এই সংক্রান্ত আরও ১০ টি তথ্য জেনে নিন এখানে:
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশি পদক্ষেপের প্রতিবাদে মধ্যরাতে হায়দরাবাদের মওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ মিছিল করে। এই আঁচ এসে পড়ে কলকাতাতেও। মধ্যরাতে মিছিল করে ঘটনার প্রতিবাদ করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারাও। মওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানায়।
জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে, অসংখ্য মানুষ শীতকে উপেক্ষা করে মধ্যরাতেই দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরে জড়ো হন। পুলিশি সদর দফতরের বাইরের মূল রাস্তাটি অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদকারীরা। সেই সময় পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় সেই জন্যে আগাম সতর্কতা স্বরূপ সেখানে কাঁদানে গ্যাস এবং জল কামান প্রয়োগের সমস্ত প্রস্তুতি পুলিশ নিয়ে রেখেছিল বলে জানা যায়। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ আটক করা সমস্ত শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরেই দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরের বিক্ষোভকারী জনতাও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ।
এই বিক্ষোভের আঁচ প্রথম পড়ে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে ছাত্ররা মিছিল করলে তঁদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। ঘটনায় দশ জন পুলিশ কর্মী এবং প্রায় ৩০ জন পড়ুয়া আহত হয়েছেন বলে খবর। সেই সময়েই পুলিশ ছাত্রদের হস্টেল খালি করে দেওয়ার কথা বললে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই এলাকায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সন্ধেয় দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে। ওই মিছিল যন্তর মন্তরে এসে শেষ হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু সেই সময়েই ওই বিক্ষোভ হিংসার রূপ পায়। জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের জেরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এবং বাস ও দু'চাকার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ছাড়াও আহত হন বেশ কিছু পুলিশ কর্মী।
পরে সন্ধের দিকে পুলিশ প্রায় শতাধিক পড়ুয়াকে আটক করে। "কোনও আগাম অনুমতি না নিয়েই পুলিশ জোর করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। আমাদের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয় এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়", বলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ প্রক্টর ওয়াসিম আহমেদ খান।
এদিকে উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক চিন্ময় বিসওয়াল এনডিটিভিকে জানান, উন্মত্ত জনতা পাথর ছুঁড়তে শুরু করলেই পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, "আমরা কোথা থেকে এই হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছে তা খতিয়ে দেখতেই সেখানে প্রবেশ করি।"
এরপরেই জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই মিছিল বন্ধ করে দেয়। দিল্লি পুলিশের কিছু কর্তা গোপনে স্বীকার করে নিয়েছেন যে. আসলে ওই সহিংস বিক্ষোভের মূলে দায়ী ছিল ছাত্ররা নয়, ছিল কিছু স্থানীয় মানুষের প্ররোচনা। এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরাও বলে, "আমরা বারবার শান্তিপূর্ণ এবং অহিংস উপায়েই বিক্ষোভ করেছি।" তাঁরাও বলে যে বাইরে থেকে কিছু লোক এই মিছিলে উত্তেজনা তৈরি করে।
এই বিক্ষোভ হিংস্র রূপ পেলে এলাকার মেট্রো পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় । বন্ধ হয়ে যায় অন্য যানবাহন চলাচলও। একটি হিন্দি টুইটে দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া ঘোষণা করেন যে জামিয়া, ওখলা, নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি এবং মদনপুর খাদার সহ দক্ষিণ-পূর্ব জেলা অঞ্চলের সমস্ত স্কুলগুলি সোমবার বন্ধ থাকবে।
প্রথমে এক টুইট বার্তায় এই সহিংস বিক্ষোভের নিন্দা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পরে তিনি আর একটি টুইটে লেখেন" মাননীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাঁকে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকম পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টাও করছি। হিংসার পিছনে থাকা আসল দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে"।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। ওই আইনের ফলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব লাভে সুবিধা হবে। এই আইনের বিরুদ্ধে প্রথমে অসমে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হলেও পরে তা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে। রবিবার ঝাড়খণ্ডের একটি নির্বাচনী সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অসমের মানুষকে "সহিংসতা থেকে দূরে থাকার" জন্য শুভেচ্ছা জানান।