গুমনামী শুটে মগ্ন সৃজিত মুখোপাধ্যায়
ছবির নাম ঘোষণার পরেও এত বিতর্ক তৈরি হয়নি, যা ছবি তৈরির শেষ মুহূর্ত থেকে শুরু হয়েছে। সত্যিই কি 'গুমনামী' (Gumnami) ছবিতে বিতর্ক তৈরির কোনও উপাদান রয়েছে? পরিচালককে ব্যক্তিগত আক্রমণের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে! কেন? ফের এই ছবিতে সৃজিত-প্রসেনজিৎ জুটি। ছবির বাণিজ্যিক স্বার্থে? পুজোয় গুমনামী-র পাশাপাশি হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে মুক্তি পাচ্ছে আরও পাঁচটি ছবি। এত ছবির ভিড়ে সৃজিতের ছবি হারিয়ে যাবে না তো?এমন আরও চুলচেরা বিশ্লেষণে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের (Srijit Mukherjee) মুখোমুখি উপালি মুখোপাধ্যায়
প্রশ্ন: শহর তপ্ত ‘গুমনামী' বিতর্কে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় কী ভীষণ টেনশনে?
উত্তর: টেনশন, উত্তেজনার চাপা আঁচ আমার মধ্যেও রয়েছে। সঙ্গে আশা, দর্শকরা আমার প্রত্যেকটা ছবির মতো 'গুমনামী'কেও ভালোবাসবেন, দেখবেন। সেই সঙ্গে এটাও বলব, নিছকই ছবি তৈরির তাগিদে এই ছবি বানাইনি। দেশের জন্য এটা আমার কাজ। ৭৪ বছর হয়ে গেল, নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের কোনও কিনারা হল না আজও। আমার তোলা প্রশ্ন যদি দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জাগায়, দেশনায়কের অন্তর্ধান রহস্যের ধোয়াঁশা সরায়, জানব আমার পরিশ্রম সার্থক।
প্রশ্ন: সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে হঠাৎ ছবি কেন? এবং সেটি পুজোর সময় মুক্তি পাচ্ছে...
উত্তর: সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে চিন্তাভাবনা অনেক দিনেরই। কথা ছিল ২৩ জানুয়ারি ছবি মুক্তি পাবে। কিন্তু ছবি তৈরিতে যে পরিমাণে খরচ হয়েছে বা ছবির পরিধি এতটাই বিস্তৃত যে মনে হল পুজোর আগে মুক্তি পেলে আমাদের পরিশ্রম কিছুটা সার্থক হবে। দর্শক দেখবেন বেশি। তাই পুজোর আগে শহরে আসছেন নেতাজি।
প্রশ্ন: সুভাষ চন্দ্র বসুকে এই ছবিতে কোন জায়গা দেখে দেখতে পাবেন দর্শক?
উত্তর: এটা এখনই বলব না। প্লিজ, সবাই তার জন্য ২ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
প্রশ্ন: নেতাজি অন্তর্ধানের তিনটি থিওরি বা তত্ত্বই তো ছবিতে সমান গুরুত্ব পেয়েছে?
উত্তর: না, তিনটি তত্ত্বকেই সমান প্রাধান্য দিইনি। বেশি প্রাধান্য দিয়েছি বিমান দুর্ঘটনা আর গুমনামী বাবাকে। অল্প জায়গা জুড়ে আছে রাশিয়ায় নেতাজিকে অত্যাচারের তথ্য। কারণ, এই তথ্য বেশি পাইনি। তবে তিনটি থিওরিই উঠে আসছে মুখার্জি কমিশনের একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম থেকে। সেদিক থেকে বলতে পারি, এই ছবির গল্প বলার স্ট্রাকচারও আমার 'এক যে ছিল রাজা'-র মতো খুবই সিম্পল।
প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায় কোন থিওরিতে বিশ্বাসী?
