাসিমুখে মেটালেন রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty)। প্রশ্নবাণে উপালি মুখোপাধ্যায়
প্রশ্ন: পরিণীতা-র গল্প নাকি শুভশ্রীর দিদি প্রথমে পড়েছিলেন?
উত্তর: একদম ঠিক। শুভ-র দিদি গল্প পড়তে ভীষণ ভালোবাসেন। আর ইদানিং ফেসবুকে অনেকে গল্প লিখছেন। তেমনই একটি গ্রুপ 'আত্মপ্রকাশ'। সেখানে 'প্রিয়াঙ্কা' পরিণীতা লিখেছিলেন। সেই গল্প শুভ-র দিদি পড়ে শুভকে বলেন। শুভ জানায় আমাকে।
প্রশ্ন: পরিণীতার গল্প আপনাকে কেন আকর্ষণ করল?
উত্তর: মিষ্টি প্রেমের গল্প বলতে বরাবরই ভালোবাসি। 'পরিণীতা'র গল্প পড়ে মনে হল, সেই উপাদান খুব সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে। পড়ার ছলে পাড়াতুতো দাদার সঙ্গে প্রেম নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই প্রেমিক আচমকা দুনিয়া থেকে মুছে গেলে কী অবস্থা হয় প্রেমিকার? কীভাবে নিজের মনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে, মৃত প্রেমিকের স্মৃতি বুকে আঁকড়ে পথ চলে সে? তারই গল্প বলবে এই ছবি। যা চেনা হয়েও যেন অচেনা। এই স্বাদ বোঝার পরেই গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিছু ঘষামাজার পর ছবির উপযোগী হয়ে ওঠে গল্প। এছাড়া, মনে হয়েছে, ঠিক মতো তুলে ধরতে পারলে দর্শকেরও ভালো লাগবে। কারণ, প্রেমের গল্প কখনোই পুরনো হয় না। আর আমি যে খুব ভুল নই সেটা ট্রেলার দেখে দর্শকের লাইকের সংখ্যা বলে দিচ্ছে (হাসি)। একই সঙ্গে আমি ছবির প্রযোজকও। ফলে, ব্যবসার দিকটাও তো মাথায় রাখতে হবে। মন বলছে, 'পরিণীতা' বাণিজ্যিক ভাবেও সফল হবে।
বাংলার ‘মেম বউ'-এর বলিউডে পা, বিনিতার র্যাপে মাতল গানের দুনিয়া
প্রশ্ন: অনেকে একথাও বলছেন, পরিণীতা-র মাধ্যমে নাকি নিজেকে নতুন ভাবে প্রমাণ করতে চাইছেন রাজ। সত্যি?
উত্তর: (হেসে ফেলে), অলরেডি আমার নামের পাশে বাণিজ্যিক ধারার ছবি করিয়ে-এর ট্যাগ তো আটকেই দেওয়া হয়েছে। যদিও এটা কাম্য নয়, ভালোও নয় ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে। বরং, কেউ যদি বলেন, রাজ ভালো ছবি বানান বা খারাপ ছবি বানান--- তাহলে বেশি খুশি হব। তবে এই মেরুকরণ করেন ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাই। নিজেদের এবং নিজেদের তথাকথিত কাছের মানুষদের সুবিধার্থে। বারবার শুনতে শুনতে কখনও খারাপ তো লাগেই।
প্রশ্ন: একই সঙ্গে নাকি শুভশ্রীকেও প্রমাণ করার তাগিদ অনুভব করেছেন? নিজের বউ বলে?
উত্তর: কাজের ক্ষেত্রে কিন্তু আমি ঘর-সংসার টেনে আনি না। একজন পরিচালক হিসেবে মনে হয়েছে, শুভশ্রীকে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। ও যেন সারাক্ষণ সেজে-গুজে পর্দায় নায়কদের পাশে ডল পুতুল। গ্ল্যামারাস নায়িকা। সাজলে সুন্দর লাগে। ভালো নাচতে জানে। শুভশ্রীর সম্বন্ধে আজও পর্যন্ত কোনও সাংবাদিক এর থেকে বেশি আর কিচ্ছু লেখেননি। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, ঠিকমতো জায়গা পেলে শুভশ্রীও খুলে খেলতে পারে। সেই জায়গা থেকেই গল্প পড়ার পর নায়িকা হিসেবে বেছেছিলাম শুভকে। আমার বউ বলে নয়। এবং বলেওছিলাম, প্রমাণ করে দেখিয়ে দাও, তুমিও পার। আর আমিও দেখিয়ে দিই, কমার্শিয়াল নয়, ভালো ছবি দর্শকদের উপহার দিতে পারি আমিও। এর জন্য শুরুতে শুভ-র নাম পর্যন্ত করতে চাইনি প্রযোজকদের কাছে। কারণ, জানতাম, প্রযোজকেরা মুখ ফেরাবেন। বলবেন, নিজের বউকে নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন রাজ। ও আর কী এমন ছবি হবে। বাস্তবেও ঘটল তাই। নায়িকার নাম শুনে মুখের ওপর না বলেছেন একাধিক প্রযোজক।
প্রশ্ন: তখনই পরিচালক প্লাস প্রযোজকের ভূমিকায় রাজ চক্রবর্তী?
