This Article is From May 30, 2019

নিজেকে প্রমাণ করতে ১৬-১৭ ঘণ্টা পড়তেন উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় সংযুক্তা

মাধ্যমিকে ৮৯ শতাংশ পাওয়ায় অপমানিত সংযুক্তা তারপর থেকে রাতের পর রাত জেগে কঠোর পরিশ্রমের পর সেদিন কাঙ্খিত ফল পেয়ে উদ্বেলিত, আনন্দে বিবশ।

নিজেকে প্রমাণ করতে ১৬-১৭ ঘণ্টা পড়তেন উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় সংযুক্তা

রেজাল্ট শোনার পর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরেছিল দিদা-মাসির। স্কুলে রেজাল্ট দেখার পর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে এভাবেই আনন্দে চোখ জলে ভেসেছিলেন মা চৈতালি বসু। আর মেয়ে? মাধ্যমিকে ৮৯ শতাংশ পাওয়ায় অপমানিত সংযুক্তা (Sanjukta Basu) তারপর থেকে রাতের পর রাত জেগে কঠোর পরিশ্রমের পর কাঙ্খিত ফল পেয়ে সেদিন উদ্বেলিত। আনন্দে বিবশ। কীভাবে নিজেকেই নিজে বলেছেন ‘ফাইট সংযুক্তা ফাইট' ? কীভাবে মায়ের সঙ্গে নিত্য অভাব-অনটন ভাগ করে দাঁতে দাঁত চেপে পৌঁছেছেন লক্ষ্যে? এভাবেই আন্তরিক কথার বুননে নিজের দু-বছরের লড়াই এনডিটিভি-কে জানালেন জানালেন উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে দ্বিতীয়, মেয়েদের মধ্যে প্রথম সংযুক্তা বসু (ranked 2nd  In West Bengal and 1st In Girls in Higher Secondary Exam)। সাক্ষাতকারে উপালি মুখোপাধ্যায়

প্রশ্ন: ভেবেছিলেন উচ্চ মাধ্যমিকে আপনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম, রাজ্যে দ্বিতীয় হবেন?

উত্তর: রেজাল্ট ভালো হবে জানতাম। কিন্তু এত ভালো হবে নিজেই বুঝিনি। তাই টেনশনের চোটে আগের রাতেই মাকে বলে রেখেছিলাম, টিভি চালাবে না। তাই প্রথমে জানতেও পারিনি। পরে বন্ধু অভিজ্ঞান ফোনে জানাল। তখন টিভি খুলে দেখলাম, সত্যি আমি এত ভালো রেজাল্ট করেছি।

প্রশ্ন: মা-দিদা-মাসির রি-অ্যাকশ কেমন ছিল?

উত্তর: সবাই আনন্দে কেঁদে ফেলেছেন।

প্রশ্ন: নার্ভাসনেস কাটার পর, এখন অনেকটাই আশ্বস্ত আপনি। সবাই ফোন করছে। ডাকছে আপনাকে। সাক্ষাতকার দিচ্ছেন। সেলেব্রিটি মনে হচ্ছে নিজেকে?

উত্তর: (হেসে ফেলে) প্রথম ধাক্কা সামলে এখন সত্যিই অনেকটা স্টেডি। চারদিক থেকে ফোনের পর ফোন আসছে। হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। ভালো লাগছে। তবে কখনোই সেলেব্রিটি মনে করছি না নিজেকে। যেমন ছিলাম তেমনি আছি।

প্রশ্ন: বরাবরই বিধাননগর গর্ভমেন্টের ছাত্রী? বরাবরই এরকম রেজাল্ট করে এসেছেন?

উত্তর: ক্লাস ওয়ান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এই স্কুলেই আমার পড়াশোনা। প্রথম দু-একবার ফার্স্ট হয়েছিলাম। তারপর থেকে প্রথম দশের মধ্যেই থাকতাম। স্কুলের স্যার-ম্যাডামরাও বলতেন, ভালো করে পড়লেই রেজাল্ট আরও ভালো হবে।

প্রশ্ন: আপনার মনে কোনও জেদ ছিল না?

উত্তর: ছিল। মাধ্যমিকে মাত্র ৮৯ শতাংশ পেয়েছিলাম। খুব অপমানিত হয়েছিলাম, ছোট হয়ে গেছিলাম নিজের কাছে। আমি মাত্র ৮৯ শতাংশ পাওয়ার যোগ্য! কাউকে কিচ্ছু বলিনি। শুধু মনে মনে জেদ পুষে রেখেছিলাম, নিজেকে প্রমাণ করে দেখাতে হবে। ইলেভেন-টুয়েলভে স্কুলের একটা পরীক্ষাতেও আর দ্বিতীয় হইনি। দিনে-রাতে মিলিয়ে ১৪-১৬ ঘণ্টা পড়তাম। তার ফলাফল এই।

প্রশ্ন: কী কম্বিনেশন ছিল আপনার?