উত্তর: জাস্টিস মুখার্জি যখন কমিশন গড়েছিলেন তখন তাঁকে যেমন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা যায়নি, আমাকেও বোধহয় সেই প্রশ্ন করা যায় না। আমি তিনটি থিওরিকে নিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে একটি ছবি বানিয়েছি মাত্র। যে ছবি প্রশ্ন তোলে নেতাজি অন্তর্ধান নিয়ে। তাই আমার ভূমিকা এখানে নিরপেক্ষ আম্পায়রের মতোই। আম্পায়ার পক্ষপাত দুষ্ট হলে যেমন খেলার ফলাফল ভালো হয় না, তেমনি আমি কোনও একটি ধারায় বিশ্বাসী হলে ছবির গল্প বলার ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে।
প্রশ্ন: ট্রেলার বলছে, সাংবাদিক চন্দ্রচূড় ধর ছবিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর সম্বন্ধে বলবেন?
উত্তর: ছবিতে চন্দ্রচূড় ধর একজন সাংবাদিক, এটা ট্রেলারেই স্পষ্ট। উনি নেতাজিকে নিয়ে রিসার্চ করছেন। এটাই ভূমিকা। এবং আস্তে আস্তে কীভাবে চন্দ্রচূড় নেতাজিতে বুঁদ হয়েছেন সেটাও ছবিতে দেখা যাবে। তবে এখন এর বেশি আর নয়।
প্রশ্ন: সৃজিত-প্রসেনজিৎ জুটি বরাবর হিট। ব্যবসায়ী সাফল্যের নিরিখেকেই কি পুজোর আগে আবার সেই জুটি?
উত্তর: শুধু প্রসেনজিৎ কেন! পুজোর আগে সৃজিত-যীশু বা সৃজিতের সঙ্গে অন্য জুটিও হিট। নিছকই চরিত্রের প্রয়োজনে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আবার 'গুমনামী' ছবিতে। আসলে, বডি স্ট্রাকচার বা জেশ্চারও তো প্রাধান্য পায় সিনেমায়। ইন্ডাস্ট্রিতে সুভাষ চন্দ্রের মুখে সঙ্গে আর কারোর মুখের মিল খুঁজে পাইনি। সেই দিক থেকে বুম্বাদার সঙ্গে নেতাজির মুখের আদল মেলে। আর ওঁর মুখ চৌকো যাকে মেকআপ করে গোল করা যাবে। এছাড়া, নিজের ক্যারিশমার জোরেই বুম্বাদা নেতাজি। কারণ, নেতাজি একজন লার্জার দ্যান লাইফ ক্যারিশমাটিক চরিত্র।
প্রশ্ন: আপনি তো কোনও আন্তর্জাতিক তারকাকেও এই চরিত্রে বাছতে পারতেন!
উত্তর: পারতাম না। কারণ, বাংলা ছবির বাজেট আন্তর্জাতিক ছবি তো ছেড়েই দিন অন্যান্য ভারতীয় ছবির বাজেটের এক ভগ্নাংশ মাত্র। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও আন্তর্জাতিক তারকাকে বাছার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
প্রশ্ন: 'সুভাষজি' গান আর সোনু নিগমকে নিয়ে নাকি ইন্টারেস্টিং গল্প আছে?
উত্তর: হ্যাঁ। সোনু নিগমকে যখন এই গানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম তখন বলেছিলাম, আমাদের বাজেট বেশি নয়। তো সঠিক পারিশ্রমিক হয়ত দিতে পারব না। আপনি কি গাইবেন? সঙ্গে সঙ্গে সোনুজি বললেন, নেতাজির কাজ করব, এখানে পারিশ্রমিকের কথা না ওঠাই ভালো। এই নিয়ে চিন্তা করবেন না। তখনই মনে হল, ৭৪ বছর ধরে একজন দেশনায়ক সশরীরে না থেকেও কী ভীষণ ভাবে দেশের প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আজও বর্তমান!
প্রশ্ন: ছবি ঘিরে এত বিতর্ক, আপনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ, প্রাণনাশের হুমকি---এসবের প্রয়োজন ছিল? রাজ্য সরকার, প্রশাসনকে পাশে পেয়েছেন?
উত্তর: যাঁদের মনে হয়েছে বিতর্ক তৈরি করবেন, তাঁরা করেছেন। কী বলব বলুন? আমি বিতর্কিত কিছু দেখিয়েছি কিনা সেটা দর্শকের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, রাজ্য সরকার এবং প্রশাসন---উভয়েই এই সময় ভীষণভাবে পাশে থেকেছে।