উত্তর: ঠিক ধরেছেন। ব্যাপারটা তখন চ্যালেঞ্জের জায়গায় পৌঁছে গেল। জেদ ধরলাম, সবাই মুখ ফেরাচ্ছেন যখন তখন তো ছবিটা বানাতেই হবে। আর কারোর দরজায় না ঘুরে নিজেই 'পরিণীতা'র প্রযোজক হলাম। আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, রাজ চক্রবর্তী প্রোডাকশন কারোর থেকে চার আনা পয়সা না নিয়ে 'পরিণীতা' বানিয়েছে।
প্রশ্ন: নায়িকাকে কীভাবে ঘষেমেজে 'মেহুল' বানালেন পরিচালক?
উত্তর: প্রথমত, রোজ চিত্রনাট্য পড়ে শোনাতাম শুভকে। দ্বিতীয়ত, বাড়ির ওয়ার্কশপে আমি সাজতাম ছবির নায়ক বাবাইদা। শুভ মেহুল। আর বাকিদের পার্টগুলো করত আমার তিন ভাগ্নী। এভাবে দিনের পর দিন রিহার্সাল চলেছে। সোহিনী সেনগুপ্তও ক্লাস করাতেন শুভকে। কারণ, আমি বলেই নিয়েছিলাম, ঋত্বিকের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে গেলে ভালো করে নিজেকে তৈরি করে তারপর যেও। শুভ সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনেছে। সেটা ছবি দেখলেই বোঝা যাবে।
প্রশ্ন: শুভশ্রীর বিপরীতে ঋত্বিক চক্রবর্তী কি মাস-ক্লাসকে এক করতে?
উত্তর: আবারও বলছি, মাস-ক্লাস বুঝি না। ভালো ছবি বানাতে চলেছি। এই চরিত্রে ঋত্বিককে ছাড়া আর কাউকেই মানাত না। এটাও জানি, ভালো চরিত্র পেলে ঋত্বিক তাকে কোথায় তুলে নিয়ে যেতে পারেন। লোকে দেখে যাতে তৃপ্তি পায় তার জন্যেই এত আয়োজন। আর ঋত্বিক তো আমার ছবি 'লে ছক্কা'-তেও অভিনয় করেছেন!
প্রশ্ন: মিষ্টি প্রেমের ছবি মানেই তাতে মিষ্টি গান...
উত্তর: অবশ্যই। 'পরিণীতা'র সমস্ত গান অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায়ের। ওঁর সঙ্গে এই নিয়ে আমার দ্বিতীয় কাজ। যদিও গানগুলো অর্কর আগেই তৈরি ছিল। সেগুলোকে রি-অ্যারেঞ্জ করে ছবির উপযোগী করে নেওয়া হয়েছে। 'তোমাকে' বলে একটি গান শ্রেয়া ঘোষাল গেয়েছেন। বাকি দুটি গান 'সেই তুমি' আর 'তোমাকে'র মেল ভার্সান গেয়েছেন অর্ক নিজে। খুব মিষ্টি সুর। ইউ টিউবে ইতিমধ্যেই ভালো সাড়া পেয়েছে গানগুলো। দেখা যাক...।
প্রশ্ন: বউ নায়িকা হলে সুবিধে-অসুবিধে কী?
উত্তর: অসুবিধে কোথায়! পুরোটাই তো সুবিধে। একই গাড়িতে শুটিংয়ে আসতাম। নায়িকার জন্য আলাদা গাড়ি দিতে হত না। একটা খাবার দিলে দু-জনে ভাগাভাগি করে খেতাম। পয়সা বাঁচত। অন্য নায়িকা হলে যে টাকা দিতে হত তার থেকে কমেই হয়ে গেছে। শুভশ্রীর ওয়্যারড্রোব থেকেই বেশির ভাগ পোশাক এসেছে। এত সুবিধের মধ্যে সামান্য অসুবিধে, সব সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হত। না হলেই বাড়ি ফিরে বউ হয়ত বলে বসবে, সবার সামনে তুমি চিৎকার করে উঠলে! তবে এটুকু বলতে পারি, 'রাজশ্রী'-র এই নতুন জার্নি 'পরিণীতা'র মতোই মিষ্টি... (হাসি)।