উত্তর: ইকোজিও। ইকনমিকস-জিওগ্রাফি-ম্যাথস।

প্রশ্ন: উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার রাস্তা শুরু থেকেই বেছে নিয়েছেন?

উত্তর: একেবারেই না। ঠিক করেছিলাম, ভূগোলে অনার্স পড়ব। ফলে, ইকোনমিকস নিয়েছিলাম। পরে অঙ্কটাও নিয়ে নিলাম। অর্থনীতির পরে ওটাও আমার খুব প্রিয় বিষয়।

প্রশ্ন: সবাই বলেন অঙ্ক আর ইংরেজিতে নাকি একচেটিয়া ছেলেদের দখলদারি? অঙ্ক ভালোবেসে সেই অঙ্কটাও উল্টে দিলেন!

উত্তর: (লাজুক হাসি) আমি কিন্তু অঙ্ককে ছোটবেলায় যমের মতো ভয় পেতাম। সেই ভয় তাড়িয়েছেন আমার শিক্ষক অসীম জানা। আমি কৃতজ্ঞ ওঁর কাছে।

প্রশ্ন: এরপর তাহলে কোন বিষয় নিয়ে স্নাতক হবেন? অঙ্ক, ভূগোল না অর্থনীতি?

উত্তর: অর্থনীতি। খুব ইচ্ছে, অমর্ত্য সেনের মতো লন্ডন ইকনমিকস স্কুলে গবেষণা করার।

প্রশ্ন: অঙ্ক-অর্থনীতি নিয়ে ১৬-১৭ ঘণ্টা পড়তে পড়তে বোর হতেন না? হলে কী করতেন?

উত্তর: হতাম না। কারণ, ওগুলো আমার খুব প্রিয়। আর ক্লান্ত হলে আমি আঁকতে বসে যেতাম। আমি ডিডজাইন করি শাড়িতে, গয়নায়। স্কেচ করি। এগুলোই আমার রিফ্রেশমেন্ট।

প্রশ্ন: অঙ্কের বিকল্প আঁকা! ডিজাইনের কাজ কি মাকে সাহায্য করার জন্য?

উত্তর: পড়ার বাইরে মা কিচ্ছু করতে দেন না। বলেন, আমি চালিয়ে নিতে পারব। তুই পড়। ভালো রেজাল্ট কর। আমি আঁকতে ভালোবাসি বলে আঁকি।

প্রশ্ন: আর টিভি, ফেসবুক, ট্যুইটার?

উত্তর: টিভি আগে দেখতাম। কিন্তু মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর পর বই ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম নিজেকে প্রমাণ না করা পর্যন্ত টিভিতে হাত দেব না। আর আমি হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়া অন্য কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই। ওটা ভীষণ খারাপ নেশা। সব শেষ করে দেয়।

প্রশ্ন: কোথায় ভর্তি হবেন বলে ভাবছেন?

উত্তর: সেন্ট জেভিয়ার্স, প্রেসিডেন্সি আর যাদবপুরে পরীক্ষায়। দেখা যাক, কোথায় জায়গা পাই।

প্রশ্ন: শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আপনাকে সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পার্থবাবু আপনার সঙ্গে দেখা করেছেন?

উত্তর: না। তবে কৃষি মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু দেখা করে গেছেন। বলেছেন, সাহায্য করবেন। বাকিদের কথা বলতে পারব না। তবে এগোতে গেলে সবার সাহায্যই চাই আমার।

প্রশ্ন: কার হাতের রান্না সবচেয়ে প্রিয়? মা না দিদা?

উত্তর: দিদা। দিদার লাউ-চিংড়ি খুব টেস্টি। আর বাইরের খাবার মানেই ফুচকা।

প্রশ্ন: কাগজ খুললেই কোন খবর বেশি চোখ টানে?

উত্তর: শেয়ার বাজার (হো হো হাসি)।

প্রশ্ন: উচ্চমাধ্যমিকে এখন একসঙ্গে দু-বছরের পড়া পড়তে হয় না। বিষয়ও অনেক কম। সঙ্গে, মাল্টিপল চয়েস, অবজেকটিভ প্রশ্ন? এটা কি ভালো রেজাল্ট করতে অনেকটাই সাহায্য করছে?

উত্তর: বলতে পারেন। তবে কঠিন পরিশ্রম কিন্তু মাস্ট। কেউ হয়তো খুব ব্রেনি। তার মানে এই নয়, কম পড়লেই হয়ে তার যাবে। বই খুঁটিয়ে না পড়লে কিন্তু মাল্টিপল চয়েস বা অবজেকটিভ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না।

.